খুলনায় তিন বছর আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি নেতা বাবুল কাজী নিহতের ঘটনায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার সোনালী সেন, খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি আশরাফুল ইসলাম ও উপ পরিদর্শক (এসআই) মনির।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকালে খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আনিচুর রহমানের আদালতে নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম এ অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহত বাবুল কাজী নগরীর ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বাবুল কাজী পুলিশের মারপিটে গুরুতর আহত হন। ওই বছরের ১১ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাদীর আইনজীবী তৌহিদুর রহমান তুষার জানান, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০২১ সালের ২৯ মার্চ বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে তৎকালীন সদর থানার ওসি আশরাফুল ইসলামের নির্দেশে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়। বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে মো. বাবুল কাজী মাথায় গুরুতর আহত হন।
পরবর্তীতে চিকিৎসা নিয়েও তিনি সুস্থ হতে পারেননি। এ ঘটনার পর বাদী পক্ষ ওই সময়ে একাধিকবার মামলা করতে গেলেও কোনো প্রতিকার পাননি। ন্যায় বিচারের আশায় বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগটি দায়ের হয়েছে।
উল্লেখ্য, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা ২০২১ পান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন। ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উপলক্ষে এডিসি সোনালী সেনকে পিপিএম-সেবা পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সে সময় এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। হত্যা-ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটনে পিপিএম পদক পেলেন সোনালী সেন
সোনালী সেন ২০১২ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগদান করেন। তিনি কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত থেকে নিচের মামলাগুলোর রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে ভূমিকা পালন করেন।
২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। বাদী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলনার সোনাডাঙ্গা হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্স থেকে এক লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে রাত ১০টায় দোকান বন্ধ করে যাচ্ছিলেন। পথে হোটেল এশিয়ার সামনে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা তিন-চারজন মোটরসাইকেলযোগে এসে বাদীর মোটরসাইকেল থামিয়ে সেই টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা হলে সোনালী সেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা ও এক রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করেন। তিনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি লাল মৃধা (৩০), মো. সাব্বির শেখ (২৮) ও তহিদুর রহমান তুফানকে (৩০) গ্রেপ্তার করেন।
ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন
২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর সকাল ৭টায় বাদীকে জনৈক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, ভিকটিমকে মোহাম্মদনগর এম আর এন্টারপ্রাইজ অটো চার্জিং পয়েন্টে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়রা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাদী ও উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে। এ বিষয়ে লবণচরা থানার হত্যা মামলা হলে এডিসি সোনালী সেনের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও সহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনা করে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামি মো. আরাফাত হোসেনকে (১৯) মোহাম্মদনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন।
হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাশ্মীরি জুস কর্নারের সামনে ভিকটিমকে এজাহারনামীয় আসামিরা ধারালো ছুরি দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এরপর ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে হরিণটানা থানায় হত্যা মামলা হলে পুলিশ কর্মকর্তা সোনালী সেন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত আসামি সাকিব আল হাসানকে (১৭) গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে আসামি আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন