তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মধ্যবয়সী সুলতান হোসেন নির্মমভাবে খুন হন। মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে ব্যাগসহ বের হতে দেখে তাকে টার্গেট করে র্যাব পরিচয়ে খুন-ডাকাতিতে জড়িত একটি চক্র। পরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে উদ্ধার করা হয় তার লাশ। ইতিমধ্যে সুলতান হত্যায় জড়িত ৬ ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভুয়া পরিচয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে খুন-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। নিখোঁজ তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা বায়িং হাউজের কর্মকর্তা সুলতান হোসেনের লাশ গত ১৬ই জুলাই হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। তারা ভেবেছিল সুলতানের কাছে অনেক ডলার আছে। এমন ধারণা থেকে তারা সুলতানকে অনুসরণ করে সুবিধামতো স্থানে গিয়ে র্যাব পরিচয়ে জোর করে একটি এম্বুলেন্সে তুলে নেয়।
কিন্তু তার কাছে কোনো ডলার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয় চক্রটি। এ সময় সুলতান চিৎকার করার কারণে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে দেয় তারা। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ১৮ বছর বয়সের সজিব নামের নিউ মার্কেটের এক দোকান কর্মচারী খুন হয়েছে। রাত পৌনে ৯ টার দিকে কামরাঙ্গীরচর পূর্ব-রসুলপুরের ৬ নম্বর গলিতে এ ঘটনা ঘটে। সজিবের চাচা সোহেল জানান, ৬ নম্বর গলিতে ১৬ই জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে একই এলাকার কয়েকজন তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহত করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাত ১০টায় মৃত ঘোষণা করেন।
মিরপুর শেওড়াপাড়ায় ভাড়াটিয়াদের ঝগড়ার জেরে রুবেল মিয়া নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। গত ৬ই জুলাই রাতে শেওড়াপাড়া বাড়ির নম্বর ৩৭৪/৩ দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রুবেল মিয়া ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ইদ্রিস পাটোয়ারীর ছেলে। তিনি মিরপুর শেওড়াপাড়া ৩৭৪/৩ বাসায় দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। নিহতের বড় ভাই আকবর মিয়া জানান, ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে ভাড়াটিয়া নাজু এবং তার ভাইদের মারধর করে। এ সময় তারা রুবেলকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ডিএমপি এলাকায় ২৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। একই মাসে রমনা থানায় কোনো হত্যা মামলা রেকর্ড হয়নি। তেজগাঁও থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের নথি বলছে, গত বছর রাজধানীতে ২০৮টি খুনের ঘটনা ঘটে। সেই হিসেবে মাসে গড়ে ১৭টির বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ২১টি খুনের ঘটনা ঘটলেও মার্চে ১৭টি ও এপ্রিলে ৮টি খুনের ঘটনা ঘটে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, জুলাই মাসে একটি মাত্র হত্যা মামলা নথিভুক্ত হয়েছে থানায়। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্যান্য সময় সাধারণত ৬০ থেকে ৭০টি মামলা প্রতিমাসে থানায় রেকর্ড হলেও জুলাই মাসে ৩টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। থানায় আগের তুলনায় খুনের অভিযোগের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, খুনের ঘটনায় জুলাই মাসে একটি মামলাও নথিভুক্ত হয়নি। করোনার কারণে হয়তো খুনের ঘটনা কমেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে খুনের ঘটনা কিছুটা কমেছে। তবে রাজধানীতে অধিকাংশ খুনের ঘটনাই ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকিতে খুন, তথা ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান, অন্যান্য সময় থেকে জুলাই মাসে হত্যাকাণ্ড কিছুটা বেড়েছে। এসকল হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই পারিবারিক সহিংসতা, মানুষে মানুষে সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এরমধ্যে কিছু ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে, ব্যক্তিস্বার্থ বা অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হয়েছে। এ সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। মানুষের দৈনন্দিন কর্মচাঞ্চল্য, অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক-ভণ্ডদের পায়তারা বেড়েছে। সহিংসতা রোধে পুলিশ ইতিমধ্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন