রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যাবহার করে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে বড় বড় প্রজেক্ট হাতিয়ে নেওয়া, বিনা প্রতিযোগিতায় ডিপিএম পদ্ধতিতে যন্ত্রাংশ সরবরাহের নামে হাজার কোটি টাকার অপরিসীম দুর্নীতি। আর এসব করতে সরাসরি ব্যবহার করেছেন নিজের ছেলে ও শ্যালককে। বলা হচ্ছে চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর কথা। যিনি পর পর তিনবার রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। আর এর মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে নানান অসুদপায় অবলম্বন করে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজেকে পরিণত করেন রেলওয়ের নতুন কালো বিড়ালে।
ফজলে করিম চৌধুরীর উত্থানের পেছনের গল্প
ফজলে করিম চৌধুরী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। এরপর তিনি প্রথমবার বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বার রেলপথ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েও তৃতীয়বারের মতো একই মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন।
একাধারে দশ বছর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দ্বায়িত্বে থাকাকালে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যাবহার করে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে বড় বড় প্রজেক্ট হাতিয়ে নেন এবং বিনা প্রতিযোগিতায় ডিপিএম পদ্ধতিতে যন্ত্রাংশ সরবরাহের নামে করেছেন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। এক্ষেত্রে তিনি সরাসরি ব্যবহার করেছেন তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী ও শ্যালক খান মোহাম্মাদ এহসানকে।
এই খান মোহাম্মদ এহসানের মালিকানাধীন মূল কোম্পানি হচ্ছে NGGL গ্রুপ (Next Generation Graphics Ltd)| NGGL গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের আরো ২টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- (১) Fav Diesel Sales & Service এবং (২) Maximum Support Limited|
হাসিনা সরকারের পতনের পালাতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় ধরা পড়েন ফজলে করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেজিট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) নিবন্ধন অনুসারে রেকর্ড পর্যালোচনা করে জানা যায়, ফারাজ করিম চৌধুরী ও তার মামা এহসানের মালিকানায় ফিফটি ফিটটি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হয় কোম্পানি দুটি। ফারাজ ও তার মামা এহসানের মধ্য হওয়া একটি গোপন ব্যবসায়িক চুক্তির কপিও বাংলা আউটলুকের হাতে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমে ছেলে ফারাজের হম্বিতম্বি
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফারাজ দম্ভ করে বলতেন, তিনি নামে-বেনামে নয়, সরাসরি নিজ নামে DEUTZ Engine Germany এবং IRCON International India- এই দুটি কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবসা করেন। বিদেশি দুই কোম্পানির মাধ্যমে ব্যাবসা করার কথা ঘোষণা করলেও, সুকৌশলে তার ও তার মামার মালিকানাধীন দেশীয় দুটি অংশীদারিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের নাম গোপন রাখেন।
টেলিভিশনে কথা বলেন ফারাজ করিম। ছবি : সংগৃহীত
অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া যায়, ফারাজের বিদেশি প্রতিষ্ঠান Deutz Engine Germany ব্যবহার করে তাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান Fav Diesel Sales & Service এর মাধ্যমে এবং IRCON International India ব্যবহার করে তাদের আরেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান Maximum Support Limited এর মাধ্যমে ফজলে করিম চৌধুরীর সরাসরি প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে ফারাজ ও এহসান ব্যবহার করেন ফজলে করিম চৌধুরীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও সর্বময় শক্তি।
কোম্পানির চুক্তিনামা। ছবি: বাংলা আউটলুক
জানা যায়, ফজলে করিম চৌধুরী সিন্ডিকেট দরপত্র আহ্বান না করে প্রতিযোগিতাহীন ডিপিএম পদ্ধতিতে যন্ত্রাংশের মূল্য কয়েকশ গুণ বাড়িয়ে কাজ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ওপর চালাতেন অত্যাচারের স্টিম-রোলার, দিতেন অমানষিক চাপ এবং অফিসিয়ালি করতেন অপমান-অপদস্ত ও অশ্রাব্য গালাগালি। সংশ্লিষ্ঠ কোনো রেলওয়ে কর্মকর্তা যন্ত্রাংশের প্রাক্কলিত মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করতে রাজি না হলে এবং ডিপিএম পদ্ধতিতে ক্রয় না করে খোলা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ক্রয় করতে চাইলে, তার ওপর নেমে আসত অমানষিক নির্যাতন এবং পড়তেন ব্যাপক সামাজিক হেয় প্রতিপন্নের মুখে। শুধু তাই নয়, এসব রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ডাক পড়তো রেলপথ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এবং স¦য়ং ফজলে করিম চৌধুরী সবার সামনে ও অন্যান্য রেল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেন।
ডিজিটাল ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্টের দুর্নীতি ও পেছনের গল্প
ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়ার ছিল দীর্ঘদিনের অন্যরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা তিনি ব্যবহার করেছেন তার রাজনৈতিক হত্যার মিশনে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে। তারই এক অনন্য উদাহরণ বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানকে ব্ল্যাকমেইলিং করা। মেজর জেনারেল জিয়ার সহযোগিতায় মোবাইল ট্র্যাকিং করে শামসুজ্জামান ও তার ছেলে সাদমান জামানের মধ্যকার আলোচনার কিছু স্পর্শকাতর তথ্য, লন্ডনে থাকা ব্যাংক একাউন্টের তথ্য এবং ইজরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সাদমান জামানের সংযোগ থাকার মতো তথ্য খুঁজে পান ফজলে করিম চৌধুরী। এসব ব্যবহার করে চলতে থাকে মহাপরিচালক শামসুজ্জামানকে ব্ল্যাকমেইলিং, হুমকি-ধামকি ও দুদকের ভয়। আর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ওই সময়ে জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রচারিত করা হয়। পরবর্তীতে চলতে থাকা এই ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিনিময়ে ফজলে করিম আদায় করে নেন ৩৬ কোটি টাকা মূল্যের কার্যাদেশ রেলওয়ের ডিজিটাল ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ। যা উদ্বোধনের দিন থেকে আজ অবদি এক দিনের জন্যও বাংলাদেশ রেলওয়ের কোনো কাজে আসেনি। উদ্ভোধনের পরপর বিগত ২ বছর হতে আজ অবধি অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে এই দুইটি ডিজিটাল ওয়াশিং প্ল্যান্ট। একটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয় ঢাকার কমলাপুরে এবং অন্যটি স্থাপন করা হয় রাজশাহীতে।
ডিজিটাল ওয়াশিং প্ল্যান্টের একটি চিত্র।
বিভিন্ন টিভি নিউজ ও অনুসন্ধানী ভিডিও থেকেও ডিজিটাল ওয়াশিং প্ল্যান্টের দুর্নীতি ও বর্তমান করুণ বেহাল দশার বাস্তব চিত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রামাণ পাওয়া যায় ইউটিউবে কর্নেল হাসিনের গুম হওয়ার ব্যাপারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফজলে করিম চৌধুরী ও জেনারেল জিয়ার ঘনিষ্ঠতা ও যৌথ কুকর্মের বিবরণ।
জানা যায়, এই ডিজিটাল ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি মাত্র ১১ কোটি টাকায় স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে ইতালির কোম্পানির মাধ্যমে দরপত্রের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন রেলওয়ের এক ব্যবসায়ী। ফজলে করিম এবং তৎকালিন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের হুমকি ধামকির কারণে দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী।
যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও প্রকল্পের নামে ফজলে করিম সিন্ডিকেটের ব্যাপক দুর্নীতি
ক্ষমতা প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইলিং, হুমকি ধামকি এবং অপমান অপদস্তের মাধ্যমে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করত ফজলে করিম সিন্ডিকেট। এর মাধ্যমে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বাধ্য করা হতো খোলা দরপত্র আহ্বান ছাড়া সরাসরি ডিপিএম পদ্ধতিতে Fav Diesel Sales & Service প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকশগুণ বেশি মূল্যে Deutz Engine এর যন্ত্রাংশ ক্রয় করতে। ২০১৬ সালে Fav Diesel Sales & Service কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চাঁদাবাজি স্টাইলে প্রতি মাসে ২/৪/৫ কোটি টাকার কাজ নিয়মিতভাবে আদায় করে নিতো। ফারাজ করিমের ব্যক্তিগত আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ছিলো এই ব্যবসাটি। এ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহের ডিপিএম চুক্তিপত্রের বেশকিছু কপি ও সূত্র বাংলা আউটলুকের হাতে এসেছে।
এছাড়াও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে তাদের আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান Maximum Support Limited দিয়ে IRCON International India এর মাধ্যমে ভাগিয়ে নেন রেল সিগনালিং, রেলপথ ও ব্রিজ নির্মাণের শত শত কোটি টাকার বড় বড় প্রকল্প।
ফজলে করিমের মাধ্যমে একদিকে যেমন রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, অন্যদিকে পদ-পদবী লোভি কিছু কর্মকর্তা হয়েছেন পুরস্কৃতও। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মঞ্জুর আলম চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেলওয়ে জাদুঘরের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা এই রেলওয়ে কর্মকর্তা জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন নতুন প্রজন্মকে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ রেলওয়ে জাদুঘরের অবিস¥রণীয় আইডিয়া।
মহাপরিচালক পদ প্রাপ্তির আশায়, তিন বছর ব্যয় করে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন ‘মহানায়ক’ শিরোনামে গান। আবার ৫ আগস্টের পর তিনি জি-সিরিজের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুকের সব জয়গা থেকে গায়ক মিজানের গাওয়া ‘মহানায়ক’ গানটি সরিয়ে নেন।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ডেমুর যন্ত্রাংশ ক্রয়ে, ১০ লোকোমোটিভ ইঞ্জিন ক্রয়ে, করোনা সামগ্রী ক্রয়ে ও অন্যান্য অনেক দুর্নীতির বিষয়ে বারবার অভিযোগ হওয়া এবং দুদকের অনুসন্ধানের পরও তিনি ফজলে করিম ও রেলমন্ত্রীদের দাপটে থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি একাধারে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও নুরুল ইসলাম সুজনের খুবই ঘনিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। এই মঞ্জুর আলম চৌধুরীর সুপারিশে ও হাত ধরে ফজলে করিমের ছেলে ফারাজ করিম ও খান মোহাম্মদ এহসানের মূল প্রতিষ্ঠান Next Generation Graphics Ltd ইন্ডিয়ান কোম্পানি Elixir Engineering এর স্থানীয় প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে নতুন ব্যবসায় নাম লেখান রেলওয়েতে।
ফজলে করিম সিন্ডিকেটের অবাধে মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি
Elixir Engineering India এর প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে লোকোটিভের যন্ত্রাংশ ক্রয়ের বৈদেশিক দরপত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে সূক্ষ্ম জালিয়াতির মাধ্যমে মঞ্জুর আলমের (এডিজি-রোলিং স্টক) সহযোগিতায় দরপত্রের প্রাক্কলিত মূল্য কয়েকগুণ বাড়ান। এর মাধ্যমে সরাসরি বিদেশে মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে ফজলে করিম সিন্ডিকেট আবিষ্কার করে দুর্নীতির এক আশ্চর্যজনক ব্যবসায়িক পদ্ধতি।
এই Elixir Engineering ইন্ডিয়ান কোম্পানির পরিচালক প্রাবীণ কুমারের ইমেইল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২৫ আইটেম সেন্সর ডিবাইস ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার জন্য তাদের উদ্ধৃত সব খরচসহ আসল মূল্য ৭৯ হাজার ৯ মার্কিন ডলার। এই ইমেইলের পরবর্তী দিন দরপত্র খোলার পর দেখা যায়, ফজলে করিম সিন্ডিকেটের যোগসাজশে একই ২৫ আইটেম যন্ত্রাংশ দুই লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ মার্কিন ডলার মূল্য উদ্ধৃত করে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে ইন্ডিয়ান কোম্পানির অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। তারই ধারাবহিকতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে এই দরপত্রের অনুকূলে উক্ত ২৫ আইটেম মালামাল সরবরাহের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে ওই মূল্যেই (২,৮৯,২৫৫ মার্কিন ডলার) কার্যাদেশ পায়। যার কার্যাদেশ নং: P6/GOH/04/2020/14 এবং চুক্তিপত্র নং P6/GOH/04/2020/14/155 তারিখ: ২৩/০৬/২০২২ইং | এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রেলওয়ের পক্ষে সম্পূর্ণ কারসাজি করেছেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন পূর্বক চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মঞ্জুর আলম চৌধুরী।
এই ২৫ আইটেম মালামালের বিষয়ে লক্ষণীয় যে, সেন্সর ডিবাইস যন্ত্রগুলি দরদাতাদের কাছে চিহ্নিতকরণের জন্য অরজিনাল ইক্যুইপমেন্ট মেন্যুফেকচারার (OEM) পার্ট নাম্বার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে দরপত্রে। এ সকল উল্লেখিত পার্ট নাম্বার Medha Servo Drives Private Ltd এর আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রারড পেটেন্টকৃত পার্ট নাম্বার এবং সেন্সর ডিবাইসের জন্য তারা আন্তর্জাতিক অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট মেন্যুফেকচারার।
বাংলা আউটলুকের কাছে আসা প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কর্তৃক ইস্যুকৃত ক্রয় কার্যাদেশে প্রমাণিত হয় যে সম-সাময়িক সময়ে Medha Servo Drives Private Ltd India হুবহু একই ধরনের সেন্সর ডিবাইস যন্ত্রাংশ প্রতি পিস ১০ থেকে ২০ হাজার রুপি (১০০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ) মূল্যে সরবরাহ করেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ঠিক একই ধরনের সেন্সর ডিবাইস যন্ত্রাংশ Elixir Engineering India থেকে তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি Next Generation Graphics Ltd এর মাধ্যমে উপরোক্ত কার্যাদেশের বিপরীতে প্রতি পিস দুই লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার মূল্যে ক্রয় করেছে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের গুরুতর অপচয় হয়েছে।
এদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে এলসি ইস্যু করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিলম্ব হয়। যার ফলে বর্তমানে আংশিক সরবরাহ করে আংশিক পেমেন্ট নিয়েছে বলে প্রামাণ পাওয়া গেছে। এখনও তাদের একই সরবরাহের কাজ চলমান আছে বলে জানা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বশেষ আংশিক সরবরাহের বিপরীতে আরেকটি চূড়ান্ত আংশিক পেমেন্ট করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ সংক্রান্ত সকল কাগজাদি বাংলা আউটলুকের হাতে এসেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে এই অনিয়ম বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় অথের্র অপচয় রোধে যথাযথ সুষ্ঠ ভূমিকা রাখার তাগিদও দেন তারা। আর দুর্নীতিবাজ ফজলে করিম চৌধুরী সিন্ডিকেটের সকল নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে কেনাকাটা বন্ধ করে কালো-তালিকাভুক্ত করার দাবিও জানান তারা।
এদিকে, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী কারাগারে থাকায় এসব অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রেলওয়ের কর্তৃপক্ষেরও কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন