চলতি বিম্বকাপে একের পর নতুন রেকর্ড গড়ছেন ক্রিকেটাররা। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার রেকর্ড নিজের দখলে নিয়েছেন তিনি।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন ম্যাক্সওয়েল। ইনিংসের একেবারে শেষ দিকে মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড। ৮ চার ও সমানসংখ্যক ছয়ে সেঞ্চুরি করেন ম্যাক্সওয়েল। শেষ পর্যন্ত ৪৪ বলে ১০৬ রান করে আউট হন তিনি।
ম্যাক্সওয়েলের আগে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার এইডেন মারক্রামের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কদিন আগে ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন।
২০১৫ বিশ্বকাপে ৫১ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ম্যাক্সওয়েল নিজেই। একই আসরে এবি ডি ভিলিয়ার্স শতকে পৌঁছান ৫২ বল খেলে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ম্যাক্সওয়েলের সেঞ্চুরিটি চতুর্থ দ্রুততম। সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরিটি এবি ডি ভিলিয়ার্সের দখলে। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩১ বল খেলে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করেন তিনি। তার এক বছর আগে কোরি অ্যান্ডারসন শতক করেন ৩৬ বলে। ১৯৯৬ সালে শহিদ আফ্রিদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক করেন ৩৭ বলে।
....................................................................................
ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলের জোড়া সেঞ্চুরি, রান পাহাড়ে চাপা পড়লো নেদারল্যান্ডস
চলতি বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে চলে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া, নিজেদের শক্তি আর সামর্থ্য দিয়ে পরের দুই ম্যাচেই জয় তুলে নেয় প্যাট কামিন্সের দল। আজ নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলের জোড়া সেঞ্চুরি ও স্মিথ ও লাবুশেনের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮ রানেই প্রথম উইকেট হারায় অজিরা। এরপর ওয়ার্নার-স্মিথ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ অর্ধশতক করে ৭১ রান ফিরে গেলেও ওয়ার্নার তুলে নেন বিশ্বকাপে টানা সেঞ্চুরি। আজ মারনাস লাবুশেনও তুলে নেন অর্ধশতক। আর শেষের দিকে ঝোড়ো এক ইনিংস খেলেন বাঁধেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রান তুরেছে অজিরা। জয়ের জন্য পাহাড়সম ৪০০ রানের লক্ষ টপকাতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ শুরু থেকেই ডাচ বোলা রদের ওপর চড়াও হতে থাকেন। তিন ওভারেই তুলে নেন ২৭ রান।
কিন্তু তার পরেই ওভারেই ঘটে ছন্দপতন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মিচেল মার্শ আজ ফিরে যান মাত্র ৯ রান করে।
১৫ বলে ৯ রান করা মিচেল মার্শ লোগান ভ্যান বিকের বলে , কলিন অ্যাকারম্যানের হাদে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। তার বিদায়ে ২৮ রানে ভাঙে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি।
মিচেল মার্শ ফিরে গেলে স্টিভেন স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন ডেভিড ওয়ার্নার। তাদের জুটিতে ভর করে ২২ ওভার ৩ বলে ১৫০ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নার আজ অর্ধশতক তুলে নেন ৪০ বলে। যেখানে রয়েছে ৬ টি চার ও ২ টি ছয়ের মার। অন্যদিকে স্মিথ আজ অর্ধশতক তুলে নেন ৫৩ বলে । যার মধ্যে রয়েছে ৭ টি চারের মার।
দলীয় ১৬০ রানে স্মিথের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। ৬৮ বলে ৭১ রান করা স্মিথ আরিয়ান দত্তের বলে রোয়েলফ ভ্যান ডার মেরওয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ভেঙে যায় ১৩২ রানের জুটি।
স্মিথের বিদায়ের পর মারনাস লাবুশেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ওয়ার্নার। ডাচদের বিপক্ষে আজ ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন পর মারনাস লাবুশেন। ৪২ বলে ৫০ করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৬ টি চার ও একটি ছয়ের মার।
অর্ধশতক তুলে নিলেও নিজের ইনিংসকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ৪৭ বলে ৬২ রান করা লাবুশেন বাস ডি লিডের বলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন। মিড অনে দাঁড়ানো আরিয়ান দত্ত ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। যার ফলে ৬২ রানেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
লাবুশেনের বিদায়ের পর জশ ইংলিসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ওয়ার্নার। এর মাঝেই তিনি তুলে নেন ব্যক্তিগত শতক। ৯১ বলে ১০০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ১১ টি ৪ ও ৩ টি ছয়ের মার।
চলতি বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি। এর আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও তিনি তুলে নেন সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন ১২৪ বলে ১৬৩ রান। আর আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯১ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি।
সেই সঙ্গে নাম লেখান রেকর্ডে। চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা সেঞ্চুরি পেলেন তারকা এই ওপেনার। এ ছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৬টি সেঞ্চুরিতে ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকারকে ছুঁলেন ওয়ার্নার। আর একটি সেঞ্চুরি করলেই সবার ওপরে থাকা রোহিত শর্মাকে (৭টি) ধরে ফেলবেন তিনি।
তবে সেঞ্চুরির পরে আর বেশিসময় ক্রিজে থাকতে পারেননি ওয়ার্নার। ৯৩ বলে ১০৪ রানে করে লোগান ভ্যান বেকের বলে আরিয়ান দত্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি।
ওয়ার্নারের আগে দলীয় ২৬৮ রানে ফিরে যান জশ ইংলিস। ১২ বলে ১৪ রান করে বাস ডি লিডের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি।
ওয়ার্নার এবং ইংলিসের বিদায়ের পর জুটি গড়েন দুই নতুন ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ক্যামেরুন গ্রিন। তবে এই জুটি বেশিদূর যেতে পারেনি। দলীয় ২৯০ রানে ক্যামেরুন গ্রিনের বিদায়ের পর ভেঙে যায় এই জুটি।
১১ বলে ৮ রান করা ক্যামেরুন রান আউটের শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ২৯০ রানে ৬ উইকেট হারায় অজিরা।
ক্যামেরুনের বিদায়ের পর অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জুটি বাঁধেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এরই মাঝে তিনি তুলে নেন ব্যক্তিগত শতক। আজ তিনি মাত্র ৪০ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যার মধ্যে রয়েছে ৮ টি চার ও ৮টি ছয়ের মার। এটি বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড।
ইনিংসের একেবারে শেষ দিকে ৪০ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ম্যাক্সওয়েল। বাস ডি লিডের বলে ছয় মেরে করেন বিশ্বকাপের নতুন রেকর্ড। ভেঙ্গে দেন ১৮ দিন আগে গড়া এইডেন মার্করামের রেকর্ডকেও।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য নেদারল্যোন্ডসকে আজ পাড়াড়সম ৪০০ রানে লক্ষকে টপকাতে হবে।
ঢাকাটাইমস/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন