টক শো রিভিউ
'ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কখনো বদলায় না'
11 May 2015, Monday
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেছেন, 'আমাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বদলায় না। তাদের দেশে সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পলিসি ঠিক থাকে। আর ভারতে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাদের দেশের বিরোধী রাজনীতিবিদরা বলেছিলেন, ভারতের সেই সরকার বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে; ওই সরকার চলে যাওয়ার পর বিজেপি সরকার এলে হয়তো বিএনপির রাজনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হবে। কিন্তু দেখা গেল, ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সেই আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতোই আছে। আসলে এটা ভারতের কোনো সরকারের বিষয় নয়। ভারতে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের যে সম্পর্ক রাখা দরকার, তারা সে সম্পর্কই রাখবে।'
রবিবার রাতে বেসরকারি টিলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যলোচনাভিত্তিক টক শো আকিজ সিমেন্ট মুক্তবাক অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে আকমল হোসেন এসব কথা বলেন। সাংবাদিক রাহুল রাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান ও সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রধান সম্পাদক সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, এ সরকারের অনেকে অনেক সমালোচনা করেন; কিন্তু এ সরকারই ভারতবিষয়ক দুটি বড় বিষয় মীমাংসা করে ফেলেছে। সমুদ্র বিজয় থেকে শুরু করে এখন ল্যান্ড বাউন্ডারি পর্যন্ত জাতীয়ভিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পেরেছে। অথচ বলা হচ্ছিল, সরকার ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ নাকি ভারত বানিয়ে ফেলবে। এখন এই সরকারই তো দেশের জন্য কাজ করল। দীর্ঘদিনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখন অনায়াসে সমাধান করতে পেরেছে। সামনে বাকি অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করবে। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'বিএনপি আসলে দেশ ও বিদেশ কোনো স্থানেই সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে তারা এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের বিদেশে কোনো বন্ধু নেই। আর আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন হলো সমুদ্র বিজয় ও স্থল সীমান্ত চুক্তি। এ সরকার না থাকলে হয়তো অন্য সরকার এখন ক্ষমতায় থাকত। তাতে সেই সরকার এই সরকারের মতো জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারত কি না সন্দেহ আছে।' তিনি আরো বলেন, 'যেটা যার অর্জন, তাকে সে জন্য ধন্যবাদটুকু অন্তত দিতে হবে। এ সরকারের সঙ্গে ভারতের সরকারের সম্পর্ক ভালো। আর যে কারণেই হোক, সরকার যেটা অর্জন বলছে, সেটা আমাদের কাছেও অর্জন হিসেবেই থাকছে। কারণ আমাদের কাছেও ছিটমহলের বিষয়টি মীমাংসা ছিল অত্যন্ত প্রত্যাশার।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, ছিটমহল সমস্যা সমাধানে নাকি আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। ভারতের দুটি প্রদেশ এই ল্যান্ড বাউন্ডারির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এই ল্যান্ড বাউন্ডারি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমাদের দেশেও সরকার ছিটমহলবাসীর জন্য অনেক কিছু করতে চায়। অথচ বিএনপি সরকারের আমলে এই ছিটমহলবাসীর সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ পর্যায়ে ড. মজিবুর রহমান বলেন, 'বর্তমান সরকারের আমলে সমুদ্রসীমা ও ল্যান্ড বাউন্ডারি মীমাংসিত হওয়ার পথে। এ নিয়ে সরকার নিশ্চয়ই তার প্রশংসা নিতে চাইবে। কিন্তু এতে আগেরকার সরকারগুলোর ব্যর্থতা আছে, এমনটা বলা যাবে না। কারণ কোনো সরকার তার দেশের বৃহত্তর স্বার্থ উপেক্ষা করতে পারে না। এ সরকার হয়তো অনেক অর্জন করেছে, তাই বলে সব অর্জন নিজেদের একক, তা বলা যাবে না। আগেরকার সরকারগুলো ল্যান্ড বাউন্ডারিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হয়তো চেষ্টা করেছিল। আর বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে। এ ছাড়া সরকারের অর্জন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের একক অর্জন হতে পারে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন