লেখক: তানভীর আহমদ সিদ্দিকী
জে এম সেন হলে সিসিএ কালচারাল প্ল্যাটফর্মের ভাইয়েরা পূজা মণ্ডপ কমিটির দাওয়াত পেয়ে গিয়েছেন। তাদের অনুরোধে ইসলামী সঙ্গীত গেয়েছেন।
প্রথম আর্গুমেন্ট, ভিন্ন ধর্মের ভাইয়েরা দাওয়াত দিলে দাওয়াত কবুল করা কি না জায়েয? আমার জানামতে না জায়েজ নয়, বরং আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস সালামগণ ভিন্ন ধর্মের লোকদের দাওয়াতে গিয়েছেন, আমাদের রাসূল (সা) গিয়েছেন, তাহলে সিসিএ এর ভাইদের বেলায় আমাদের আপত্তি কেন।
দ্বিতীয় আর্গুমেন্ট, পূজা মণ্ডপ বা যেখানে পূজা অর্চনা চলমান, এমন জায়গায় ইসলামের দাওয়াত প্রদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া কি হারাম? আমার জানামতে হারাম হওয়ার কথা নয়, কারণ, আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস সালামগণ এমন উদ্দেশ্যে পূজা অর্চনার জায়গায় গিয়েছেন, দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের রাসূল (সা) পূজার মওসুমকে দাওয়াতি কাজের মওসুম হিসেবে ঐ মওসুমেই সবচেয়ে বেশি দাওয়াতি কাজ করেছেন। তাহলে, সিসিএ এর ভাইয়েরা মণ্ডপ কমিটির দাওয়াত পেয়ে যদি সেখানে ইসলামের ইতিবাচক বিষয়গুলো গানে গানে উপস্থাপন করেন, তাহলে তাদেরকে আমরা কেনো আমাদের আক্রোশের স্থান বানাচ্ছি, সে কথা আমার বুঝে আসে না।
তৃতীয় আর্গুমেন্ট, হিন্দুরা যদি মসজিদে এসে তাদের ধর্মীয় বয়ান দিতে চায়, তাহলে কি আমরা সেটা মেনে নিবো? এই কথার সহজ উত্তর হলো, না, আমরা মেনে নেওয়া তো দূরের কথা তাদেরকে এজন্য দাওয়াতই দিবো না। মণ্ডপের লোকেরাই তো আমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছে, সেজন্যই আমাদের কিছু ভাই সেখানে গিয়েছেন। কথা বলার বা গান গাওয়ার পরিবেশ মণ্ডপের লোকেরাই তৈরি করে দিয়েছেন, তাহলে যেতে অসুবিধা কোথায়? তারা দাওয়াত দিয়েছেন, সেখানে গিয়ে আমি আমার কাজ করে এসেছি। আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত দিয়ে এসেছি। এটার সাথে মসজিদের প্রসঙ্গ এনে লাভ নাই। এটা অপ্রাসঙ্গিক, লজিকাল ফ্যালাসি।
চতুর্থ আর্গুমেন্ট, মণ্ডপে ইসলামী গান গাওয়ায় ইসলামের অবমাননা হয়েছে কি না? এই পর্যন্ত যতোগুলা আর্গুমেন্ট সামনে এসেছে, তার মধ্যে এই আর্গুমেন্টটা নিয়ে একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে, যেকোন বিবেকবান মানুষই মেনে নিবেন যে, এই চিন্তা হাস্যকর। ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে কি না আমার জানা নাই। ইসলাম সকল স্থানে, সকল পরিবেশে মানব জাতির কাছে তার আবেদন তুলে ধরতে চায়। আল্লাহর নবীগণ (আ) মূর্তির সামনে দাঁড়িয়েই তো আল্লাহর ওহী তিলাওয়াত করেছেন। মন্দিরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শিরকের অসারতা নিয়ে কথা বলেছেন।
এখন, আমাদের দায়িত্ব যেখানে শিরকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা, সেখানে এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান মন্দির ছাড়া আর কোথায় হতে পারে, আমার জানা নাই। মন্দিরে পূজা চলা অবস্থাতেই তো এলাকার সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা উপস্থিত থাকেন, তো সেখানে মানব জাতির প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিধান বর্ণনা করার উত্তম জায়গা নয়তো আর কোথায় হবে? আমাদের পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণ কি এই সকল স্থানে আল্লাহর বিধান তিলাওয়াত করে শুনান নাই, শুনিয়েছেন তো। তাহলে সিসিএ'র ভাইয়েরা ইসলামের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদেরকে গানে গানে আহবান করায় কী অন্যায় হয়েছে, একটু বুঝান দেখি।
সিসিএ'র ভাইয়েরা যে কাজ করেছেন, তা তো আম্বিয়ায়ে আলাইহিস সালাম (আ) এবং আমাদের রাসূল (সা) সুন্নাহকেই অনুসরণ করেছেন। এখন কথা হলো, তাদের যদি কোন অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে তা হলো, তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে কেনো নিয়ে যেতে হলো? তারা নিজ উদ্যোগে কেনো গেলেন না?
একইভাবে আমার প্রশ্ন জাতির ঐ সকল দ্বীনি ভাইদের প্রতি, যারা সেদিনের ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে গেছেন যে, যে দায়িত্ব স্বেচ্ছায়, দ্বীনি অনুভূতি নিয়ে আমাদের সকল মুসলমানের পালন করা দরকার ছিলো, অর্থাৎ, শিরকের আস্তানাগুলোতে গিয়ে গিয়ে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার করা, সেই কাজ এখন হিন্দু ভাইয়েরা আমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে আঞ্জাম দেওয়াতে চাচ্ছেন। লজ্জা বা অপরাধবোধ যদি তৈরি হতেই হয়, তাহলে এই কারণেই আমাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
সিসিএ যা করেছে, তা তাদের দ্বীনি দায়িত্ব থেকে করেছে। হিন্দু ভাইদের দাওয়াত পেয়ে তারা সেখানে গিয়ে হিন্দু ভাইদের রসম রেওয়াজে গা ভাসিয়ে না দিয়ে বরঙ, ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত দিয়ে ফিরে এসেছেন। এতে তাদেরকে সাধুবাদ জানানো উচিৎ। এই ঘটনায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের গাত্রদাহ হবে জানি, এই কথা কুরআনেই আছে যে তাদের অনেক গাত্রদাহ হবে, কিন্তু, আমাদের দ্বীনি ভাইদের আহার নিদ্রা কেনো বন্ধ হয়ে গেলো, তার কারণ, আমার মাথায় ধরে না।
চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমী মুসলিম উম্মাহর পক্ষে সেদিন যে ভূমিকা নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে মুবারাকবাদ পাওয়ার হক রাখে। সেই সাথে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের যেকোন হঠকারী পদক্ষেপ থেকে আমাদের ঐ সকল জিন্দাদিল দাঈ ইলাল্লাহগণদের হিফাজত করার দায়িত্বই সমানভাবে আমাদের উপর বর্তায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন