গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। দেশের জাতীয় দৈনিক, অনলাইন পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে একটি ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ আসে বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে! জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দলীয় প্যাডে বিজ্ঞপ্তিটি লেখা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়ায় বিএনপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।’ ওই পাঁচ নেতার তালিকায় আছেন বিএনপির প্রভাবশালী, খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ পাঁচ জন। ওই ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ পেয়ে দেশের জাতীয় কয়েকটি দৈনিক, অনলাইনে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত, প্রচারিত হয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনাও হচ্ছে।
তবে আজ শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়ায় বিএনপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) খবরটি ভিত্তিহীন।’ তবে বৃহস্পতিবারের ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি’ কে, বা কারা পাঠিয়েছেন গণমাধ্যমের কার্যালয়ে, এ বিষয়ে রিজভি কিছু বলেননি।
একইভাবে বিএনপির রাজধানীর গুলশান কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের কাছে গত কয়েকদিন আসছে নানা উড়ো খবর। বিএনপির সংবাদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের মুঠোফোন, ই-মেলে আসছে গুজব। পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ের টেলিফোনেও দেয়া হচ্ছে এসব খবর। এসব খবরে কখনো বলা হচ্ছে, বিএনপির একাংশ ‘নির্বাচনীকালীন সরকারে’ যোগ দিচ্ছে, বা এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতা, খালেদা জিয়ার নির্দেশ মানছেন না দলের নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, আন্দোলনে রাজী নন শীর্ষ নেতারা ইত্যাদি। গণমাধ্যমগুলো এসব খবর প্রায়ই প্রচার, প্রকাশ করছে।
কারা পাঠাচ্ছেন সাংবাদিকদের কাছে এরকম খবর? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতার দাবি, ‘গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সরকারের পক্ষ নিয়ে বিএনপির নামে গুজব ছড়াচ্ছেন। তারা বিএনপির ভুয়া প্যাডও ব্যবহার করছেন সাংবাদিকদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিয় দেশকে বলেন, ‘বিএনপির ভেতরে কিছু অর্ন্তকোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের স্বার্থান্ধ গ্রুপের নেতারাও অপপ্রচার, গুজব ছড়ানোর কাজে লিপ্ত রয়েছেন।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য প্রিয় দেশকে বলেন, ‘গুজব ছড়ানোর কাজটা কারা করছেন, সেটা খালেদা জিয়া জানেন। তিনি ব্যবস্থা নিলেই হয়। দলের ভেতরের বিভীষণদের দিকে না তাকিয়ে গোয়েন্দাদের দোষারোপ করলেই বিএনপির বিরুদ্ধে এসব খবর ঠেকানো যাবে না।’
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ওই ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ পেয়ে প্রিয় দেশ’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। তিনি তখন বলেন, ‘খালেদা জিয়া দলের কাউকে কারণ দর্শানের নোটিশ দেননি।’ পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলেন, ‘শোকজ দেয়ার খবরটি ডাহা মিথ্যে।’ তাদের কাছে নিশ্চিত হওয়ার পর পাঁচ নেতাকে খালেদার শোকজ বিষয়ক খবরটি প্রচার করেনি প্রিয় দেশ।
উল্লেখ্য, বিএনপির আজকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গতকাল শুক্রবার দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলীকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোকজ করেছেন। সংবাদটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন