প্রশ্ন ১: ৫ জানুয়ারী ১০ম সংসদীয় নির্বাচন হয়ে গেল, শপথ গ্রহনও হলো, এখন এরপর কী? আপনারা কী ভাবছেন? কী কর্মসূচী নিয়ে এগুবেন?
উত্তর ১: দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। যেটা হয়েছে তা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের মানুষ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে রিজেক্ট করেছে। আপনি নিজেই দেখেন যেখানে ১৫৩টা সিটে কেউ পার্টিসিপেট করেনি। কন্টেস্ট করেনি। কেউ আগ্রহীই নয় নির্বাচন করতে। সেখানে শুধু একদলীয় নির্বাচন ১৫৩টা সিটে হয়েছে। কোনো প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, যে ১৪৭টা সিটে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কথা ছিল। সেখানেও দেশের ও বিদেশের মিডিয়া কর্মীরা দেখেছেন, ভোটিং সেন্টারে মানুষই নেই। প্রিজাইডিং অফিসার কোনো কোনো জায়গায় ঘুমাচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় নিজেরাই ভোট দিচ্ছেন। ৪৭-৪৮টা ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দেয়নি। তারপরে অনেক কেন্দ্র বন্ধ। তারপরও যেটা হলো তাতে ৫ শতাংশ ও হবে না।
তো এতে কি হলো? মানুষের এটাই কি রায়? জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন এখানে হয়নি। কাজেই এটাকে কোনো ইলেকশন আমি বলব না। এটা ভাগাভাগির নির্বাচন বলতে পারেন। তারা নিজেরা সিট ভাগাভাগি এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকারের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে। সেরকম একটি নির্বাচন দেখতে চায়। সেই নির্বাচনটা হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। মানুষ এখন আরও পরিষ্কার ৫ জানুয়ারির পরে যে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। এবং নির্বাচন কমিশন যে একটা মেরুদণ্ডহীন বা দলীয় সরকারের মতো কাজ করেছে, এটা একদম পরিষ্কার।
যেখানে ৫ শতাংশও ভোট পড়েনি। সেখানে কেমন করে ৪০ শতাংশ ভোট বলে? এটা একটা নির্লজ্জ মিথ্যা কথা বলছে। এবং এজন্য তার দু’দিন সময় লেগেছে। সব ঠিকঠাক করে, গুছিয়ে কিভাবে বলবে তা ঠিক ঠাক করে। কাজেই এটা পরিষ্কার। এবং জাতি এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রশ্ন ২: আপনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, সংকট নিরসনের জন্য অবশ্যই আলোচনায় যাওয়া প্রয়োজন এবং আপনার দলের সকলেই এই ধারণা পোষন করেন কী না এবং ক্ষমতাসীনরা যেমন বলছেন যে, ১০ম সংসদ নির্বাচনোত্তর পর্বে বিএনপি চাইলে একাদশ সংসদের নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার কথাবার্তা হতে পারে। আপনারা কী যাবেন এ ধরনের প্রেক্ষিতে?
উত্তর ২: দশম নির্বাচনই তো মানুষ রিজেক্ট করেছে। একাদশের কথা পরে হবে। আমরা গণিতান্ত্রিক দল। আমি অনেক আগে থেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা সত্যিকারই গণতন্ত্র চাই। জনগণের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, মানবাধিকার রক্ষার জন্য চাই। শন্তি চাই, উন্নয়ন চাই, দারিদ্র বিমোচন চাই, লেখাপাড়া চাই। তরুণরা এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রশ্ন ৩: জামায়াতের সংগে বিএনপির বিএনপির জোটবদ্ধতা নিতান্তই রাজনৈতিক এবং যে কোন রাজনৈতিক আঁতাতের মত এটিও পরিস্থিতি কৌশলগত অবস্থান এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আপনার মন্তব্য?
উত্তর ৩: জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত বলেন, জোট বলেন বা ঐক্য বলেন তা আওয়ামী লীগই আগে করেছে। এরশাদের আমলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ নির্বাচনে যাব না। তারপর মাঝ রাতে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গেল আওয়ামী লীগ। জামায়াতের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে নিয়ে গেল। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটা আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের। সে জন্য তখন আওয়ামী লীগ অনেক নাশকতা করেছে। আওয়ামী লীগ এখনও জামায়াতের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এই জোট সম্পূর্ণভাবে কৌশলগত।
প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশের সংকট নিরসনে বাইরের, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের বা প্রাচ্যের হস্তক্ষেপ আপনাকে বিব্রত করে কী?
উত্তর ৪: আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এদেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বিদেশীরা আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন। কিন্তু তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করলে মানুষ তা সহ্য করবে না।
প্রশ্ন ৫: সাম্প্রতিক অস্থির পরিস্থিতিত, ব্যবসা-বানিজ্য, গার্মেন্টস শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য অচলাবস্থা, প্রানহানী, সংখ্যালঘু নির্যাতন এসবের দায় কার ওপর বর্তায় বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর ৫: সাম্প্রতিক সময়ে অচলাবস্থা, হত্যা, নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের দায় বর্তায় গভর্নমেন্টের উপর। তাদের একগুঁয়েমি, জেদের ওপর। এই যে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংশের জন্য সম্পূর্নভাবে সরকার দায়ী। এবং দেখছেন সরকারের দলীয় দলীয় লোকজনই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, সন্ত্রাস করেছে সরকারী দলের লোকজন। আপনারা যদি দেখেন, মানুষকে কী ভাবে তারা হত্যা করছে! গুম করছে! বিভিন্নভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। বাসের মধ্যে আগুন তারা, ধরা পড়ছে তারা। কিন্তু সরকার তাদেরকে ধরছে না, তাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছে। দিচ্ছে, গার্মেন্টস এ আগুন দিয়েছে, সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর তারা পোড়াচ্ছে। অতীতেও তারা হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। সংখ্যালঘুদের সবসময় তারা খারাপ আচরণ করছে।
সংখ্যালঘুদের সাথে এখন যা ঘটছে সেটাও তারাই ঘটাচ্ছে। পুলিশের চোখের সামনে এগুলো ঘটলেও তারা কিছু বলছে না। কারণ তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে তাদেরকে না ধরার। এই অশান্তি আমরা চাই না। আমরা চাই শান্তি এবং আমরা মনে করি বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা চাই সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার, সমান মর্যাদা এখানে রয়েছে। এবং সমানভাবে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে। ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে, সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
প্রশ্ন ৬: বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম এই শব্গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন।
উত্তর ৬: অবশ্যই আমরা তো যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কাজেই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যদি বলেন, সেই চেতনা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী? গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, মানবাধিকার, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম থাকবে, স্বাধীন দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ নয়, বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতি এই দেশের জনগনের মাধ্যমে হবে, সেটাই আমরা চাই। এগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত খারাপ। অত্যন্ত ভয়াবহ। দেশে এখন এক দলীয় শাসন চলছে। সারাজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য হত্যা, গুম করছে আওয়ামী লীগ। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধেই নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জেলখানাগুলো বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
dokho jonok
তারারে হালাইয়া পিত
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন