চরম রাজনৈতিক সংকটেও যখন সংলাপ সম্ভব হয়নি তখন চমৎকার এক উদাহরণ সৃষ্টি করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ। যদিও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে রওশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকারি দল, বিরোধীদল ও সুশীল সমাজের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে তবুও তারা এক সঙ্গে পাশাপাশি বসে খেলা দেখলেও এনিয়ে মিডিয়া অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছে।
রোববার বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ আর ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ’ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্ব দেখতে তারা সেখানে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এদিন মিডিয়ার ক্যামেরার কমতি ছিলো না। ভিডিও থেকে স্থিরচিত্র, সবই ধারণ করেছেন গণমাধ্যমের কর্মীরা। গণমাধ্যমে প্রচার, প্রকাশও হয়েছে ‘বিরল’ এ দৃশ্য। তবে ‘বিরল’ এ দৃশ্য, বা ছবি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নানা খবরের ভাঁজে অনেকটা হারিয়ে গেছে।
দেশে প্রথমবারের মতো একমঞ্চে বসে খেলা উপভোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী- বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ খবর নয় মোটেও। কিন্তু মিডিয়া তা তেমন পাত্তা দেয়নি। কেউ কেউ মনে করছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী হলেও তাকে গুরুত্ব না দিয়ে মিডিয়া একপ্রকার পাশ কাটিয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন বিধায় অনুষ্ঠানটি একেবারে যে গুরুত্বহীন তাও বলা চলে না। বরং মিডিয়ার গাফিলতি বলা চলে যে খবরটি চাপা পড়ে গেছে অথবা তা সঠিক ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়নি বলে।
রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা, এখনো পর্যন্ত সেটা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার যে তেমন ভূমিকা থাকবে না, এর প্রমাণ গত কয়েক দিনে তিনি দিয়েছেন। সংসদে যোগ দিয়ে আগেও তিনি বলেছেন, তার দল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন এক উদাহরণ সৃষ্টি করতে চায়। সমালোচনা এসেছে সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকেও। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছিলেন, মাছের মাথা একরকম লেজের দিকটা আরেক রকম যেমন হয় না তেমনি সরকারি দলে মন্ত্রী পদে থেকে আবার সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে বিরেধীদলের ভূমিকা পালন করা যায় না। তবে এখনো অনেকের আগ্রহ যে সংসদে সরকারি দল বা বিরোধীদল কোনো বিলের পক্ষে ও বিপক্ষে কেমন ভূমিকা রাখেন তা দেখার।
এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় বা দলীয় কোনো ইস্যুতে রওশন এরশাদ এখন পর্যন্ত বিবৃতি দেননি। সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন একটি কথাও বলেননি। কবে বলবেন তা তিনিই জানেন। এভাবে চলতে থাকলে যারা তাকে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা।’ বলছেন সে আশঙ্কা সত্যি হতে পারে। তখন ‘তোতা পাখির’ মতো বুলি আওড়ালেও কোনো লাভ হবে না।
এর আগে ১৯৮৮ সালে সংসদে বিরোধীদলে থেকে বুলি আওড়েছিলেন জাসদের নেতা আ স ম আবদুর রব। ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, পতিত স্বৈরাচারী এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে চতুর্থ সংসদ। রব হয়েছিলেন ওই সংসদের ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’। ‘স্বৈরশাসক এরশাদের সহযোগি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ২৫ বছর পর জাতীয় সংসদে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের স্ত্রী হিসেবে বেগম রওশন তেমন ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবে থাকবেন তা এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বেশি আশা করছেন না কেউ।
এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ৬২ হাজার ২০৭টি দল। আর বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ৬২ হাজার ২৬১টি দল। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত এ দুই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে গত ২০১০ সাল থেকে।
পাঠক মন্তব্য
Good.........
Good.........
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন