আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ অভিমুখ নদীগুলোয় অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। তারা বলেছেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে ভারত বিভিন্নভাবে সুবিধা ভোগ করে আসছে। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে ভারত বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে দ্বিধা করে না। তারা ৫০ বছর ধরে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছে। এই পানি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শুক্রবার কুমিল্লার টাউনহল মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শরিফ ওসমান হাদির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির দ্বীন মোহাম্মদ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য নিজাম উদ্দিন কায়সার, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেল, ইসলামিক বক্তা মোশতাক ফয়েজি, গবেষক খন্দকার রাকিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক একে জুবায়ের, পরিবেশ বিজ্ঞানী গোলাম আলী সুমন, ছাত্রদল নেতা তেফায়েল আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা বিবির বাজার অভিমুখে লংমার্চ করেন। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে মাঝপথে লংমার্চ যাত্রা শেষ করে।
এর আগে বেলা ১১টায় ১০টি ট্রাকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে ভারতের ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয়। বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদীতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, ভারতের পানি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার। ভারত বাংলাদেশের মানুষের ওপর গুলি করার সময় হিন্দু-মুসলমান দেখে না। আমরা বাংলাদেশের হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের নিয়ে যারা সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলতে চায়, নিজেদের স্বার্থে আপনাদের অপব্যবহার করতে চায়, আপনারা তাদের থেকে দূরে থাকবেন। তাদের কোনো সুযোগ দেবেন না। কারণ, সাম্প্রদায়িকতার বুলি দিলেও ভারতের বুলেট হিন্দু-মুসলমান চিনে না।
তিনি বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। তাদের এ অবৈধ বাঁধ ভেঙে ফেলতে হবে। এগুলো নিয়ে আগে কথা বলা যায়নি। কারণ, বাংলাদেশ আয়নাঘরে বন্দি ছিল। প্রতিবাদ করলে নির্যাতন নেমে আসত। সেই দিন আর নেই। এখন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি। আজ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ স্বাধীনতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কারও কাছে মাথা নত করলে চলবে না।’
ইনকিলাবের সদস্য নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, খুনি-সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে এখন তারা পালিয়ে গেছে। পালিয়ে থাকা খুনিদের ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এদের ক্ষমা করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ভারতের পানি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ইনকিলাবের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের অভ্যন্তরে যত নদী রয়েছে, সব নদী পরিকল্পিতভাবে খনন করতে হবে। তাহলে কেউ ষড়যন্ত্র করলেও লাভ হবে না।
হাসান আহমেদ বলেন, ‘ভারতের পানি আগ্রাসন আমরা মানি না। তাদের এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। কারণ, তাদের বড় পরিচয় হিন্দু নয়, তাদের পরিচয় তারা বাংলাদেশের মানুষ। এ দেশের মাটিতে তাদের জš§। দেশের একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সংখ্যালঘু ধুয়া তুলে সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা করে। এগুলো বাংলাদেশে হতে দেওয়া হবে না। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের পাঁচ দাবি : সমাবেশে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। দাবিগুলো হলো-বাংলাদেশ অভিমুখে সব বাঁধ উচ্ছেদের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে দাবি তুলতে হবে, জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশন ৯৭-এ অতিসত্বর অনুস্বাক্ষর করতে হবে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, আন্তঃসীমান্ত নদীর নতুন তালিকা করতে হবে এবং সীমান্তে সব হত্যার বিচার করতে হবে।
শাহবাগে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল শেষে হাদি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর সংযোগ আছে। তারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে না জানিয়ে এসব নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। আমরা বলতে চাই, ভারত যত বাঁধ নির্মাণ করেছে, তা ভেঙে ফেলতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশ এককভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো দেশকে আয়নাঘর তৈরি করে রেখেছিল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বেলা ১২টায় লংমার্চ প্রথমে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং পরে চান্দিনায় পথসভা করে। এরপর বিকাল ৪টায় কুমিল্লার টাউনহলে বিশাল জনসমাবেশ হয়। সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে বিবির বাজার পৌঁছানোর আগেই তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় স্থানীয় প্রশাসন। পরে সেখানেই লংমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন