দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা জটিলতা থাকলেও জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তা অনেকটা কেটে গেছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
তবে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন, সরকার কখন গঠন করা হবে, মন্ত্রিপরিষদে কতোজন থাকবেন এবং সংসদ কখন ভেঙে দেওয়া হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
বিরোধী জোট সব সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলো। এমনকি নির্দলীয় সরকার নিয়ে জনমত গঠনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসভাও করেছেন ১৮ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য ২৫ অক্টোবর থেকে দিনক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কখন হবে কিংবা তফসিল কখন ঘোষণা করা হবে তা-ও স্পষ্ট নয়।
তবে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়ে সংকটের ৯৫ শতাংশ সমাধান করেছেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তার মতে, বাকি রয়ে গেছে শুধু সর্বদলীয় সরকারপ্রধান কে হবেন সেটি নির্ধারণ করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবার দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘সমঝোতামূলক’ প্রস্তাবের পর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকট কেটে যেতে পারে। উভয় জোট থেকে নির্বাচিত এমপিদের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা যেতে পারে।
নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন সে বিষয়টিও কোনো সংকট ছাড়াই অতি সহজে সমাধান করা যেতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একজন এমপিকে পদত্যাগ করিয়ে ওই আসন থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে সরকারপ্রধান করা যেতে পারে। এতে হয়তো নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান নিয়ে সংকটের সমাধান হতে পারে। আর এটার সমাধান হয়ে গেলে বাকিগুলোকে কোনো সমস্যাই মনে করছেন না তারা।
এর আগেও গত বছরের ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে বিবিসি বাংলা সার্ভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে তার অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন।
সে সময়ও তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় সরকার গঠনে তারা (বিরোধী দল) যদি অংশীদারিত্ব চায়, সেটা আমরা দিতে পারি। সবাই মিলে আমরা (নির্বাচন) করতে পারি। তখন একটা ছোট মন্ত্রিসভা করে ইলেকশন করতে পারি।
লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের আগে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের আপিল শুনানিতে আমিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী বা বুদ্ধিদাতা বন্ধু) হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও প্রয়াত ড. এম জহির অনেকটা এ ধরনেরই মত দেন।
রফিক-উল হকের মতে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্য থেকে ৫ জন করে ১০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি করতে হবে। এ কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের একটি খসড়া তালিকা প্রণয়ন করবেন। সংসদ সদস্যদের নিয়ে করা কমিটির প্রণয়ন করা খসড়া তালিকা থেকে এ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য ১০ উপদেষ্টা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত তিন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করতে হবে।
শুনানিতে ড. জহির তখন বলেন, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগেই সরকারি ও বিরোধী দলের ৫ জন করে মোট ১০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তারা সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই সরকারের প্রধান (প্রধান উপদেষ্টা) হবেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে রাষ্ট্রপতির অধীনে।
রাষ্ট্রপতি তথা প্রধান উপদেষ্টার কর্মপরিধি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিসহ নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজ করবেন। তবে রাষ্ট্রের কোনো নীতি নির্ধারণী কাজ এ সরকার করতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে বিধান অনুসারে পরবর্তী তিন নির্বাচনের আগে একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনধিক ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার পর ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সর্ম্পকিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে।
তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলে, তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দু’টি সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
এরপর গত বছরের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পর থেকেই এ বিধানের বিরোধিতা করে আসছে বিরোধী জোট। আর সরকার দলীয় জোটও অবস্থানে অনঢ় থাকার কারণে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়। আর এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় আগামী নির্বাচনের জন্যে অন্তর্বর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে নাম প্রস্তাব করে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও আগামী ২৫ অক্টোবরের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নববই দিনের মধ্যে সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে’।
আর বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি। সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী তাই ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যকর থাকবে তার নেতৃত্বাধীন সংসদ।
পাঠক মন্তব্য
What kind of reporter you are!!! What you said in your very first sentence, have clearly you ingested in the very nest sentence. We expect a bit responsible behaviour from media. Is it not yet clear to you (media) that PM has been clearly playing evil game with the whole nation!
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন