মওদুদ আহমদের (মওদুদ তার নামের বাংলা বানান কীভাবে লেখেন জানি না। অযসবফ-এর বাংলা আহমেদই হওয়ার কথা; কিন্তু সবাই আহমদ লেখেন। স্কুলে থাকতে মওদুদের শ্বশুর, পল্লী কবির নাম জসীমউদদীন না লিখে জসীম উদ্দিন লিখেছিলাম। খেসারত হিসেবে খেয়েছিলাম নরেন স্যারের কানমলা। ঢাবির জসীমউদ্দীন হলের গোড়াপত্তন হওয়ার সময় নামফলকে আমার মতো ভুল করে কবির নামের উদ্দীন অংশটি হ্রস্ব -িকার দিয়ে লেখা হয়েছিল। আট বছর পর নরেন স্যারের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রভোস্টকে দিয়ে ভুল শুধরিয়েছিলাম) বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ-এর অফিস-কপিটির কিছু অংশে চোখ বুলাতেই বইটি আমার প্রাওরিটিতে ঢুকে গেল। অবশ্য এরা অফ শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগের বইগুলো তার যে কোনো লেখার প্রতি আকর্ষণ তৈরির জন্য যথেষ্ট।
সে রাতেই রংপুর যাওয়ার কথা আমার। ট্রাভেলার্স কিট হিসেবে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম ব্যক্তিগত কপি। নাইট কোচ। সুপারভাইজার একবার আলো জ্বালায়, আরেকবার নেভায়। তাতে একটা সুবিধাও হয়। অন্ধকার যখন, তখন যতটুকু পড়া হল, ততটুকু নিয়ে ভাবতে পারি। তবে একবার আলো নেভানোর পর এমনই ছন্দপতন ঘটল যে, সুপারভাইজারকে ডেকে বললাম- দেবদাস মারা যাচ্ছে আর আপনি আলো নিভিয়ে দিলেন?
বাঙালির ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, আমরা যখন বলি- বিএনপি বা আওয়ামী লীগ সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে, তখন ঘোরাওকে আমাদের gherauই লিখতে হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ঘেরাও-এর যে বিশেষ অর্থবাচকতা রয়েছে, ইংরেজরা সেভাবে কোনো জায়গা ঘেরাও করতে যায় না। ফলে তাদের ভাষায় এই ভাব প্রকাশের কোনো শব্দ নেই।
মৌলানা আবুল কালাম আজাদের সুবিখ্যাত গ্রন্থ ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম মূলত তার ডিকটেশনেরই সুবিন্যস্ত রূপ। ডিকটেশন গ্রহণকারী মেধাবী হুমায়ুন কবীর বইটির মুখবন্ধে দায় স্বীকার করেছেন এভাবে- ইংরেজি রেখে-ঢেকে ভাব প্রকাশের ভাষা। মৌলানার মতো একজন পণ্ডিত যখন উর্দুর মতো একটি ঐশ্বর্যশালী ভাষায় ডিকটেশন দেন, তখন তার ইংরেজি অনুবাদকের দুরবস্থাটা সহজেই অনুমেয়।
আবার উপমহাদেশীয় ইংরেজির রয়েছে কিছু বিশেষ সীমাবদ্ধতা। মওদুদ সেটা কাটিয়ে উঠেছেন। ভাষা ও জ্ঞান প্রায় সমার্থক; তাই ভাষা জটিল হলে জ্ঞানটা পরিষ্কারভাবে মাথায় ঢোকে না। মওদুদের ভাষা তেমন নয়। তা সহজপ্রবেশ্য ও প্রাঞ্জল। ফরাসি ভাষার ক্ষেত্রে বলা হয়, একটি বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করার জন্য একটিই শব্দ থাকে, বাকিগুলো বড়জোর কাছাকাছি যেতে পারে। মওদুদও যথাস্থানে যথাশব্দ বসিয়েছেন। সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্টের বইটি পড়তে পড়তে প্রায় চার দশক আগে পড়া উপমহাদেশীয় আরেক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের আত্মজীবনীমূলক ফ্রেন্ডস, নট মাস্টারস বইটির কথা মনে পড়ে। এটি পড়লে মনেই হবে না যে, তিনি একজন স্বৈরশাসক; মনোরম ভাষায় তিনি সেখানে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন এক বড় মাপের মানবিক সত্তা হিসেবে। আয়ুব খান ও মওদুদের ভাষার একটা মিল দেখাই এ সুযোগে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রংপুরে অনুষ্ঠিত তার জনসভার বর্ণনা দিতে গিয়ে আয়ুব প্রথম লাইনে লিখেছেন- It was a vast ocean of humanity। আর মওদুদ ২০০৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে লিখছেন- It was a silent revolution (এটা ছিল এক নীরব বিপ্লব)। যা হোক, এই বইয়ের খবর ঠিকঠাক মতো ছড়ালে উচ্চমূল্য সত্ত্বেও তা দ্রুতই নিকেশ হয়ে যাওয়ার কথা।
মওদুদের বইটি পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে চালু থাকা দুটি হিউমারের কথা মনে আসে। একটি বেশি চালু ছিল জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায়। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়) তখন বলা হতো- আইসিএস পরীক্ষায় জ্যোতি বসু ফেল করেছিলেন বলেই পশ্চিমবঙ্গবাসী একজন ভালো মুখ্যসচিব হারিয়ে একজন ভালো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে। ঘটনাচক্রে মওদুদ যদি রাজনীতিতে না আসতেন, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবেই একজন খারাপ রাজনীতিকের পরিবর্তে একজন ভালো লেখক পেতাম। দ্বিতীয় হিউমারটি চালু রয়েছে কলকাতার সংবাদপত্র জগতে। একটি প্রশ্নের মধ্যে এই হিউমার লুকিয়ে আছে। প্রশ্নটি- লিলুয়ার ওপারে কে কত ভালো? লিলুয়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শেষ সীমানার একটি কাল্পনিক জায়গা। হিউমারটির মাজেজা হল- পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকরা তো এই রাজ্য নিয়ে ভালোই খবর তৈরি করেন, খবর বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে যখন সর্বভারতীয় নিউজ ও নিউজ অ্যানালিসিসের প্রশ্ন আসে, তখন কে কতটা পারদর্শী? বলতে
চাচ্ছি, আমাদের রাজনীতিকরা তো রাজনীতিতে ভালো-খারাপ একটা কিছু করে যাচ্ছেন; কিন্তু রাজনীতির বাইরের যে বিশাল জগৎ, সেখানে তাদের কে কতটা ভালো? মওদুদের বইটি পড়লে মনে হবে, তিনি সেই জগতের ভালোদের তালিকার বাইরের কেউ নন।
আসলে রাজনীতিক ও লেখক- মওদুদ এই দুই সত্তা আলাদা করে ফেলেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো। মানিক গল্প-উপন্যাসে তার কমিউনিজমের আদর্শ সরাসরি ইনজেক্ট করেননি; সমাজের রূঢ় বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। সেই বাস্তবতার আলোকে পাঠকের মননে যদি সূক্ষ্মভাবে কমিউনিজমের আদর্শ গেঁথে যায়, তাহলে সেটা সেই পাঠক ও মানিক- উভয়েরই বাড়তি পাওনা। একজন লেখক কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা আচ্ছন্ন থাকতে পারেন কি-না, এ বিতর্ক অনেক পুরনো। রুশ লেখক চেখভ, চৈনিক লু শ্যূনসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত লেখককে এ বিতর্কের উপজীব্য করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অনেকেই এই উপসংহার টেনেছেন যে- না, লেখক মতাদর্শের প্রাচীরে আবদ্ধ থাকতে পারেন না, তিনি সমাজ ও মনস্তত্বের বাস্তবকেই অনুসরণ করবেন। তবে তিনি এমন অবাস্তবও লিখতে পারেন, যা ঘটেনি বটে, তবে ঘটতে পারত। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ঘটে যা তা সব সত্য নহে, সেই সত্য যা রচিবে তুমি।
যা হোক, মওদুদ এ দেশের একটি বিশেষ সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা তুলে আনার চেষ্টা করেছেন এবং এটা করতে গিয়ে তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেও পরোয়া করেননি। শেখ হাসিনাকেও। কমিউনিস্ট নেতা নাম্বুদ্রিপাদসহ অনেকেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লিখেছেন। তবে তিন ভল্যুমে লেখা রমেশ চন্দ্র মজুমদারের History of the freedom movement of India সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এক সমালোচক তো বলেছেনই- The history could not be written otherwise better (ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অন্য কোনোভাবে এর চেয়ে ভালো লেখা সম্ভব নয়)। ফখরুদ্দিন-মইনের জরুরি অবস্থা ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের প্রথম ত্রিশ দিন বুঝতে হলে মওদুদের বইটির চেয়ে ভালো কোনো গ্রন্থ পেতে আমাদের হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য বইটিতে অসঙ্গতি ও স্ববিরোধিতাও আছে কিছু। তবে অন্যরা সেগুলো কীভাবে নেবেন জানি না, শার্প নাক ও নীলাভ চোখ দেখতে দেখতে কপালের দাগগুলো ওভারলুক করেছি আমি। এই যাহ্, বইটির content-এ আসবো কখন? কী করব, ছোট এ তরী অথচ কত ধান! অন্তত কয়েক মুঠ ধান না তুললে কেমন দেখায়! মওদুদের রাজনীতিক সত্তাকে তাই কিছু প্রশ্ন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মওদুদ লিখেছেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে পজিটিভ ভোটের সঙ্গে নেগেটিভ (by-default) ভোটও পড়েছে প্রচুর। হাসিনার পক্ষে নেতিবাচক সমর্থনের পেছনে বিএনপি জোটের ছয়টি ব্যর্থতা চিহ্নিত করেছেন তিনি। এগুলোর একটি হল, তার ভাষায়- একজন গ্রহণযোগ্য প্রধান বিচারপতির অধীনে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ইস্যুটির মীমাংসা করতে ব্যর্থ হওয়া। বইটির মুখবন্ধেও তিনি বলেছেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৬- এই ১৫ বছর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক উপায়ে একটির পর একটি সরকার গঠিত হয়েছে; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতন্ত্রের শেকড় মজবুত হওয়ার আগেই চিফ অফ আর্মি স্টাফের নেতৃত্বে জেনারেলদের একটি অংশ রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য করে এবং এভাবেই দেশ আবার গণতন্ত্র থেকে কর্তৃত্ববাদী শাসনে ফিরে যায়। কথা সত্য; কিন্তু জনাব, সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্ত করল কে? বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে প্রিয়ভাজন কেএম হাসানকে কায়দা করে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানোর চেষ্টা নেয়ার কী এমন প্রয়োজন ছিল? পাবলিক পারসেপশন তো এই যে, আপনিই এই বুদ্ধি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে। বুদ্ধিটা যদি আপনার না-ও হয়, বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোসংক্রান্ত সংবিধানের সংশোধনীটির দায় তখনকার আইনমন্ত্রী হিসেবে আপনি নেবেন না? মইনসহ কিছু জেনারেল গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছেন বুঝলাম। কিন্তু তাদের দিকে তর্জনি উঁচালে বুড়ো আঙুলটা কি নিজের দিকেও তাক করা থাকে না?
হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতিকেও বিএনপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন মওদুদ। বুঝিলেন ক্যামোনে মশাই? এই বুঝ আগের, না এখনকার? এখনকার হয়ে থাকলে কোনো কথা নেই, আগের হয়ে থাকলে একখান কথা আছে। শুনেছি বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই তারেক রহমানের সামনে পড়ে গেলে হাত কচলাতেন। না জেনে কিছু বলব না, তবে আপনি কি তার সামনে ঋজু হয়ে দাঁড়াতে পেরেছিলেন? বলেছিলেন কি তাকে সেই প্যারালাল পাওয়ার সেন্টারের ঝাঁপি বন্ধ করতে? অথবা তার মাকে? নাকি ক্রাউন-প্র্রিন্সের সামনে মাথানত করে থাকাই নিয়ম? তবে যে এতদিন শুনে এলাম বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র! আপনার ভাষা সুন্দর, সেই ভাষাতেও তো কিছু একটা বলতে পারতেন। তাকে কি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা যেত না, কোন্ ক্যাপাসিটিতে তুমি করছ এসব? মানবাত্মার এই লাঞ্ছনা মেনে নিলেন আপনি? এই রাজনীতি না করলে কী হয়? একটা মন্ত্রিত্ব কখনই ইন্টিগ্রিটির চেয়ে মূল্যবান নয়।
জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতকেও আপনি বিএনপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। এরশাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার পরও খালেদা জিয়া আপনাকে দলে টেনেছেন, মন্ত্রীও বানিয়েছেন। নিজেকে এতটাই অনিবার্য করে তুলতে পেরেছেন আপনি। সুতরাং জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আপনার জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। কিন্তু আপনি সেই ঝুঁকি নেননি। বিশ্বের দুটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের (অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড) ফেলো আপনি। আপনি কি মনে করেন না, আধুনিকতা ও জামায়াত পরস্পর সাংঘর্ষিক? একটা অংক আপনাকে মেলাতেই হবে। দেশকে কন্ট্রিবিউট করতে হলে মন্ত্রিত্ব বড় সহায়ক বটে। কিন্তু একটি মৌলবাদী দল দেশের যে ক্ষতি করতে পারে- তার পরিমাণ সেই কন্ট্রিবিউশনের চেয়ে অংকের হিসাবে বেশি, না কম?
পুনশ্চ : একে খন্দকারের বই নিয়ে কলামটি পড়ে সাংবাদিক হাসান মামুন আমাকে ভাবতে বলেছেন বইটি পড়ে আরেকটি কলাম লিখতে পারি কি-না। তার যুক্তি, তাতে আমার ভাবান্তর হলেও হতে পারে। তার এই যুক্তি গ্রাহ্য করার মতো। আমি রাজি হয়েও এখনও পর্যন্ত বইটি পড়তে পারিনি। কখনও কখনও আমার এক বিশেষ মনস্তত্ত্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং সে কারণে নিজেকে বঞ্চিতও হতে হয়। সেই একই কারণে বইটি পড়া হচ্ছে না। মনস্তত্ত্বটি- সবটুকু যখন নয়, কোনোটুকুও নয়। বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছিলেন- এমন একটি ডাহা মিথ্যা কথা আছে যে বইয়ে, সেটি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ডাহা মিথ্যা বলছি, কারণ বঙ্গবন্ধু যদি তা বলতেন, তাহলে সেদিনের জনসভায় উপস্থিত কারও না কারও অন্তত মন খারাপ হতো। হ্যাঁ, আমি বেদনা দেখেছি, তবে তা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রসব বেদনার আনন্দাশ্র“। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর যারা জাসদ তৈরি করেছিলেন, তাদের কেউ কেউ সেদিন স্টেজে ছিলেন। মধ্য ৭২-এ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর যখন তারা বঙ্গবন্ধুর ত্র“টি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করতে মরিয়া, তখন তাদের একজন আসম রবের বক্তৃতা নিশ্চয়ই এমন হতো : ভাইয়েরা আমার, শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি, স্বাধীনতা চেয়েছি আমরা। আমি দোসরা মার্চ ঢাকা ইউনিভার্সিটির বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি, একদিন পর আমার সহকর্মী শাজাহান সিরাজ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন আর শেখ মুজিব ৭ মার্চ জয় পাকিস্তান বলে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে।
বিভাগপূর্ব ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে লেখা
বিখ্যাত গ্রন্থ ফ্যাক্টস আর ফ্যাক্টস-এর লেখক পাকিস্তানি ওয়ালি খান বইটির মুখবন্ধে লিখছেন- Comments are free but facts are facts- মন্তব্য বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু
ঘটনা ঘটনাই। কোনো ব্যাপারে কেউ ভুল
ব্যাখ্যা বা মন্তব্য করলে তার প্রতি করুণা হয় আর কেউ ভুল তথ্য দিলে ওঠে ক্রোধ। সব সেকেন্ডহ্যান্ড ইনফরমেশনই ভুল নয়। একে খন্দকারেরটা ভুল হয়ে গেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা তো রাগবোই।
তবে তিনি একজন ভদ্রলোক। এদেশে আচরণে মার্জিত থাকলেই তিনি ভদ্রলোক, আর কিছুর দরকার হয় না। অর্থাৎ মিথ্যা বলার পরও খন্দকার সাহেবের ভদ্রলোকত্বের কোনো ক্ষতি হয়নি।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন