বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মানবাধিকার ও প্রশাসনে সংস্কারসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন। তবে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার জন্য ভোটারদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন অলীক স্বপ্ন দেখায় এমন নেতৃত্ব থেকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
গতকাল সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৭তম অধিবেশনে এসব কথা বলেন।
হাইকমিশনার বলেন, জনগণের অধিকারের ওপর চেপে বসা ক্ষমতা কাঠামোর নেতিবাচক প্রভাব এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা বলেছি। তবুও, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারীর অধিকার, পরিবেশগত অধিকার এবং আরও অন্যান্য আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে, কীভাবে মানবাধিকার সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে এবং আমাদের বৃহত্তর ন্যায়বিচার এবং স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে। মানবাধিকার হলো নিয়ামক এবং ক্ষমতার কাঠামোর সংশোধনকারী।
এ সময় সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে ফলকার তুর্ক বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে মশাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে মানবাধিকারকেই। অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ভিত্তিতে একটি শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার স্পষ্ট করেছে। দেশটির একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা দেওয়ার সুযোগ এসেছে।
সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্তে স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনা এবং জবাবদিহি, মীমাংসা ও নিরাময় প্রক্রিয়া, অন্যান্য জরুরি কিন্তু দীর্ঘ বিলম্বিত সংস্কারের বিষয়ে মানবাধিকার হাইকমিশন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে বলেও উল্লেখ করেন ফলকার তুর্ক।
তিনি বলেন, আরও বিস্তৃতভাবে বললে, কিছু নির্বাচন ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে এবং অন্যগুলো চলতি বছর অনুষ্ঠিত হবে। আমি ভোটারদের তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মনে রাখার অনুরোধ করছি, যেগুলো হলো—একটি বাড়ি, তাদের সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা চাকরি, ন্যায়বিচার, পরিবার ও প্রিয়জন, পরিবেশ, সহিংসতামুক্ত, দুর্নীতি মোকাবিলা এবং জনগণের অংশীদারত্ব। এগুলো সবই মানবাধিকারের বিষয়।
বাংলাদেশের সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘আমি ভোটারদের নিজেদের জিজ্ঞেস করার আহ্বান জানাচ্ছি যে বিবেচনা করে দেখুন, কোন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বা প্রার্থী সবার মানবাধিকারের জন্য কাজ করবে; কোনটি সুযোগের সমতাকে সমুন্নত করবে এবং এমন অর্থনীতি গঠনের প্রচেষ্টা নেবে যা সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে; কোন রাজনৈতিক দল মানবাধিকার এবং সংহতিকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে রেখেছে।’
ভবিষ্যৎ অপশাসন ও স্বৈরতন্ত্রের লক্ষণগুলোর বিষয়ে সতর্ক করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘আমি ভোটারদের সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। উগ্র কণ্ঠ থেকে সতর্ক থাকুন, “লৌহমানব” ধরনের নেতৃত্ব যা আমাদের চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়ে দেয় এবং সমস্যার একটা অলীক সমাধান দেখায় যা বাস্তবতার ধারেকাছেও নেই— তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আমি আগেও বলেছি, জেনে রাখুন, যখন একটি গোষ্ঠীকে সমাজের অসুস্থতার জন্য বলির পাঁঠা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, আপনিও একদিন এর শিকার হবেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন