টক শো রিভিউ
'ভারতে বিজেপির উত্থান ঠেকানো যায়নি'
23 October 2014, Thursday
'কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই মামলা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কোথাও কেউ কিছু বললেই, তাকে আইসিটি আইনে মামলার খৰ সামলাতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের বিতর্কিত ব্যক্তি ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নামে আইসিটি আইনে মামলা হয়নি। কারণ তিনি সরকারের লোক; সরকারি দলের লোক। আর সরকারি দলের লোকদের নামে কোনো মামলা নেবে না থানা প্রশাসন। আজকাল থানাগুলোও সরকারি ও বেসরকারি দলের লোক চিনে চিনে মামলা-মোকদ্দমা নিচ্ছে। এ ধারা দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।' কথাগুলো বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। তিনি বলেন, 'সরকার বিরোধী রাজনীতিবিদদের দমন-পীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। কিন্তু আমরা পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালেই দেখছি, সেখানেও কংগ্রেস সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করেছে। তার পরও ভারতের মতো দেশে বিরোধী দল বিজেপির উত্থান ঠেকানো যায়নি। বাংলাদেশেও হয়তো পারবে না।' তিনি বলেন, 'মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তার চেয়েও বেশি ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতা। কে কখন ক্ষমতা হারাবে বা কে কখন ক্ষমতা পাবে- এটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।'
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিটল টাটা আওয়ার ডেমোক্রেসি অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বিশিষ্ট বিতার্কিক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করাটা কতটা যুক্তিসংগত বা এ ধরনের কথার জন্য মামলা করাটাও বা কি ধরনের মেসেজ বহন করে। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, 'সরকার মামলা তো করতেই পারে। সেটা যেকোনো অভিযোগেই হোক না কেন। এখন দেখতে হবে, আসলে ওই মামলাটি সমাজে কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে কি না। আমার তো মনে হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই হয়েছে বলে অনেকে মনে করতে পারেন। তবে আমার কথা হলো, যে কারণেই হোক, মামলা হতেই পারে। তার বিচার যেন সঠিকভাবে করা হয়।' তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে অনেকে জেলে গেছেন। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী কেন, সমাজের কেউ যাতে কারো বিরুদ্ধে অহেতুক খারাপ ভাষা প্রয়োগ করতে না পারে, তার জন্যও একটি আইন থাকা দরকার।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে একজন দর্শক জানতে চান, সম্প্রতি গাজীপুরের কালীগঞ্জে নদী থেকে বালু তোলা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিএনপির লোকজনের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। এমনকি মাত্র ছয় দিনের বাচ্চা প্রসব করা মহিলাকেও ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তার ঘরটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটা আসলে কোন ধরনের সমাজে আমরা বাস করছি?
জবাবে সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান বলেন, 'এটাই হলো আমাদের সমাজের অস্থিরতা। আমরা এ জন্য আসলে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এ জন্য নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করিনি।' তিনি বলেন, 'আমাদের সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে হলে আরো সহনীয় হতে হবে এবং পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। কারণ একে অপরের মতামত সহ্য করতে না পারলে সমাজে অস্থিরতা আরো বাড়বে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে মাহফুজউল্লাহ বলেন, 'এ সমাজের বিষয়ে কথা বলে লাভ কী? সরকারি দলের লোকেরা তো কারো কথাই সহ্য করতে পারে না। তারা যদি চায় তবে সমাজের অনেক অস্থিরতা কমে আসতে পারে। কারণ ক্ষমতা ও সরকার তাদের। সারা দেশে ভিন্নমতের লোকেরা তো গায়ে পড়ে সরকারি দলের লোকদের সঙ্গে ঝগড়া করতে যায় না। স্বার্থের হানি হলেই সরকারি দলের লোকেরা বিরোধী দলের লোকজনের ওপর চটে যায়। এটা কমে আসবে, সরকার যদি এ বিষয়ে তার দলের লোকদের কোনো নির্দেশনা দিতে পারে বা যে অন্যায় করবে, তাকেই আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে- এমন আইন বাস্তবায়ন করতে পারলে।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন