“আমার সন্তানকে যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমার স্বামী শহিদ হয়েছেন, তার স্মৃতি হিসেবে এ সন্তান থাকবে। আমি যতদিন বাঁচবো, শহিদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকেও তার পরিচয়ে বড় করবো।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত সেলিম তালুকদার রমজানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমি। পরিবারের খোঁজখবর নিতে নিহত সেলিমের বাড়িতে গেলে সুমি এসব কথা বলেন।
সুমি আরও বলেন, “যদি সরকারিভাবে আমার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে পরিবার নিয়ে আমি ভালোভাবে বাঁচতে পারবো। কারো অবহেলা সইতে হবে না।”
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেঝো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন। ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩১ জুলাই রাতে তিনি মারা যান।
নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন।
মারা যাওয়ার এক বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম। মারা যাওয়ার ৪ দিন পর সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা করিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন অন্তঃসত্ত্বা তিনি। বর্তমানে তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
সেলিম তালুকদারের মা সেলিনা বেগম বলেন, “মা-বাবার সামনে তার সন্তানের মৃত্যু পৃথিবীতে এরচেয়ে দুঃখ-কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। আমার যা সহায়সম্বল ছিল সবকিছু দিয়ে ছেলেকে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার ছেলের আয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি, আমাদের সংসার কে চালাবে। আমার ছেলের মৃত্যুর পরে আমরা জানতে পারি ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা। তার অনাগত সন্তানকে দেখে যেতে পারলো না। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মানুষের কাছ থেকে ধার নেওয়া। সে টাকার সব এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই আমার ছেলেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।”
সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার বলেন, “ঘটনার দিন বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সে। এ সময় মাথা, বুক ও পিঠে গুলি লাগে তার। ফুসফুসেও গুলি লাগে। সেলিমের মোবাইল ফোন থেকে কল করে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা আমাদের জানায়। পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। চার দিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শেষে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন