'নির্বাচনের নামে দেশে প্রতি পাঁচ বছর পরপর যে অস্থিরতা ও সহিংসতা হয়, সে জন্য দেশের মানুষ এখন আর কোনো নির্বাচন বা নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম দেখতে চায় না। মানুষ চায় শান্তি।' কথাগুলো বলেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, '২০১৩ সালের শেষদিকে দেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের মানুষ দেখেছে। কারণ সে সময় জামায়াত-বিএনপি দেশে যে ধরনের নাশকতা করেছিল, রেললাইনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলেছিল, চলন্ত গাড়িতে মানুষের ওপর বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এভাবে সারা দেশে বিরোধী রাজনীতিবিদরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তাই এখন আর দেশের মানুষ নির্বাচন চায় না। উন্নয়ন চায়।'
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিটল টাটা আওয়ার ডেমোক্রেসি অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, দেশে এখন একটানা এক সপ্তাহ ধরে হরতাল চলছে। কিন্তু মানুষের এ নিয়ে ভাবনার কথা কেউ বুঝছে না। মানুষ অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ কোনদিকে যাবে? সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছেন?
জবাবে আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, 'আমরা কী বলব? দেখুন, দেশের মানুষ সবাই কোনো না কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেউ প্রকাশ্যে রাজনীতি করে আর কেউ করে না। তাই বলে সরকার যে বলছে মানুষ নির্বাচন নয় উন্নয়ন চায়, সেটাও একেবারে ঠিক নয়। কারণ গত ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে, তা নিয়ে দেশ-বিদেশে এখনো অনেক সমালোচনা হচ্ছে। তখনকার সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই বলেছিলেন, এটা হচ্ছে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। আর এখন ক্ষমতায় এসে বলছেন, তাঁরা আগামী পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন করবেন না বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনায়ও বসবেন না। এদিকে বিরোধী দল আবারও গণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। এ জন্য বলছি, দেশের মানুষ কী চায় তা শুধু একটি দলের বক্তব্য থেকে নিলেই চলবে না। দেশের সব মানুষের ভাবনা সরকারকে বুঝতে হবে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, 'দেশের মানুষ আর যাই হোক ২০১৩ সালের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা চায় না।' তিনি বলেন, 'ওই সময় দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল, সেটার পুনরাবৃত্তি হলে কারো জন্যই মঙ্গল হবে না। কারণ দেশের মানুষ চায় শান্তি। যদি নির্বাচনের নামে আবারও দেশে অস্থিরতা তৈরি হয় তবে তা নিয়ে মানুষের মতামত পক্ষে যাবে না। মানুষ তাদের অবস্থান থেকে চাইছে নির্বাচন বা রাজনীতি হবে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে। যদি কেউ রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ফায়দা নিতে চায় তবে তা কেউ মেনে নেবে না।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, 'আমরা কারো কথাই সঠিক ধরব না, যতক্ষণ না দেশের সাধারণ মানুষের কথা শুনব।' তিনি বলেন, 'প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় দেশের কী চিত্র। মানুষ এখন আর শান্তিতে নেই। সরকারি দলের লোকেরা হয়তো একটু ভালো থাকতে পারে। বিরোধী রাজনীতির লোকেরা দেখেন গিয়ে তাদের বাড়িঘরেও থাকতে পারছে না। তারা কী আন্দোলন করবে! বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে সরকার মানববন্ধনও পর্যন্ত করতে দেয় না। এসবের অবসান হওয়া দরকার। দেশে সঠিক গণতন্ত্র থাকলে এ অবস্থা চলতে পারত না।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন