সাপ্তাহিকী
|
লোকমান বিন নূর হাশেম
|
|
ভালোবাসার টানে ছুটে চলা
28 Jul, 2013
নাহ্ আমি আর পারছি না। আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। প্রবাস নামের বন্ধিশালায় আমার আর ভালো লাগছে না। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে খুব ইচ্ছে করছে। স্বাধীন দেশে নিজ মাতৃভুমির আলোকিত সূর্য দেখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে বাংলার বাতাসের সাথে দোল খেতে। দীর্ঘ ছয়টি বছরেরও বেশি হয়ে গেল প্রিয় মাতৃভুমি দেখি না। দেখি আমার দেশের সূর্যাদয় কিংবা সূর্যা¯ত। দেখি না ঘাঁসের বুকে শিশির কনার মুক্তা ঝারানোর দৃশ্য। আজ কতদিন হল প্রিয়জনদের মুখগুলো অবলোকন করি না। আমাকে আর বেঁধেও রাখা যাবে না। আমাকে যেতেই হবে।
অবশেষে ৪ জানুয়ারী ২০১২ইং আমার জীবনের এক অনন্য দিন হয়ে ধরা দেয়। এই দিন আমি দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় পর প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ছুটে চলি। ৪ জানুয়ারী ২০১২ ইং সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনূভব করলাম আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটি অন্য দশটি দিনের মত নয়। অনেক ব্যতিক্রম। ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি প্রায় এক সাপ্তাহ যাবত। কেনাকাটা শেষ সব আসবাব দুটি কার্টুনে বেঁধেছি। রুমের মেঝোতে কার্টুন দুটি গড়াগড়ি খাচ্ছে গায়ে লেখা রিয়াদ টু ঢাকা। আমি নিজেকে গুছিয়ে বসে আছি। বিকেলের জন্য অপেক্ষা করছি কারন রাতে আমার ফ্লাইট বিকেলে বের হব। কিন্তু সময় তো যায় ই না। ঘড়ির কাটা যেন চলেই না। মনে পড়ে গেল সেই গানটি..
স্টেশনের রেল গাড়ি টা
মাইপা চলে ঘড়ির কাটা
প্লাটর্ফমে বইসা গুণি কখন বাজে বারো টা.. .. ..
আমি রুমে বসে বসে ঘড়ির কাটা দেখছি কখন বিকেল হবে। অফিসের সবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে নিলাম। সকাল পেড়িয়ে দুপুর অবশেষে বিকেল হল। অফিস কলিগ রুহুল আমিন ভাই এলেন তার গাড়িতে চলে এয়ারপোর্ট যাবো। রুহুল আমিন ভাই খুব মিশুক লোক। যে কারো সাথে মুহুর্তে মিশে যাবে এবং এমন সম্পর্ক গড়ে তুলবে যেন তার অনেক দিনের পুরাতন বন্ধু। তিনি আমাদের কোম্পানীর সুপারভাইজার ছিলেন চাকুরির প্রমোশন হয়ে এখন তিনি কন্ট্রাক্ট ম্যানেজার। যাই হোক রুহুল আমিন ভাই গাড়ি নিয়ে আসলেন। সহকর্মী বন্ধুরা আমাকে বিদায় জানাতে অপেক্ষা করছিল। বন্ধুদের সাথে বুক মিলিয়ে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। রুহুল আমিন ভাই গাড়ি স্ট্যাট দিলেন। গাড়ি ছুটে চলল রিয়াদ কিং আব্দুল আজিজ বিমান বন্দর অভিমুখে। গড়ি তো চলছে না বরং মনে হচ্ছে আমি বাতাসের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছি। মনটা আমার আনন্দে নাচছে। নাচতে তো হবেই কতদিন পর দেশে যাচ্ছি। গাড়ি চলছে তো চলছেই কখনো সোজা কখনো এঁকে বেঁকে, কখনো ব্রিজের উপর দিয়ে আবার কখনো ব্রিজের নিচ দিয়ে। ব্রিজের নিচ দিয়ে গাড়ি চলার কথা শুনে অভাক হলেন ? ভাবছেন পানিতে ডুবে গেল না গাড়ি ?? অভাক হওয়ার কিছুই নেই এদেশে শুকনোর উপর অসংখ্য ব্রিজ। যানযট এড়ানোর জন্য। আমাদের মহাখালী ও খিলগাঁয়ের দিকে তাকান এবার ক্লিয়ার ? এক পর্যায়ে গাড়ি বিমান বন্দরে এসে পৌছল। আমাকে নামিয়ে দিয়ে রুহুল আমিন ভাই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।
একটি ট্রলি নিয়ে আমি কার্টুন দুটি তাতে রাখলাম এবং ব্রিফকেস রাখলাম তার উপর। এবার সিরিয়ালে দাড়ালাম। বিশাল সিরিয়াল। গেটের বাহিরেই শতাধিক লোক হবে। এত লোকের ভিড়ে, কখন গেট অতিক্রম করে ভিতরে ঢুকবো ভাবতে লাগলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম দুদিন আগের যাত্রী এখনো এখানে তাই এত ভিড় । বাংলাদেশ বিমান বলে কথা শিডিউল বিপর্যয় খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এত লোকের সিরিয়াল অতিক্রম করে ইমিগ্রেশনে পৌছা সম্ভব হবে না তা ভালো করেই আনদাজ করে ফেললাম। তাই বাধ্য হয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সিরিয়ালের আওতা মুক্ত হয়ে গেলাম। সরাসরি ইমিগ্রেশনের সামনে চলে গেলাম। বাকিরা লাইনে দাড়িয়ে রইল। কয়েকটি লাইনে দাড়িয়ে ইমেগ্রেশনের কাজ সমাপ্ত করলাম। এক পর্যায়ে বোডিং কার্ড হাতে পেলাম। বোডিং কার্ড পাওয়া মানে ফ্লাইট নিশ্চিত মিস হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দেশে ভাইয়া আপুরা সবাই আমার একটি ফোনের অপেক্ষায় আছে। বড় ভাইয়াকে ফোন করে বোডিং কার্ড পাওয়ার খবরটি জানিয়ে দিলাম। ভাইয়া বাকি সবাইকে জানিয়ে দিবে।
বোর্ডি কার্ড নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের সব যাত্রীরা বিমানের জন্য অপেক্ষা করছি । অপেক্ষা পালা যেন শেষ হতে চায় না। সবার চেহারা হাঁসির ঝিলিক। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই খুব আনন্দিত। এটা প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যাওয়ার আনন্দ । অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিমান এলো। সবাই বিমানে উঠে নিজ নিজ আসন গ্রহন করলাম। কিছুক্ষণ পর বিমানে ঘোষনা এলো “ আমরা রিয়াদ কিং আব্দুল আজিজ আন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে ঢাকা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান আকাশে উড্ডিন করবে সবাই বেল্ট বেধেঁ নিন” ঘোষনাটি খুব ভালো লাগছিল। এমন একটি ঘোষনা শুনার জন্য দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। ঘোষনাটি শোনার পর সবার চেহারায় আনন্দের আভা লক্ষ করা গেল। একটু পরে ঠিকই বিমান আকাশে উড্ডিন হল। বিমান ছুটে চলল প্রিয় বাংলাদেশ অভিমুখে। আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করলো প্রত্যেক প্রবাসীর মনে। সবাই ছুটি চলছি প্রিয় দেশে ভালবাসার টানে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন