এমবিবিএস ২০২৪–২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুনির্দিষ্টভাবে দিন ঠিক না হলেও আগামী জানুয়ারি মাসের কোনো এক তারিখে এই পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার এক মাস পর বিডিএসের (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ নিয়ে আগামীকাল রোববার মন্ত্রণালয় একটি সভা ডেকেছে।
মেধার ভিত্তিতে কলেজ পছন্দ করা মেডিকেল শিক্ষার মৌলিক বিষয়। অটোমেশনে মেধাবীদের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কারও সরে আসা উচিত হবে না।
অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্ত্রণালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, অটোমেশন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি, এটি বাতিল করতে হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, বেসরকারি মেডিকেলের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষায় যাঁরা পড়তে ইচ্ছুক, তাঁরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নিজেদের পছন্দের কলেজে পড়তে চান। অটোমেশনের কারণে অর্থ থাকলেও পছন্দের কলেজে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না। অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুবিধা হবে।
অটোমেশনে মেধাবীরা ভালো কলেজে সুযোগ পাবেন। বাতিল হলে বেসরকারি কলেজগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে।
অটোমেশন পদ্ধতিতে শৃঙ্খলা এসেছে
সব সময় সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হয়। গত এক দশকে এমবিবিএস ভর্তিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয় ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এই পদ্ধতিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দের কলেজগুলো বেছে নিতে পারেন। এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে মেধাতালিকার নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। দেশের ভালো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছিল।
অটোমেশন পদ্ধতি চালুর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। কলেজ কর্তৃপক্ষ মেধাতালিকায় নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারত। অভিযোগ উঠেছিল অর্থের বিনিময়ে তালিকায় নিচে থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারতেন। ফলে তালিকায় ওপরের দিকে থাকা মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন।
মেধার ভিত্তিতে কলেজ পছন্দ করা মেডিকেল শিক্ষার মৌলিক বিষয়। অটোমেশনে মেধাবীদের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কারও সরে আসা উচিত হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অটোমেশনের কারণে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সব আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না। আসন খালি থাকছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সব আসন পূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। ভালো কলেজে ভর্তি হন তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভিন্ন কোনো পদ্ধতি হওয়া উচিত নয় বলে মনে চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সংগঠন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েই চুপ করে বসে নেই। তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে কলেজ পছন্দ করা মেডিকেল শিক্ষার মৌলিক বিষয়। অটোমেশনে মেধাবীদের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কারও সরে আসা উচিত হবে না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন