কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের ভুলে একটি ধর্ষণ-হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় চলছে।
পালিয়ে যাওয়া দুই আসামি হলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরবসু গ্রামের মনা বেপারির ছেলে মো. সানাউল্লাহ এবং নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের আবদুল গনির ছেলে ও আবদুর রহিম ।
পলাতক এই দুই ফাঁসির আসামির বিরুদ্ধে ফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন লক্ষ্মীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত।
কুমিল্লা কারাগার সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানায় ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর সানাউল্লাহ, আবদুর রহিম, মো. হারুন ও আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চার আসামির ফাঁসির আদেশ হয়। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকরের জন্য সানাউল্লাহ ও আবদুর রহিমকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। অন্য দুই আসামি হারুন ও আবুল কাশেমকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
এরই মাঝে জেল আপিলে আসামিপক্ষ খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করে। এতে আদালত চার আসামিকে খালাস দেন। তবে এ খালাস আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেলাল আহমেদ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই আসামিদের মুক্তির আদেশের বিরুদ্ধে ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। এ আদেশের কপি উচ্চ আদালত থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার ও দণ্ডাদেশ দেওয়া লক্ষ্মীপুরের ওই আদালতেও পাঠানো হয়।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গত ৬ নভেম্বর আসামিদের খালাসের আদেশ দেন। কিন্তু এ সময় উচ্চ আদালতের ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ ছিল।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সূত্র জানায়, গত ১২ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের মুক্তির ব্যাপারে আদালতের চূড়ান্ত খালাস আদেশটি পায়। ওই দিন কারাগারের ডেপুটি জেলার তৌহিদুল ইসলাম লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট কোর্টের বেঞ্চ সহকারী জহুরুল আলমের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আসামিদের মুক্তির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত হন। এ অবস্থায় ওই দিনই সানাউল্লাহ ও আবদুর রহিমকে কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ছাড়া পেয়েই আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাবস্থার চিঠি কেন আমলে নেওয়া হয়নি এর উত্তর মেলেনি কারাগারের কারও কাছ থেকে।
এদিকে দুই আসামির মুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তোলপাড় শুরু হয়। কীভাবে এ ভুল হলো, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহুরুল আলম বলেন, ‘যা জানার কুমিল্লার কারাগার থেকে জানেন।’ এ বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল-আমিন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের আদালতের নির্দেশে দুই আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তারা ওই আদালত থেকে খালাস পেয়েছে। তাদের মুক্তির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’
চট্টগ্রাম কারা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান বলেন, ‘বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। এ বিষয়ে কার ভুল ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদালত আবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আত্মগোপনে যাওয়া দুই আসামিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন