নির্বাচনের দাবির বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্ন অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, জামায়াত তাদের রাজনীতি করে। তাদের কৌশলও আলাদা। এখানে বিএনপি ও জামায়াতের দাবি এক হতে হবে- তা কিন্তু নয়। তবে যেসব রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদেরসহ ছাত্র-জনতার প্রতি বিএনপি সব সময় সম্মান দেখাবে। মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা, বিএনপি’র নির্বাচন প্রস্তুতি ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ যে আন্দোলন করেছে তার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারকে উপলদ্ধি করতে হবে জনগণ কেন রক্ত দিলো। কেন গুম হলো, মারা গেল, কেন এতো নির্যাতিত হলো, কেন এতো জেল-জুলুমের শিকার হলো- আসলে তারা কী চায়। সেই জনআকাঙ্ক্ষাকেই কিন্তু বাস্তবায়নের পথ তৈরি করতে হবে। একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কিন্তু আগামীদিনের পথ চলাটাকে আমাদের সুগম করতে হবে।
বিএনপি নির্বাচন-বিমুখ না উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত নির্বাচনের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের আগামী নির্বাচনে বাইরে রেখে নতুন করে সবকিছু তৈরি করলে এবং আস্থা আনলে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে, কারও অপেক্ষায় তারা থাকবে না। আর আমরা তো নির্বাচনের জন্যই আন্দোলন করছি, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি কতো আসন পেতে পারে এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সে বিষয়টি ভোটারদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে বলেছিলেন- বিএনপি ১০টি আসনও পাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কপালে কী জুটেছে। সুতরাং জনগণ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা সাধারণ জনগণের ব্যাপার। আমি কয়টা আসন পাবো, আমি তো সব আসন পেতে চেষ্টা করবো। কয়টা আসন পাবো, সেটা সাধারণ জনগণ চিন্তা করবে যে, কাকে আমি ভোট দিবো।
জামায়াত কৌশলগতভাবে এই মুহূর্তে নির্বাচন চাচ্ছে না, তারা মনে করছে দেরিতে নির্বাচন হলে তাদের লাভ এমনটা অনেকে বলছেন, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ছোট যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, আন্দোলন ও সংগ্রামে তাদের যে ভূমিকাটা আছে- সেজন্য আমরা তাদেরকে সম্মান করি। কিন্তু কৌশলগত দিক থেকে কে নির্বাচন আগে চায় এবং পরে চায়- এটা যার যার বিষয়। কিন্তু কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে মনে হয় যে, এটা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০ রাজনৈতিক দল আছে, নিবন্ধন আছে বেশ কয়েকটি দলের। এই নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর মধ্যে অনেক দলে সভাপতি আছে কিন্তু সাধারণ সম্পাদক নাই। এখন তৎপর যারা, ক্ষমতায় ছিল এবং ক্ষমতায় আসতে পারে- এই দল, যাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, সাংগঠনিক শক্তিসহ সবকিছু আছে, তাদের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করা মানে মানুষের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করা। আর এখানে ভোটের রাজনীতি কিন্তু অন্যরকম। জামায়াতের রাজনীতি জামায়াত করবে, আর তাদের কৌশলও তাদের।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তারেক রহমান যেকোনো মুহূর্তে দেশে ফিরতে পারেন। ১/১১’তে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এই ষড়যন্ত্রটা যে থেমে গেছে, এটা তো মনে করি না। উনি আমাদের ভবিষ্যতের কাণ্ডারি। উনি মাঠের আন্দোলনটা কীভাবে চাঙ্গা করেছেন, তার যে দক্ষতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা- এটা তিনি প্রমাণ করেছেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে তো ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে। সুতরাং তাকে (তারেক রহমান) যদি আমরা দেশে নিরাপদবোধ মনে না করি, আমরা উনাকে আসতে বলবো না। আমরা আগে তার নিরাপত্তাটা ঠিক করি, রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করি। আর উনি তো আছেন। উনি তো আমাদের দূর থেকেই চালাতে পারছেন। আজকেই তাকে ঢাকায় লাগবে- এমন তো না। দ্বিতীয় হলো, দেশে থাকলে হয়তো আমরা আরও বেশি চাঙ্গা হবো। কিন্তু দূর থেকেও উনি আমাদের কাছে আছেন। প্রতিনিয়তই কথা বলছেন। সুতরাং জাতীয় রাজনীতির অনেক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই এবং জটিল বিষয়গুলো সহজ করেই আমাদের চিন্তা করতে হবে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে উপস্থিত রেখেই দলের জাতীয় কাউন্সিল করা হবে বলেও জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছুতেই একটা চলমান প্রক্রিয়া। আজকে যে সংস্কারটা প্রযোজ্য, আগামীতে সেই সংস্কারটার পরিবর্তে নতুন কিছুর প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে সংস্কার অনিবার্য। আজকে যে সংস্কার দেশ ও জাতির জন্য হচ্ছে, হয়তো একবছর কিংবা দুই বছর পর দেখা দিবে যে, ওটাকে আবার সংস্কার করতে হবে। আর সংস্কার এক জায়গায় থেমে থাকে না। সংস্কার শব্দটি রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনে, ব্যক্তি জীবনে এটি চলমান প্রক্রিয়া।
১/ ১১’তে যে সংস্কারের কথা বলা হলো সেটাকে তো পরে কুসংস্কারে পরিণত করা হয়। একটা বিরাজনীতিকরণ, যেটা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। যেটা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হেয় করা হয়েছে, যেটা কাম্য ছিল না। যার ফলাফলটা নেতিবাচক হয়েছে, ইতিবাচক হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, এই সংস্কারগুলো যদি রাষ্ট্রীয় হয়, তবে সাংবিধানিকভাবে এই সংস্কারটা আনতে হবে, সেটা না পারা গেলে নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। কারণ যেকোনো রাষ্ট্রীয় কিংবা সংবিধানের সংস্কার সংসদ ছাড়া সম্ভব না। বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তারা সংস্কারের প্রস্তাব দিতে পারে, জনগণের মধ্যে একটা উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে- জনগণ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এটাকে কার্যকর করতে গেলে নির্বাচিত সংসদ দরকার। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন এই সরকারের যেটা দরকার, একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার জন্য- নির্বাচনের নিয়ম আছে, আরও বিভিন্ন বিষয়গুলোতে তারা পরিবর্তন আনতে পারে। যেটা জনগণ গ্রহণ করবে। এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যা যা প্রয়োজন সেটাও তারা করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন