রক্তাক্ত বিপ্লবে শেখ হাসিনার মাফিয়া শাসনের অবসানের পর অন্যদের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে গর্তে লুকিয়ে থেকেও দেশ বিরোধী নানা চক্রান্ত আর সন্ত্রাসে মদত দিয়ে যাচ্ছেন স্বৈরাচারের এই নিকৃষ্টতম দোসর। দেশকে অস্থিতিশীল করে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার যে অপচেষ্টা চলছে তার অন্যতম কুশীলব চট্টগ্রামের এই সন্ত্রাসী গডফাদার। ইতোমধ্য চট্টগ্রাম থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্তে স্বঘোষিত এই ইসকন সদস্যের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতদের তড়িৎ হস্তক্ষেপে জাতি-রাষ্ট্র বিরোধী এসব চক্রান্ত নস্যাৎ হলেও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নীল নকশা থেমে নেই। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর সব সন্ত্রাসীদের
জড়ো করে চট্টগ্রামে বড় ধরণের নাশকতার ছক এঁকে চলেছেন এই গডফাদার-এমন তথ্যও এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠা নওফেল প্রথমে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বিগত ৭ জানুয়ারির আমি আর ড্যামির নির্বাচনের পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন মাফিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য এই নওফেলকেই দায়ী করেন সাধারণ মানুষ। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর চট্টগ্রামে তার একের পর এক কর্মকাণ্ড বিতর্কের জন্ম দেয়। তার পিতা মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহনশীলতার রাজনীতির ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেন নওফেল। দলের সিনিয়র নেতাদের অবজ্ঞা, অপমান আর দলীয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সন্ত্রাসী লালন, শহীদ প্রেসিডেনট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্য ছিল তার স্বভাবজাত। দলের ভেতরে কলহ কোন্দল এবং দলীয় প্রতিপক্ষকে দমনে সরাসরি সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চরম ঘৃনার পাত্র হয়ে উঠেন তিনি। বিগত দেড় দশকে চট্টগ্রামের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পাড়া মহল্লায় তার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। চট্টগ্রামের পুরো অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। তার বাহিনীর কাছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও ছিলেন কোণঠাসা।
বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী বানচালে তার ক্যাডার বাহিনী সক্রিয় ছিলো সব সময়। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারীরা তার লালিত ক্যাডার বাহিনীর সদস্য। তাদের গুলিতে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে। নওফেলের নির্দেশে ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। তাদের অনেকে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বিগত ৫আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের অপরাধীরা পালাতে শুরু করে। পালাতে গিয়ে অনেকে ধরা পড়েছে। তবে নও নওফেল দেশে না বিদেশে রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তিনি যে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ক্যাডার বাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অন্তর্ঘাতমূলক অপকর্মের নীল নকশা তৈরি করছেন তার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গোপালগঞ্জ জেলার পর চট্টগ্রামে সর্ব প্রথম হাসিনার পক্ষে মিছিল বের করার দুঃসাহস দেখায় ছাত্রলীগ। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন নওফেল। জানা গেছে, আড়ালে থেকে নওফেল চট্টগ্রামে তার বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে চলেছেন। তাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত ভেস্তে যাওয়ার পর এখন নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এজন্য চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়ো করার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের অনেক সন্ত্রাসী এখনো গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাদের অস্ত্রভান্ডার অক্ষত অবস্থায় আছে। ফলে তারা দ্রুত সংগঠিত হতে পারে। তবে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, কাউকেই নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন