পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ
পূর্বঘোষিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেছেন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের এক দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আগের দিন পূর্ণদিবস অবরোধের পর বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে তারা সারাদেশে এই কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছিল।
তবে শিক্ষার্থীদের গত কয়েক দিনের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কোনো বাধা না এলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে এবার কঠোর হওয়ার বার্তা এসেছে।
দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারির পরও আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ ঘটালে পুলিশ প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও এদিন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কথা বলেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেছেন, কোটার বিষয়টি এখন আদালতের বিষয়। তাই আদালতেই এর সমাধান হোক। তবে এ সমাধানের পরও যদি আলোচনা করতে হয়, তা সব সময় করা যাবে। দেশের কল্যাণে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে যা করার তা–ই করা হবে।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জানমাল অনিশ্চয়তায় পড়লে পুলিশ বসে থাকবে না। যারা আন্দোলন করছে তারা শিক্ষিত, মেধাবী। তারা কেন রাষ্ট্রের বিপক্ষে যাবে? তারা নিশ্চয়ই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ফিরে যাবে।
বিকাল চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিতে থাকেন। সেসময় মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছিলেন অবস্থানে।
এর আগে সকালে সংবাদ সম্মেলনে এবারের কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। আদালতের স্থিতাবস্থার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিরে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি। ছাত্রলীগ সভাপতির অভিযোগ, এখন যারা আন্দোলন করছেন তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে বলে জানান ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক শেখ শাকিল হোসেন।
ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক জানান, ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হন। সেখানে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও জলকামান মোতায়েন করা ছিল। বিকাল পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এর ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড় হয়ে নিউমার্কেটের সামনে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম।
ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক জানান, এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের গেইটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদেরকে কলেজের ভিতরে ঢুকে যেতে বললেও তারা সেখান থেকে সরেননি।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে থাকা ঢাকা টাইমস প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রবিউল জানান, শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তবে তারা বাধা উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
বাংলা ব্লকেডে প্রথম পুলিশি বাধার খবর আসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে থাকা ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক ইমদাদুল হক জানান, বিকাল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের দাবিতে মিছিল নিয়ে বের হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন।
পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে বললেও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরেননি। এসময় শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এঘটনায় তিন শিক্ষার্থী ও তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীরা সড়কের আশেপাশে অবস্থান করছেন বলেও জানিয়েছেন ঢাকা টাইমস প্রতিনিধি।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন