আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরবর্তী সময়টাতে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি দেখাচ্ছে বিএনপি। দলের নাম ভাঙিয়ে কোনো অপকর্মে জড়ালে শাস্তিও পাচ্ছেন বিভিন্ন স্তরের পদধারী অনেক নেতা। এরপরও চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের মতো অপকর্মে জড়িত নেতাকর্মীদের পুরোপুরি লাগামে রাখতে পারেনি বিএনপি।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব ক্ষেত্রে কোনো আপস করেননি। বরং তার নির্দেশে অপকর্মের অভিযোগ আসা নেতাদের শোকজ-অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় কয়েকজন সিনিয়র নেতাও রয়েছেন। এমনকি ভেঙে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি জেলা কমিটিও।
এমন অবস্থায় দুই মাসের মাথায় শনিবার গভীর রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। হঠাৎ করে এই কমিটি ভেঙে দেওয়ায় দলটির অনেকে হিসাব মেলাতে পারছেন না। ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং নগরের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ঢাকা টাইমসকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কার্যত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে প্রকাশ্যে তেমন চাঁদাবাজি এবং দখলদারত্বের কথা শোনা না গেলেও দুই মাসের মাথায় এ কমিটি ভেঙে দেওয়ায় সত্যিকারের অপরাধীকেই রক্ষা করা হলো।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বাফুফের কমিটি নিয়ে এবং চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে। তবে, এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন নগর উত্তরের শীর্ষ নেতারা।
দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের সুপারিশক্রমে অনেক নেতাকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় দখলদারত্বের অভিযোগ আসলে তারা সরজমিনের গিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পতনের পর রাতারাতি রাজধানীতে যত দখলদারিত্ব, লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তার সিংহভাগই হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে। ইতিমধ্যে এধরনের অর্ধশতাধিক লিখিত অভিযোগও এসেছে।
অভিযোগ রয়েছে, নগর দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন দলটির অনেক নেতা। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা কাজী আবুল বাসারের ভাগ্নে রনি নিয়ন্ত্রণ করছে কাপ্তান বাজার এলাকা, নবাবপুরে জুম্মন, গুলিস্তানে মনির হোসেন টিপু, কলাবাগান-কাঠাল বাগানে মাইনুদ্দিম মাইনু ও আব্দুল মান্নান, শ্যামপুর-সদরঘাট এলাকা ফরহাদ রানা, নিউমার্কেট এলাকায় অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন, কামরাঙ্গীর চরে বিভিন্ন দখলে নেমেছেন দেলোয়ার। এদের অনেককে এসব বিষয়ে শোকজ করলেও কর্ণপাত করেননি।
অভিযোগ তীর রয়েছে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও। ৫ আগষ্টের পর মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে শ্যামপুরে একটি লোহার ফ্যাক্টরি এবং সিএনজি স্টেশনের হামলা এবং লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নিজস্ব ফেসবুক পেইজেও এ লুটপাটের ঘটনায় স্টাটাস দিয়েছে ছাত্ররা।
এমনকি যে ফ্যাক্টরি এবং সিএনজি স্টেশনের ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে সেই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সেই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেইজে দেওয়া স্টাটাসের স্ক্রিনশট এবং সেনাবাহিনী বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রও ঢাকা টাইমসের কাছে আছে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম না বলার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের শেল্টার দেওয়ার জন্য দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা রয়েছেন। যে কারণে অনেক অভিযোগ থাকা সত্বেও অনেকে নগর দক্ষিণের শীর্ষ নেতারা পার পেয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনুর বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ এলেও তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু ঢাকা টাইমসকে বলেন, যতগুলো অভিযোগ পাওয়া গেছে তার প্রতিটির সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, অনেক অভিযোগ এসেছে ভিত্তিহীন। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, পারিবারিক সমস্যা এগুলোতো বিএনপির পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না।
নিজে কোনো দখলবাজিতে জড়িত নন দাবি করে মজনু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো সাংগঠনিক শাস্তি আমি মেনে নেবো।’
কমিটি ভেঙে দেওয়ায় প্রসঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক সাইফুল আলম নীরব ঢাকা টাইমসকে বলেন, কেন কমিটি ভেঙে দিলো তা আমার জানা নেই। তবে, দল যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে।
নীবর বলেন, মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে এসেছি দুই মাস। আমি অনেককে তেমন চিনিও না। তবে, কারওয়ান বাজারসহ যে কয়টি জায়গায় অনেকের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন অভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি কোনো দখলবাজি বা চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত থাকি, আর যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারি তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম সাংগঠনিক নিয়মেই চলে। তারেক রহমান সাহেব নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। সারাদেশে যোগাযোগ রাখছেন। তার কাছে সব মেসেজ আছে। দলের ভালোর জন্য এবং বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাফুফে কমিটি নিয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। আমরা চেয়েছিলাম দলনিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তি যেন দায়িত্ব নেন।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া ৫ আগস্টের পর ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিচ্ছিন্ন কোনো অভিযোগ এলেও আমরা তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনকি শোকজের পাশাপাশি অনেককে দল থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। বিএনপির রাজনীতি জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশ গড়ার রাজনীতি। এ নীতিকে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন বিএনপি তা করে যাচ্ছে।
ঢাকা টাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন