সরকার পতনের চতুর্থ মাসে দেশের যে চিত্র, সেটি মানতে পারছেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশ’ তারা চাননি।
শুক্রবার বিকালে ঢাকায় এক ছাত্র সমাবেশে তিনি বলেছেন, “(আন্দোলনের মাধ্যমে) যে অর্জন হয়েছে, সেটা যেন বৃথা না যায়।”
ফার্মগেইটের খামারবাড়ীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র পরিষদ এই আয়োজন করে।
বিএনপি নেতার বক্তব্যে রাজনীতির নানা বিষয়ের পাশাপাশি ঢাকায় সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ ও লুটপাটের কথাও উঠে আসে।
তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটা নতুন জায়গায় এসেছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না।
“আমি খুব হতাশ, বৈষম্যবিরোধী লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের মিছিল বেরিয়ে এসেছে যে, ‘আমরা শান্তি চাই, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না’, ইতিমধ্যে অনেকে প্রতিবাদ করেছে। আমি বয়স্ক মানুষ, জীবনের প্রায় শেষ সময় এসে গেছি, একটাই অনুরোধ আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন আমাদের বৃথা না যায়।”
‘চারদিকে আবার অন্ধকার আসছে’ বলেও সতর্ক করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “এটা তোমরা ভালো করে জান। আমি ভীষণ কষ্ট পাই যখন দেখি যে, আমার ছেলেরা ছেলেরা মারামারি করছে।
“যখন তুমি এতো বড় একটা বিজয় অর্জন করলে, একটা ‘ফ্যাসিস্টকে’ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে, একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে, সেই আমাদেরকে দেখতে হবে যে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মোল্লা কলেজের ছাত্ররা মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা তো কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ও পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলা ও লুটপাটের মত ঘটনাগুলো পরিহার করার অনুরোধ করেছেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতা বলেন ‘‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র… এবং তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এদেরকে বোঝানো, ‘দিস ইজ নট দ্যা ওয়ে’, এটা রাস্তা নয়। আমি আবারও খুব ভীত হই যখন দেখি ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবী নিহত হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়।”
‘খুব সজাগ, সতর্ক থাকতে হবে’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল সতর্ক করেন সবাইকে। তিনি বলেন, “সীমান্তের ওপারে ‘ফ্যাসিস্ট’ বসে আছে। ওখান থেকে নতুন নতুন ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তারা একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বে দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এখানে নাকি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে।
“ভারতের পত্র-পত্রিকাগুলোতে, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এখন এই ধরনের সমস্ত নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। আসলে তা না। কারা এগুলো করছে? কেন করছে? আমি এই কথাটা এজন্য বলছি যে, আমাদের এই আনন্দে থাকার অবকাশ নাই যে, আমরা জিতে গেছি… সব হয়ে গেছে।”
মাথার ওপরে খড়্গ এখনও আছে বলে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “চতুর্দিকে তারা চেষ্টা করছে আবার ‘অন্ধকারে’ নিয়ে যাওয়ার। এজন্য খুব সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
“কোনো রকম হঠকারিতা, কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে। এটা হচ্ছে একটা বড় কাজ।”
‘ওরা শেষ করে দিয়ে গেছে’
আওয়ামী লীগ দেশটাকে ‘শেষ করে’ দিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “কোথাও কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। আমি সবসময়ে আমার বক্তৃতার মধ্যে বলতাম মেঠো ভাষায় ফোকলা করে দিয়ে গেছে।
“অর্থনীতি নাই, ব্যাংক লুট, সব জায়গায় লুট, ঘুষ, দুর্নীতি… সমাজটাকেই শেষ করে দিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলোকে আমাদেরকেই বন্ধ করতে হবে, আমাদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
জনগণ রুখে দাঁড়ালে এটা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার অনুরোধ তোমরা ছাত্র, তোমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছ, তোমরা অংশীদার, তোমরা এই বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে। কেউ যেন আমাদের অর্জিত সম্পদ কেড়ে না নিতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
“নিঃসন্দেহে তোমরা নতুন স্বপ্ন দেখছ, নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা তোমরা চিন্তা করছ, এর পরে কী? হ্যাঁ, এটাই তোমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন এই বাংলাদেশকে তৈরি করা, এখন এই বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলা।”
‘হাসিনা পলাইছে… কথাটা চালু করা চাই’
বিএনপি নেতা বলেন, “আমার নাতনিও বলে, ‘হাসিনা পলাইছে, হাসিনা পলাইছে’। এই ‘পলাইছে’ কথাটা চালু করতে হবে জোর করে।”
এটা বলা কী জন্য ‘দরকার’, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের ‘ফ্যাসিস্ট’, এই ধরনের ‘নির্যাতনকারী’, এই ধরনের ‘নিপীড়নকারী’, এই ধরনের ‘খুনি’, এই ধরনের ‘হত্যাকারী’, তারা পালিয়ে যায়।”
ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রদের কাজ করা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পরামর্শও দেন মির্জা ফখরুল।
আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে এই কনভেনশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড মূতর্জা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল, যুব দলের কামাল আনোয়ার আহম্মেদও বক্তব্য রাখেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন