পৃথিবীর সব দেশেই রাজনীতিবিদদের আলাদা একটা মর্যাদা আছে। আমাদের দেশেও তাই ছিল। এখন তা নেই বললেই চলে। রাজনীতিবিদদের মর্যাদা কেমন, তা সহজ করে ব্যাখ্যা করার জন্য আমার পরিচিত এক লোকের স্বচক্ষে দেখা একটা বিষয় শুরুতেই উল্লেখ করতে চাই। ভদ্রলোক ভারতের আজমির গিয়েছিলেন খাজা মাইনুদ্দীন চিশতির মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। কলকাতা থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। তিনি যে কম্পার্টমেন্টে উঠেছিলেন, তাতে ছিলেন অনেক ভারতীয় সিভিল আমলা। তাঁরা দিল্লি যাচ্ছিলেন কোনো এক কনফারেন্সে যোগ দিতে। পথে এক স্টেশনে এক ভদ্রলোক উঠলেন। তিনি ওই কম্পার্টমেন্ট দিয়ে তাঁর নিজের কম্পার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন রেলের একজন কর্মচারী। তাঁকে দেখে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের যে কয়জন আমলা কম্পার্টমেন্টটিতে ছিলেন, সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং প্রণাম জানালেন। তিনিও প্রত্যুত্তর দিলেন। যতক্ষণ না তিনি পার হলেন, ততক্ষণ সবাই দাঁড়িয়েই থাকলেন। ভদ্রলোক একজনের কাছে অতি সাধারণ ধুতি-পাঞ্জাবি পরা লোকটির পরিচয়- যাকে তাঁরা এভাবে সম্মান দেখালেন জানতে চাইলে জানালেন, তিনি একজন প্রাক্তন এমএলএ, একজন নেতা- রাজনীতিবিদ। ভদ্রলোক জানতে পারলেন দুইবার তিনি নির্বাচন করে আর করেননি। নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার জন্য আসন ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এখন নিজে নির্বাচন করেন না, নির্বাচন করান। দেশের কাজ করতে গিয়ে ঘরসংসারও করেননি। তাঁর যাপিত জীবন অতি সাধারণ। তিনি শুধু নিজ দলের কাছেই নন, রাজ্যের সব মানুষের কাছে সম্মানিত। তাঁর ওপর জনগণের আস্থা অপরিসীম। সে দেশে এমন রাজনীতিবিদ আছেন অনেক। আর আমাদের দেশে? প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মুজাফফর আহমদের একটি উক্তিই আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। অতি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'শৈশবে গ্রামের বাড়িতে যাঁরা সানকিতে ভাত খেতেন এবং খালের পাড়ে গিয়ে প্রাতঃকর্ম সারতেন, তাঁরাই এখন গুলশান-বনানীর আলিশান বাড়িতে থেকে নিজেদের নব্য জমিদার ভাবেন।'
গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা-অনাস্থার সে চিত্র ফুটে উঠেছে, ওপরের দুটি ধারণা এ ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এটি কোনো আনাড়ি লোকের শুধুই একটি 'গবেষণা বাণিজ্য' বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। যদি তা-ই হতো, দেশের এখন পর্যন্ত নির্মোহ ও বিশ্বাসযোগ্য পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তিরা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতেন না। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন দেশের আরেক স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান। আলোচক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ। পিপিআরসির এই প্রতিবেদন মানুষের এতদিনকার বদ্ধমূল ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। ধারণা ছিল, আমাদের দেশে পুলিশের ওপরই মানুষের আস্থা কম। এত বদনাম পুলিশের যে অন্য কিছু ভাবাই যেত না। এখন মনে হচ্ছে পিপিআরসিকে পুলিশের একটা দামি পুরস্কার দেওয়া উচিত। কেননা তারা পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরে তুলে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের ওপর আস্থা নেই ৭১.০২ শতাংশ মানুষের; পক্ষান্তরে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে ৭৫.০৬ শতাংশ মানুষের। কী লজ্জা! আমরা লজ্জা পাচ্ছি; রাজনীতিবিদরা কি পাচ্ছেন? প্রতিবেদনের আরেকটি ভয়ংকর চিত্র বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের প্রতি মানুষের ক্রমাবনতিশীল অনাস্থা। বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা কমেছে ৫৩.৪ শতাংশের। আর আইনের শাসনের প্রতি আস্থা কমেছে ৫০.৬ শতাংশ মানুষের। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা এখনো ভালো। এ ক্ষেত্রে আস্থা কমেছে ২৬.৮ শতাংশ মানুষের।
একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের মূল কারিগর রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক শক্তি। আমাদের বাংলাদেশেরও সব মহৎ অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল ও শক্তির। বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার আন্দোলন ও যুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পরও একনায়কত্ববাদী ফ্যাসিবাদী একদলীয় বাকশালী শাসন ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা অবশ্যই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও রুটি-রুজির লড়াইয়ে কত প্রাণ বলিদান হয়েছে এ দেশে, তা ইতিহাসের অন্তর্গত বিষয়। মানুষ রাজনীতিবিদদের শ্রদ্ধা করত, ভালোবাসত। জুলুম-নির্যাতন ভোগকারী ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাদের ডাকে মানুষ নিজেদের জীবন পর্যন্ত তুচ্ছজ্ঞান করেছে, অকাতরে রাজপথ রাঙিয়েছে বুকের রক্তে। এখন রাজনীতিবিদদের ডাকে জনগণ তো দূরের কথা, নিজ দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও মাঠে নামে না। অতি সাম্প্রতিক সে নজির আমাদের সামনেই আছে।
কেন আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের এই বিবর্ণ চেহারা? এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা যে হয়নি তা নয়, কিন্তু কখনোই তা আমলে নেওয়া হয়নি। উল্টো যাঁরা এসব নিয়ে কথাবার্তা বলেন, বলেছেন, তাঁদের ওপর খৰহস্ত হয়েছেন কথিত রাজনীতিবিদরা। অথচ প্রকৃত রাজনীতিবিদরা গঠনমূলক সমালোচনা যাঁরা করেন, তাঁদের বন্ধু ভাবেন- শত্রু নয়। তাঁরা সৎ পরামর্শ গ্রহণ করেন। প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা একদিন বলেছিলেন, 'ভিন্নমতাবলম্বী জেনেও প্রেসিডেন্ট জিয়া গভীর রাতে ডাকতেন, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ চাইতেন, কখনো কখনো গ্রহণও করতেন। এ রকম অনেকের সঙ্গেই কথা বলতেন, পরামর্শ চাইতেন। আসলে এটিই তো প্রকৃত রাজনীতিবিদের আদর্শ হওয়া উচিত। এখন তা কল্পনাও করা যায় না। কোনো ব্যাপারে কোনো 'নেত্রী'কে কেউ জাতীয় স্বার্থে, এমনকি দলীয় স্বার্থেও ভালো পরামর্শ দিতে চাইলে 'দরখাস্ত' করে দেখা করার পারমিশন নিতে হয়। 'চাকর-বাকর'দের মাধ্যমে তদবির করতে হয় দেখা করার জন্য। কোনো জটিল বিষয়ে কোনো বিষয়-বিশেষজ্ঞকে নিজ থেকে ডাকার কথা কল্পনাও করা যায় না। অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই। তাঁরা ভাব দেখান তাঁদের চেয়ে বেশি আর কে জানে, কে বোঝে? তাঁরাই বেশি জানেন, বোঝেন। বরং যাঁরা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে চান, তাঁদের নিয়ে এসব কথিত রাজনীতিবিদ হাসি-তামাশা করেন। যাঁরা এসব করেন, এঁরা প্রকৃত রাজনীতিবিদ নন, এঁরা আসলে হচ্ছেন 'রাজনীতিজীবী'। রাজনীতি এঁদের কাছে দেশ ও জনগণের সেবার মহান ব্রত নয়, রাজনীতি এঁদের কাছে জীবিকা নির্বাহের মোক্ষম উপায়। রাজনীতি এঁদের কাছে ত্যাগের আদর্শ নয়, রাজনীতি এঁদের কাছে কেবলই ভোগের অনন্য উপায়। তাই রাজনীতি আজ কলঙ্কের কাদাজলে বিবর্ণ।
এঁরা রাজনীতিবিদ নন, রাজনীতিজীবী
আমাদের দেশে রাজনীতির এই 'ক্ষয়রোগ' ব্যাপকতা লাভ করে স্বৈরাচার এরশাদের আমল থেকে। নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনকে তিনি বেশ সফলতার সঙ্গেই বেচাকেনার হাটে পরিণত করেন। আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান চৌধুরী, কোরবান আলী, শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, আমজাদ হোসেন, বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ডাক্তার এম এ মতিন, ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখকে মন্ত্রিত্বের দামে কিনে নেন তিনি। আরো কিনে নেন এককালের বামপন্থী নেতা কাজী জাফর আহমদ, মোস্তফা জামাল হায়দার, খালেদুর রহমান টিটোদেরও। রাজনীতিতে আদর্শবাদিতা ও নীতি-নৈতিকতার বিশালতম 'শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানটি' এ দেশে সম্পন্ন হয় তখনই। ক্ষমতার মৌ-লোভী রাজনীতিকদের এত ব্যাপকহারে দলত্যাগ, আদর্শত্যাগ এ দেশে আর কখনো ঘটেনি। একজন রাজনীতিবিদ যখন নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতার বেদিকে কুর্নিশ করেন, বিবেক আর মূল্যবোধ তখন তাঁর মধ্যে লোপ পায়। লজ্জা-শরমও থাকে না। কোনো খারাপ কাজে বিবেক আর তাঁকে দংশন করে না। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই একটি অপরাধেই এরশাদের বিচার ও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি। বরং চিরস্থায়ী ক্ষমতার কাঙাল হাসিনা-খালেদার আনুকূল্য পেয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির নিন্দিত খলপুরুষ এখন নন্দিত নায়ক। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়। বলা হয়, আমরা গণতন্ত্রের স্বর্ণালি যুগে প্রবেশ করেছি। কিন্তু রাজনীতির ধারা পাল্টায়নি। সামরিক বা অনির্বাচিত স্বৈরাচারের স্থান দখল করে নির্বাচিত স্বৈরাচার। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ক্রমে বেড়েই চলেছে। রাজনীতি থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদরা। বড় বড় রাজনৈতিক দল এখন কর্মী-সংগঠক-সমর্থক আর জনগণের দল নেই, পরিণত হয়েছে একেকটি পরিবারের সম্পত্তিতে। দল পরিচালনায় অন্য যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউ কার্যকর নেতা নন, মূল নেতা-নেত্রী বা তাঁদের সন্তানদের স্টাফ অফিসার। সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ না করলে পত্রপাঠ বিদায়। যাঁরা দলে আছেন বা নানা কায়দায় ঢুকছেন, তাঁদের কাছে রাজনীতি, আদর্শ, জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন মুখ্য নয়, মুখ্য অর্থ-বিত্ত হাতিয়ে নেওয়া। এঁরা রাজনীতিবিদ নন, এঁরা আসলে রাজনীতিজীবী। বেচাকেনার হাটে এখনো যে ১৮-২০ শতাংশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী সংসদে, সরকারে বা দল পরিচালনায় সুযোগ পান, তা-ও আর পাওয়া যাবে না। সবই চলে যাবে দল-মালিকদের 'চাকর-বাকর' মানের লোকদের দখলে।
এ রকম একটা পরিস্থিতি আঁচ করেই ওয়ান-ইলেভেনের পর রাজনৈতিক দলে সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ২০০৭ সালের ২৫ জুন উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে দলের ভেতর গণতন্ত্রচর্চা, পরিবারতন্ত্র বিলোপ, সৎ, মেধাবী ও যোগ্য রাজনীতিক-নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন, দলে ও সরকারে কর্তৃত্ববাদিতার অবসানকল্পে দুই মেয়াদের বেশি দলীয় ও সরকারপ্রধান না থাকা, এক ব্যক্তির দলীয় ও সরকারের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত না থাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য রোধ, সম্মেলন ও নেতা-কর্মীদের মতামত ছাড়া নেতা-নেত্রীর ইচ্ছায় কমিটি গঠন বন্ধ এবং সর্বোপরি দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের সাহসী আওয়াজ তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগেও আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ তাঁদের বহু সহকর্মী সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। আমু-তোফায়েল-সুরঞ্জিত বাবুরা গদির লোভে বশ মানলেও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুর প্রমুখ নীতিতে অটল নেতারা বশ্যতা মানেননি। সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, ওই সময়টাকে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন কেন? সোভিয়েত ইউনিয়নের একটা গল্প দিয়ে এর জবাব দেওয়া যায়। সংশোধনবাদীরা তখন ক্ষমতায়। 'এক পার্টি সভায় ব্রেজনেভ লেনিন-স্ট্যালিনের কঠোর সমালোচনা করছিলেন। এক কমরেড হঠাৎ বলে উঠলেন, 'তখন বলেননি কেন এসব? হুংকার দিয়ে উঠলেন ব্রেজনেভ। কে কে করলেন এ প্রশ্ন? কেউ টুঁ শব্দও করলেন না। কিছুক্ষণ পর ব্রেজনেভ হেসে বললেন, 'কমরেড, জবাবটা পেয়েছেন? আজ আপনি যেমন সাহস করে দাঁড়িয়ে বলতে পারলেন না, একই কারণে আমিও তখন পারিনি।' আবদুল মান্নান ভূঁইয়াদের পক্ষে এটাই মোক্ষম জবাব। পিপিআরসির তদন্ত প্রতিবেদনে এটা পরিষ্কার যে সেদিন যদি রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব মেনে নিয়ে তার গ্রহণযোগ্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে রাজনৈতিক দলে রাজনীতি, আদর্শের প্রাধান্য থাকত, গণতন্ত্রের চর্চা হতো, পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাহীন বিদেশি নাগরিকরা দলের মালিকানা দাবি করতে পারত না, দলে রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ থাকত, দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পেত না। নেত্রী আন্দোলনের ডাক দিলে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী 'বিপ্লবীরা' নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতেন না। যাঁরা সত্যিকার অর্থে রাজনীতি করতে চান, নিজেদের মর্যাদা ও গৌরব ফিরিয়ে এনে দেশ ও দশের কাজে কার্যকর ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে তাঁদের সাহসী হওয়া দরকার। দলে স্বেচ্ছাচারিতা, প্রভুত্ব ও দুর্নীতিকে 'না' বলার এটাই সময়। পিপিআরসি সে সুযোগটি তাঁদের সামনে এনে দিয়েছে। 'রাজনীতিজীবী'দের হাত থেকে রাজনীতি আবার রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরে আসুক। ঘুচে যাক সব অপবাদ।
লেখক : সাংবাদিক
(কালের কন্ঠ, ২৪/২০/২০১৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন