স্বাগতিক নেপালকে ফাইনালে কাঁদিয়ে সাফের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা সাবিনাদের এর মধ্যেই পুরস্কৃত করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। দেশে ফেরার দিনই এক কোটি টাকার চেক হাতে তুলে দিয়েছেন যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও দিয়েছে বড় বোনাসের ইঙ্গিত। আজ নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় হবে সিদ্ধান্ত, আসবে ঘোষণাও। শোনা যাচ্ছে বাফুফের তরফ থেকে দেড় কোটি টাকা বোনাস দেয়া হবে মেয়েদের। এর বাইরেও বিবিধসহ ২৭টি এজেন্ডা থাকছে নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায়। গঠিত হতে পারে বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটি।
২৬শে অক্টোবর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছেন ১৬ বছর ফুটবল শাসন করা কাজী সালাউদ্দিন। তার স্থলাভিষিক্ত তাবিথ আউয়াল আজ প্রথম সভায় বসবেন সহযাত্রীদের নিয়ে। নবনির্বাচিত কমিটিতে নতুন মুখের সংখ্যাই বেশি। নির্বাচিত ১৪ সদস্যের মধ্যে সাত জন নতুন মুখ। পুরোনোও আছেন সাতজন। চার সহ-সভাপতির চার জনই নতুন। পুরোনোর মধ্যে তাবিথ আউয়ালের ভরসা সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান। ২০২২ সালে প্রথমবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকও সমপরিমান অর্থ পুরস্কার দিয়েছিলেন মেয়েদের। তবে বাফুফের তরফ থেকে সেভাবে মেয়েদের পুরস্কার দেয়া হয়নি। তাবিথ আউয়ালের নতুন কমিটি আজ বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করতে যাচ্ছে। দলের প্রত্যেক ফুটবলারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঋণ রেখে দায়িত্ব ছেড়েছেন সালাউদ্দিন। এ কারণে এই মুহূর্তে নিজস্ব তহবিল থেকে মেয়েদের বোনাস দেওয়ার সামর্থ্য নেই বাফুফের। গুঞ্জন আছে, মেয়েদের এই বোনাসটা নতুন কমিটির সব সদস্য নিজেদের পকেট থেকে দেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন আজকের সভায়।
একজন কর্মকর্তার কথায় মিলেছে সেই ইঙ্গিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘নির্বাহী সদস্যরা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা, চার সহসভাপতি ১০ লাখ করে, সিনিয়র সহসভাপতি ১৫ লাখ এবং সভাপতি যদি ২০ লাখ টাকা দেন, তবেই প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো উঠে যায়। এখন দেখার বিষয় এভাবে সবাই ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসবেন কি না।’ এর বাইরে আজ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাফুফের নতুন কমিটি। এর মধ্যে অন্যতম স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন। বাফুফের স্ট্যান্ডিং কমিটির মধ্যে অন্যতম পেশাদার লীগ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি, নারী ফুটবল কমিটি, ফিন্যান্স কমিটি, জেলা ফুটবল, ডেভলপমেন্ট কমিটি ও মিডিয়া কমিটি। এই মাসের শেষে শুরু হবে নতুন ফুটবল মৌসুম। তাই প্রথম সভাতেই পেশাদার লীগ কমিটি করা হবে বলে জানা গেছে। একটানা প্রায় ১৪ বছর পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাফুফের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তার দায়িত্ব ছাড়ার পর প্রথমে এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কাজী সালাউদ্দিন। পরে লীগ কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয় ইমরুল হাসানকে। বছর দেড়েক ভালোই এই দায়িত্ব সামলেছেন ইমরুল। তবে এবার তিনি লীগ কমিটির দায়িত্ব নিতে খুব একটা আগ্রহী নন। সেক্ষেত্রে নতুন কেউ আসতে পারে লীগ কমিটির দায়িত্বে। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আসছে নতুন মুখ। দীর্ঘদিন এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই এমপি এখন পলাতক। বাফুফের নির্বাচনেও অংশ নেননি। শোনা যাচ্ছে নাবিলের জায়গায় নতুন সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জামান জাহেদীকে দেয়া হতে পারে জাতীয় দলের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে পুরোনো কোনো সদস্যকে করা হতে পারে তার কো-চেয়ারম্যান। সেখানে এগিয়ে আছেন সত্যজিত দাস রূপু। বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। তার অধীনেই দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। তার যেমন সফলতা আছে, তেমন ব্যর্থতাও কম নয়। তার একঘুয়েমির কারণে গত বছর অলিম্পিকের বাছাই পর্বে খেলতে যেতে পারেনি মেয়েরা। তার কারণে নারী ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বাফুফে ছেড়েছেন। ফুটবল ছেড়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না ও আঁখি খাতুন। এসব কারণে তাকে নারী ফুটবলের দায়িত্বে তাবিথ রাখবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তবে ফিন্যান্স কমিটির দায়িত্বে থাকছেন ইমরুল হাসান, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এর বাইরে জেলাগুলোর দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহও আছে বাফুফের এই সিনিয়র সহ-সভাপতির। বরাবর সহ-সভাপতি মধ্য থেকেই একজনকে দায়িত্ব দেয়া হবে ডেভলপমেন্ট কমিটির। আর মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন এক নম্বর সদস্য। আগেরবার এই দায়িত্ব সামলেছেন জাকির হোসেন চৌধুরী। এবার ডেলিগেটদের ভোটে এক নম্বর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইকবাল হোসেন। সম্ভবত তিনি এবার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মিডিয়া কমিটির।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন