কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষে আহত ৫০ জনের মধ্যে ৮-১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।
নিহত ব্যক্তি হলেন- কাইয়ূম মিয়া। তিনি মৌটুপি গ্রামের রমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে।
আহতরা হলেন- শান্ত, লিটন, সায়েম, মোস্তাক, ফাইজুল, রাবেয়া বেগম, মিলন, সালাম, সোয়েব, কাদির, মাইনুদ্দিন, সেলিম, বানেছা খাতুন, রফিকুল, হাছান, আরজ আলী প্রমুখ।
জানা গেছে, উপজেলার মৌটুপি গ্রামে সরকার বাড়ির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাফায়েত উল্লাহ ও কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে প্রায় এক ডজন খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ঈদের পরদিন তোফাজ্জল হকের গোষ্ঠীর নাদিম কর্তা সরকার বাড়ির লোকজনের হাতে খুন হন।
অপরদিকে এ ঘটনার কয়েক দিন পর কর্তা বাড়ির লোকজনের হাতে সরকার বাড়ির ইকবাল খুন হন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের কয়েকশ বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। দুটি খুনের ঘটনায় উভয়পক্ষের ২০০ জনকে আসামি করে থানায় পালটাপালটি মামলা হয়।
এরই মধ্যে কর্তা বাড়ির নাদিম হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাড়িতে চলে এলেও সরকার বাড়ির ইকবাল হত্যা মামলার আসামিরা জামিন না নিয়ে বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে এলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র রামদা, লাঠি, বল্লম, তীরসহ ইটপাটকেল নিয়ে মাঠে নেমে পড়লে বৃহস্পতিবার কাইয়ূম মিয়া বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হন।
এ বিষয়ে সরকার বাড়ির বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ বলেন, কর্তা বাড়ির নাদিম মারা গেলে আমাদের গোষ্ঠীর কমপক্ষে ২০০ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন লাগানো হয়।
৫২ বছর ধরে তোফাজ্জল হক তার বংশের লোকজন নিয়ে আমাদের অত্যাচার নির্যাতন করছে। আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আজও আমার বংশের কাইয়ূমকে তারা হত্যা করে।
অপরদিকে প্রতিপক্ষের কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, আজ আমার বংশের লোকজন বাড়িতে গেলে সরকার বাড়ির লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আমরা অত্যাচার নির্যাতন করি না। বরং সরকার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আছি। তারা এ পর্যন্ত আমার বংশের ৪ জনকে খুন করেছে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। মৌটুপি গ্রামের দুটি বংশের ঝগড়া বিবাদ দীর্ঘদিনের। তাদের এসব ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এ গ্রামের মানুষের বর্বরতা নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড অমানুষের মতো। এসব সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করছে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন