শেখ সাদি
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল না, তা নয়। ছাত্রদল-যুবদলের অনেক কর্মী সমর্থক এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছে, কেউ কেউ জীবনও দিয়েছেন। কিন্তু, এই বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর দলটির আচরণে এক ধরণের রহস্যজনক পরিবর্তন আসে। আক্ষরিক অর্থেই রাস্তার রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে দলটি মহাসমাবেশ ঢাকে, যার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দেয়ালগুলোতে দেখা যায় নতুন শ্লোগান - নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের এক বিষ।
বিএনপি নেতৃত্ব এই দেয়াল লিখন পড়তে ব্যর্থ হন। হাজারের বেশি শহীদের পরিবার আহাজারি করছেন, হাজার হাজার বিপ্লবী চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন, থানা ফেলে পুলিশ পালিয়েছে, বিপ্লবী ছাত্ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, ডাকাত মোকাবেলা করছে – এই রকম একটি দুর্যোগের মধ্যে বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেখা গেল চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বে মত্ত অবস্থায়। এমনকি দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতা দলটির অভ্যন্তরীন লড়াইতে পরিণত হয় এবং তাতে দলীয় নেতারা নিহতও হন।
এরপর যখন হঠাৎ বন্যা এসে দেশের পূর্বাঞ্চল ডুবিয়ে দিলো, দেশের সকল মানুষ সব কিছু ফেলে বন্যার্তদের উদ্ধার এবং সহায়তায় ছুটে গেল, তখনো বিএনপি-র এ ব্যাপারে কোন নড়চড় দেখা গেল না। বিএনপি মহাসচিবকে বন্যার্ত এলাকায় ছুটে যেতে দেখা গেল না। এমনকি আজ পর্যন্ত তিনি কোন শহীদের বাসায় পর্যন্ত যাননি।
জনগণের পালস বুঝতে না পারায় এর আগে দলটিকে কম খেসারত দিতে হয়নি। এখন যখন জনগণ এই নতুন বিপ্লবকে সফল করে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গভীর আকাঙ্খা নিয়ে অপেক্ষা করছে, তখন দলটি কোন এক রহস্যময় কারণে বিপ্লবের সকল উপাদান এবং অ্যাক্টরদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে, জনগণের আশা-আকাঙ্খার দিকে দৃষ্টিপাত না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব জনগণের পালস বুঝতে পারবেন এবং নেতাদের কিংবা দলীয় স্বার্থের উপর দেশের স্বার্থকে স্থান দিবেন। না হলে আম-ছালা সবই হারানো সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন