রকেট আবিষ্কার করে দেশজুড়ে চমক সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একদল স্বপ্নবাজ তরুণ শিক্ষার্থী। দীর্ঘ গবেষণায় তারা রকেট আবিষ্কারের প্রথম ধাপে সফল হলেও এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগীতা ও অনুমতি।
তবেই উৎক্ষেপণ হবে দেশের আকাশের প্রথম এই রকেট।
এই স্বপ্নবাজ তরুণদের দলনেতার নাম মো. নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি। তিনি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইলেক্টিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্টনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়।
জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই বিমান ও রকেট আবিষ্কারের নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমান ওলির। সে সময় এই স্বপ্নের ডানা না মেললেও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তি হওয়ার পর তার স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে। ফলে সহপাঠী বন্ধু নিয়ামুল ইসলামের কাছে তার স্বপ্নের জানান দেয় ওলি। এতে সায় দেয় নিয়ামুলও। শুরু হয় রকেট বানানো গল্প। তখন সময় ২০১২ সাল।
এরপর তারা দেশ-বিদেশের পরিচিত বড় ভাই-বন্ধুদের কাছ থেকে রকেট সংক্রান্ত বই সংগ্রহ শুরু করে তারা। এভাবে তারা প্রায় চার শতাধিক বই গবেষণা করে সংগ্রহ শুরু করে প্রয়োজনীয় যতোসব যন্ত্রপাতি। কিন্তু মাঝ পথে এসে টাকা অভাবে ছিটকে পড়ে তারা। এতেও থমেনি এই স্বপ্নবাজ তরুণরা। ২০১৯ সালে ফের ব্যক্তিগতভাবে টাকা সংগ্রহ করে ২০ জনের দল নিয়ে আলফা সায়েন্স ল্যাবের মাধ্যমে শুরু হয় রকেট তৈরির কাজ। এভাবেই ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে তারা রকেট তৈরির কাজ শেষ করে। কিন্তু এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগীতা ও অনুমতি। তবেই সম্ভব এই স্বপ্নের রকেট আকাশে উৎক্ষেপণ।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেক্টিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্টনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. আ. ওয়াহিদ বাংলানিউজকে জানান, র্দীঘ প্রচেষ্টায় এই রকেট আবিষ্কার করেছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই রকেট আকাশে উৎক্ষেপণ করতে হলে প্রয়োজন সরকারি বরাদ্দ ও অনুমতি।
তিনি আরও জানান, অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমতি পেলে সেই চিঠি যাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই মূখ্য। তবে আমরা আশা করছি দেশের স্বার্থে সরকার এই স্বপ্নবাজ তরুণদের পাশে দাঁড়াবে।
নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা ৬ ফুট ও ১০ ফুট উচ্চতার দুটি করে প্রোটোটাইপ তৈরি করেছি। এর মধ্যে একটির নাম ধূমকেতু-ওয়ান। এর ফোর্স প্রায় দেড়শ নিউটন। ধূমকেতু-ওয়ানের রেঞ্জ প্রায় ২০ কিলোমিটার। অপরটির নাম ধূমকেতু-টু’। এর ফোর্স ৪০০ নিউটন। এটির রেঞ্জ প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
ওলি আরও জানান, স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে আছি। যেদিন সরকারের অনুমতি নিয়ে এই রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারবো তখন এই স্বপ্ন সফলতা পাবে বলে আশাকরছি। তবে স্বপ্ন শতভাগ স্বার্থক হবে যদি এই রকেট উৎক্ষেপণের পর সফলভাবে ভূ-পৃষ্ঠে নামাতে পারি। এজন্য সরকারের সহযোগীতা মূখ্য। সেই সঙ্গে বাংলার আকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা এই স্বপ্নের পূর্ণতা দেখতে চাই।
কলেজ সূত্র জানায়, এর আগেও আলফা সায়েন্স ল্যাবের এই শিক্ষার্থীদের এই টিম একাধিক রোবোটিক্স প্রজেক্টে সফল হয়েছে। এতে তারা ২০১৯ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত টেকফেস্ট নির্বাচনী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে তারা ভারতের বিখ্যাত আই.আই.টিতে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। সেখানেও তারা শীর্ষ-৫ এ জায়গা করে সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর কবীর বলেন, রকেট আবিষ্কারের বিষয়টি দেশের জন্য আশা জাগানিয়া একটি বার্তা। তবে এখন এটি সফল উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। খুব দ্রুত এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। আশাকরছি এর মধ্য দিয়ে দেশে আবিষ্কারের নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন