স্বস্তি!
কীসের সেটা না বললেও চলে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হেরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচও মোটেও ভালো হয়নি। ভীষণ দুশ্চিন্তা জেঁকে বসেছিল ব্যাটিং নিয়ে।
কিন্তু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই সেই দুশ্চিন্তার বেশ খানিকটা উবে গেছে তাওহিদ হৃদয় ও লিটন দাসে। আগে বোলাররা ফাঁস পরিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। এরপর রান তাড়ায় একবার ভয় ধরালেও শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয়েই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ। টানা দুই হারে শ্রীলঙ্কার সুপার এইটে ওঠার পথ ভীষণ কঠিন হয়ে উঠল।
টস জিতে আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের আগে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছেন বোলাররা। গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের উইকেট সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন নাজমুল। শ্রীলঙ্কা পুরো ২০ ওভার খেললেও ৯ উইকেটে মাত্র ১২৪ রান তোলাই তার প্রমাণ। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানরা উইকেট থেকে গতি ও বাউন্স পেয়েছেন। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন বাউন্সের সঙ্গে পেয়েছেন বাঁকও। এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ যে বিপদে পড়েনি তা নয়। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে লিটন–হৃদয়ের ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি বাংলাদেশের ৬ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে জয়ের ভিত গড়ে দেয়।
রিশাদের বাঁক পাওয়া দেখেই সম্ভবত স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে দিয়ে বোলিংয়ের শুরু করান লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ইনিংসের তৃতীয় বলেই ধনাঞ্জয়ার বলে সৌম্য সরকার যেভাবে ক্যাচ তুলে আউট হন, সেটি ভুলে যাওয়ার মতোই। বাংলাদেশের সমর্থকেরা হয়তো দুরুদুরু বুকে ভেবেছিলেন, এই তো মড়ক শুরু হলো!
জোরে ঘোরাতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন সৌম্য (০)। মাঝে ৬ বল পর আবার উইকেট! এবার নুয়ান তুষারার বলে বোল্ড আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান (৩)। ১.৪ ওভারে মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়েছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নাজমুল (৭) শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে আউট হওয়ার পর চাপটা আরও বেড়েছে। ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৩৪। এখান থেকে ম্যাচ যেকোনো দিকেই যেতে পারত।
ভাগ্যিস লিটন–হৃদয়ে অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। ৫.৩ ওভার থেকে ১১.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছে দুজনের জুটি। এই পথে লিটন একটু মন্থর (১৮ বলে ১৮) ব্যাট করলেও সেটি ম্যাচের প্রয়োজনেই ছিল। কারণ অন্য প্রান্তে হৃদয় বাজে বল ছাড়েননি। ৪ ছক্কা এবং ১ চারে ২০ বলে ৪০ রান করা হৃদয় ১১.৪তম ওভারে আউট হওয়ার আগে হাসারাঙ্গাকে মেরেছেন টানা তিন ছক্কা। তার আগের ওভারে মাথিশা পাতিরানাকে ছক্কা মারেন লিটন।
৩৮ বলে ৩৬ রান করা লিটন ১৪.১ ওভারে আউট হলেও ম্যাচ ততক্ষণে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। জয়ের জন্য ৩৫ বলে দরকার ছিল ২৬ রান। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে এই পথটুকু পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল অভিজ্ঞ সাকিবের। ১৩ বলে ১০ রানের জুটি গড়ার পর ১৭তম ওভারে সাকিবের দারুণ ক্যাচ নেন পাতিরানা। ১৪ বলে ৮ রান করা সাকিব আউট হওয়ার পর বেশ চাপেও পড়েছিল বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ১৪ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। এখান থেকে শুরু হয় নাটকের। ১৮তম ওভারে টানা দুই বলে রিশাদ ও তাসকিনকে তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন তুষারা।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ১১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। দাসুন শানাকার করা প্রথম বলটাই ছিল ফুল টস। একটু সরে মিড উইকেট নিয়ে ছক্কা মেরে ম্যাচটা আবারও বাংলাদেশের দিকে টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। ওই ওভারে জয় তুলে নেওয়াও নিশ্চিত করেন মাহমুদউল্লাহই। ১৩ বলে ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে প্রথম সাফল্য এসেছে চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদের সৌজন্যে। শর্ট বলে টানা দুটি চার হজমের পর একটু সামনে করে কুশল মেন্ডিসকে প্লেড–অন করেন তাসকিন। শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানেরা কিন্তু রানের চাকা থামাননি। সাকিবের করা পঞ্চম ওভারে চারটি চার মারেন পাতুম নিশাঙ্কা। নিজের প্রথম দুই ওভারে ২৪ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মোস্তাফিজ তুলে নেন কামিন্দু মেন্ডিসকে (৪)। তাঁর কাটার আজ উইকেটে ধরেছে যেমন, বাউন্সও পেয়েছেন। সেই সুবাদে ৯ম ওভারে বিপজ্জনক নিশাঙ্কাকেও (২৮ বলে ৪৭) তুলে নেন মোস্তাফিজ। ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৪ রান তোলা শ্রীলঙ্কার রান বেশিদূর এগোয়নি রিশাদ হোসেনের স্পিনে।
পরের ১০ ওভারে ৫০ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা, এর মধ্যে ৩ উইকেটই রিশাদের। উইকেট থেকে বাঁক ও বাউন্সের সহায়তায় দারুণ বোলিং করেন এই লেগ স্পিনার। ১৫তম ওভারে টানা দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক না পেলেও ৪ ওভারে ২২ রানে রিশাদের ৩ উইকেট নেওয়ার এই বোলিং অনেকদিন মনে থাকবে সমর্থকদের। শেষ ৫ ওভারে ২১ রান দেওয়ার বিনিময়ে শ্রীলঙ্কার ৪টি উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন