দেশের সিনেমায় যখন অভিনয় নিয়ে খুব ব্যস্ত, ঠিক তখনই কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা। হঠাৎ করে তার এই দেশান্তরি হওয়ায় বিস্মিত হন ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সবাই। সবার প্রিয় শাবানা এখন থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। স্বামী ও সন্তানসহ সেখানেই তার স্থায়ী আবাস। দেশের বাইরে থাকলেও মনে পড়ে দেশের কথা। নির্দিষ্ট সময় পর দুই সপ্তাহ কিংবা এক-দুই মাসের জন্য ছুটে আসেন বাংলাদেশে। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে, নিজের মতো করে কাটিয়ে আবার ফিরে যান প্রবাসের সংসারে।
ববিতা
স্বামী ইফতেখার আলমের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে অনিককে নিয়েই ববিতার সংসার। কানাডায় লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি নিয়ে থিতু হয়েছেন অনিক। বছরের বেশিরভাগ সময় ছেলের সঙ্গে তিনি কানাডাতেই থাকেন। তবে বছরের একটা সময় দেশে অবস্থান করেন ববিতা। কানাডাতে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা এখনো করেননি তিনি।
শাবনূর
এক দশকের বেশি হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া আছেন শাবনূর। একমাত্র সন্তান আইজান নেহানকে নিয়ে সিডনিতে থাকেন শাবনূর। মা, ভাই, বোন ও আত্মীয়স্বজনসহ শাবনূরের পরিচিত ৫০ জনের বেশি মানুষ অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। তাদের কেউ থাকে সিডনি, কেউ মেলবোর্ন। শাবনূরের তাই সেখানে মানিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হয় না। যখন মন চায় আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যান। ঘুরতেও বের হন।
রিচি সোলায়মান
ছোটপর্দার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান। তিনি ছিলেন একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, উপস্থাপক ও প্রযোজক। তাকে দেখা গেছে বড়পর্দায়ও। রিচি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে আর বড় হয়ে টনি ডায়েসের বিপরীতে ১৯৯৮ সালে ‘বেলা অবেলা’ ধারাবাহিক নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। বড়পর্দায় তার অভিষেক ঘটে শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নীরব প্রেম’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে রিচিকে পর্দায় আর নিয়মিত দেখা যায় না। সন্তান নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাদের ঘিরেই সব ব্যস্ততা রিচির। সময় পেলে এখনো মাঝে মাঝে ছুটে আসেন বাংলাদেশে এবং কাজ করেন ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতে।
টনি ডায়েস
সোনালি সময়ের একজন দুর্দান্ত অভিনেতা-নির্দেশক-আবৃত্তিকার টনি ডায়েস। ১৯৮৯ সালে নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি শুরু করেন টিভি নাটকের ক্যারিয়ার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত চার শতাধিক নাটক, ধারাবাহিক আর টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা দুটিÑ ‘মেঘের কোলে রোদ’ ও ‘পৌষ মাসের পিরিত’। হুট করেই অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন টনি ডায়েস। ২০০৮ সালের শেষ দিকে স্ত্রী প্রিয়া ডায়েস ও মেয়ে অহনাকে নিয়ে পাড়ি জমান মার্কিন মুলুকে। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিউইয়র্ক লং আইল্যান্ডের হিকসভিল শহরে বসবাস করছেন তিনি।
শাকিব খান
গত ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন শাকিব খান। সেখানে তিনি ১০ দিন থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো দেশে ফেরেননি ঢাকাই সিনেমার এ সুপারস্টার। বিদেশে স্থায়ী হওয়ার গুঞ্জনটা আরও উস্কে দেন শাকিবের ‘গুলুই’ সিনেমার প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তিনি জানান, শাকিব যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন। যে কারণে তাকে ছয় মাস সেখানে থাকতে হবে। এর পর থেকেই অনেক গণমাধ্যমে শিরোনাম করা হয়Ñ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হচ্ছেন শাকিব খান। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড দেশটির সরকার সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন দেশের সেলিব্রেটিদের দিয়ে থাকেন। এই সম্মানটা সবাইকে দেওয়া হয় না। দেশে থাকতে আমার গ্রিনকার্ড ঠিক হয়ে ছিল। তার মানে এই নয় যে, আমি আমার দেশ ছেড়ে দিচ্ছি।’
ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী
একটা সময় দেশের নাট্যাঙ্গনে ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীর ঢের জনপ্রিয়তা ছিল। অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটকে তিনি কাজ করেছেন। টিভি নাটকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি অভিনয় করেন চলচ্চিত্রেও। সেখানেও শ্রাবন্তী ছিলেন সফল। ‘রং নাম্বার’ ও ‘ব্যাচেলর’ ছবি দুটিতে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি। অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও হঠাৎ করেই মিডিয়া থেকে হারিয়ে যান শ্রাবন্তী। মূলত ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরই শোবিজ দুনিয়া থেকে পুরোপুরি বিদায় নেন এই অভিনেত্রী। সর্বশেষ ২০১০ সালে শ্রাবন্তী অভিনয় করেন নূরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’ নাটকে। ২০১৮ সালে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সেই সংসারে তার দুটি মেয়ে। বর্তমানে তাদের নিয়ে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাস করেন শ্রাবন্তী।
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি
অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন বিভিন্ন বিশৃঙ্খলার সঙ্গে। বিয়ে, বিচ্ছেদ, মাদকাসক্ত- সব মিলেয়ে তিন্নির জীবন হয়ে গিয়েছিল পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মাঝে নাটকে দেখা গেলেও নিয়মিত হননি আর। সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করছেন তিন্নি। বর্তমানে একমাত্র মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়ে কানাডার মন্ট্রিয়লে রয়েছেন। সেখানেই কাটছে এক সময়ের ভীষণ ব্যস্ত এই অভিনেত্রীর জীবন।
রোমানা
এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা। বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও নিজেকে চলচ্চিত্রেও খুব ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ২৬টি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। সর্বশেষ তিনি রহমতুল্লাহ তুহিনের নির্দেশনায় ২০১৪ সালে জিয়াউল ফারুক অপূর্বর বিপরীতে ‘যত দূরে যাবে বন্ধু’ নাটকে অভিনয় করেন। এর পর তাকে আর চলচ্চিত্রে কিংবা নাটকে অভিনয়ে দেখা যায়নি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। ২০১৫ সালে রুমানা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী এলিন রহমানকে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন তিনি।
আরও যারা
অল্প কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পাওয়া চিত্রনায়িকা তামান্না থাকেন সুইডেনে। মডেল ও অভিনেত্রী মোনালিসা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে বিয়ে করে চলে যান। সংসার জীবনে বিচ্ছেদ ঘটলেও এ অভিনেত্রী সেখানেই আছেন। মডেল ও অভিনেত্রী নাফিজা জাহান ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানেই বসবাস করছেন। মডেল ও অভিনেত্রী মাহবুবা ইসলাম সুমীও আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছেন অভিনেত্রী নওশীন ও অভিনেতা হিল্লোল দম্পতি। লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া অভিনেত্রী ও মডেল মিলা ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। করোনাকাল শুরু হওয়ার আরও আগে অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ব্যান্ডশিল্পী খালিদ সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক আগেই।
শাহেদ-নাতাশা
জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান ও নাতাশা হায়াত দম্পতিও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা প্রায় দুই মাস সেখানে ছিলেন। যদিও স্থায়ী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি শাহেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক তারকাই এখন যুক্তরাষ্ট্রমুখী। গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। কারণ সেখানে গেলে আমার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে আমি বেশ কয়েকটি প্রদেশ ঘুরেছি। আমাদের শোবিজের অনেকের সঙ্গেই দেখা করেছি। ভালোভাবেই সময়গুলো কেটেছে।’
তৌকীর-বিপাশা
অভিনেতা, নির্মাতা ও নাট্যকার তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরেই বিপাশা যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন স্থায়ীভাবে। সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের দুই সন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন। তৌকীর আহমেদ যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন। যদিও এই তারকা জুটি স্থায়ীভাবে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তারা জানান, সন্তানদের পড়ালেখার জন্যই তারা সেখানে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাদের ঘনিষ্ঠ অনেকেই জানিয়েছেন, এ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন