বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালের গ্যালারি ভারতীয়দের দখলে। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় নতুন দিনের অপেক্ষায় প্রোটিয়া ভক্তরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যারিবীয় সাগর জয় করে ভারতে ট্রফি ফিরিয়ে নিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল। হ্যাঁ, ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো দলটির। সবশেষ ২০০৭-এ দক্ষিণ আফ্রিকারই মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের প্রথম শিরোপার মুখ দেখেছিল ভারত। এরপর নানা হাত ঘুরে তা চলে যায় ইংল্যান্ডে। অন্যদিকে ২৬ বছর আগে ১৯৯৮-এ আইসিসি’র কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শিরোপা স্বাদ পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। এবার সুযোগ এসেছিল তাদের সেই আক্ষেপ মেটানোর। কিন্তু প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ফাইনালে ওঠা মার্করামের দল শেষ পর্যন্ত ইতিহাস বদলাতে পারলো না। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত।
সেখান থেকে বিরাট কোহলির ৭৬ রানের অসধারণ এক ইনিংসে প্রোটিয়াদের ১৭৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয়। জবাব দিতে নিতে নিয়মিত বিরতে উইকেট হারালেও ঝড় তোলেন হেনরিক ক্লাসেন। ৫টি ছয়ের মারে ২৭ বলে করেন ৫২ রান। ভারতের হাত থেকে ম্যাচ প্রায় বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বুমরা, পান্ডিয়া আর আর্শদ্বীপের অসাধারণ বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত জয় পায় ৭ রানে। শেষ ওভারে ৬ বলে ১৬ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি ডেভিড মিলাররা।
শেষ ওভারের প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়াকে উড়িয়ে মারলেন ডেভিড মিলার। একটা সময় মনে হচ্ছিল ছক্কা। কিন্তু লং অফ থেকে বাঁদিকে দৌড়ে এসে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিলেন সূর্যকুমার যাদব। ১৭ বলে ২১ রান করলেন মিলার। তাতে প্রায় শেষ হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার আশা। শেষ ৫ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার চাই ১৬ রান। সেখান থেকে আর জয়ের পথ খুঁজে পায়নি প্রোটিয়ারা। তার আগে মার্কো ইয়ানসেনের বিদায়ের পর চাপে পড়ে গেল দলটি। জাসপ্রিত বুমরাহর করা ১৮তম ওভারে শুধু নিতে পারল ২ রান। উইকেটের খোঁজে বুমরাহর হাতে বল তুলে দিলেন রোহিত শর্মা। অধিনায়ককে হতাশ করেননি তিনি। চমৎকার বোলিংয়ে মার্কো ইয়ানসেনকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরেন এই পেসার। বুমরাহর ভেতরে ঢোকা বলের লাইনেই যেতে পারলেন না ইয়ানসেন। তার লেগ স্টাম্পে হালকা ছুঁয়ে বেলস ফেলে দিলো বল। উল্লাসে মাতলো ভারত। ৪ বলে ২ রান করে ফিরলেন ইয়ানসেন। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। ১৯তম ওভারে আর্শদিপ সিংও করলেন দুর্দান্ত বোলিং। সেই ওভারে আসে শুধুমাত্র ৪ রান।
৭ ম্যাচে ৭৫ রান! বিশ^কাপে বিরাট কোহলির দূরবস্থা নিয়ে নানা আলোচনা গুঞ্জন। দল ফাইনালে উঠলেও মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে আসর পার করার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে কেন বড় মঞ্চের তারকা বলা হয়, আবারো বুঝলো ক্রিকেট দুনিয়া। রোহিত শর্মা থেকে কলকাতায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, কোহলি বড় তারকা, ওর রানে ফেরা সময়ের অপেক্ষা। সেটাই হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে। জ্বলে উঠলেন বিরাট কোহলি। গত ম্যাচগুলিতে রান পাননি। সেই নিয়ে কথা হচ্ছিল। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা তার পাশে ছিলেন। দলনেতার কথার মর্যাদা দিলেন কোহলি। তিনি দূরন্ত মেজাজে ছিলেন এদিনের ম্যাচে। শেষমেশ ৫৯ বলে ৭৬ রান করে আউট হন ইয়ানসেনের বলে। তার আগে ভারতীয় দল লড়াইয়ের মতো রান সংগ্রহ করে ফেলেছে। ২০ ওভারে ভারত করে ১৭৬ রান। তিনি যে চাপের মুখে ভালো খেলেন, আবারও সেটি দেখা গিয়েছে। তৃতীয় উইকেটে অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে ৭২ রানের জুটি গড়েন ৩৫ বছর বয়সী ওপেনার। আর পঞ্চম উইকেটে শিবম দুবের সঙ্গে গড়েন ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
ফাইনাল ম্যাচে ভালো শুরু করেছিল ভারতীয় দল। প্রথম ৯ বলের মধ্যে পাঁচটিতে বাউন্ডারি এসেছিল। রোহিত ও কোহলি দারুণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এক ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ দুই উইকেট নিয়ে চাপে ফেলে দেন ভারতকে। রোহিত আউট হন ৯ রানের মাথায়। আর ঋষভ পান্ত তিনে নেমে ওই মহারাজের বলেই ফিরলেন শূন্য রানে। উইকেটের পিছনে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে। যে কোহলি আসর জুড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন, তিনিই ফাইনালে পথ দেখালেন ভারতকে। অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে শক্ত করেন ইনিংসের মেরুদণ্ড। ৫৪ বলে গড়েন ৭২ রানের জুটি। তবে দারুণ খেলতে থাকা অক্ষরকে ফিরতে হয় রান আউট হয়ে। ১৩.৩তম ওভারে তিনি ফেরেন ৪১ বলে ৪৭ রানে। এরপর শিবম দুবেকে নিয়ে দলকে টানেন কোহলি। ৪৮ বলে পূরণ করেন ফিফটি। তাতে বসে যান বাবর আজমের পাশে, বনে যান টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৩৯ ফিফটির মালিক। এরপর আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন কোহলি। পরের ১০ বলে তুলে নেন ২৬ রান। যদিও অপরাজিত থেকে ফেরা হয়নি, ১৯তম ওভারে ফেরেন ৫৯ বলে ৭৬ রানে। দুবে ফেরেন পরের ওভারে ১৬ বলে ২৭ রান করে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন