আমাকে অসাধারণ যত্ন করেন প্রধানমন্ত্রী
28 January 2023, Saturday
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।
এই দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা কীভাবে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন সেই সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সমকালকে জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলে ২৪ জানুয়ারির জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তাঁকে (কাদের সিদ্দিকী) জানিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী তাঁকে (আ ক ম মোজাম্মেল হক) টাঙ্গাইলের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নিয়েই অনুষ্ঠানে এসেছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু।
ওই অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক এবং স্থানীয় এমপিদের জড়িয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে টাঙ্গাইলের ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ফজলুর রহমান খান ফারুককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। পরে কৃষিমন্ত্রী তাঁকে (কাদের সিদ্দিকী) বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তাঁর (আব্দুর রাজ্জাক) অনুমতির প্রয়োজন হবে কেন?
বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম স্পষ্ট বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কিছুতেই রাষ্ট্রীয় পদক পেতে পারেন না ফজলুর রহমান খান ফারুক। কেননা তিনি কখনোই মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। সুতরাং তাঁকে ওই পদক দেওয়াটা সম্পূর্ণ অন্যায়। এটা ভুল হয়েছে। তিনি (কাদের সিদ্দিকী) এটাই বলেছেন। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত স্থানীয় এমপিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে তাঁর সোজা-সাপটা কথা, প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলেই যে যোগ্য হবেন, তার কোনো মানে নেই।
কাদের সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, 'গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আপনি গণভবনে গিয়ে সপরিবারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তা হলে কী আপনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে আসছেন?' এর জবাবে তিনি বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মতপার্থক্য আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। আমার বোন। বোন হিসেবে তিনি আমাকে অসাধারণ যত্ন করেন। আমার ভূমিকায় তিনি সব সময়ই কৃতজ্ঞ। বয়সে তিনি আমার ছোট। কিন্তু তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা। তাই সব সময়ই তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম দিই। সেদিনও দিয়েছি।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের আলাপচারিতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরও বলেছেন, 'আমাদের মধ্যে পারিবারিক আলোচনা হয়েছে। আর দুইজন রাজনীতিবিদ একসঙ্গে বসলে রাজনীতি নিয়ে কথা বলবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল। আমাদের দল ছোট। আমরা কখনোই আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করি না। সুতরাং আওয়ামী লীগ তাদের জোটে আমাদের ডাকলে অবশ্যই কথা বলব। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। তবে সময়ের আগে কোনো কথা বলতে চাই না।'
২৪ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আপনাকে নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে আপনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সম্প্রসারণের ইঙ্গিতও ছিল আ ক ম মোজাম্মেল হকের বক্তব্যে। এটিকে কীভাবে বিশ্নেষণ করবেন? জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, 'মন্ত্রী আমার কোনো প্রশংসা করেননি। তিনি সত্যটাই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, একমাত্র কাদের সিদ্দিকীই রাজধানীর বাইরে অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। কিন্তু আমরা তাঁকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের দূরত্ব নেই। সন্দেহ নেই।'
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি ২১ আগস্ট ভারতে নির্বাসনে যান। কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, 'আমি বঙ্গবন্ধুর ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমি তাঁকে ভালোবাসি। তাঁর সংস্পর্শে এসেই দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি। দীর্ঘ ১৬ বছরের নির্বাসন শেষে আমি ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসি। ওই দিন আমি আমার দেশের পবিত্র মাটিতে পা ফেলিনি। বিমান থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নেমেছি। আর ভারতে নির্বাসনে যাওয়ার দিন থেকেই আমার তীব্র মাথাব্যথা ছিল। অবাক কাণ্ড হলো, প্রিয় স্বদেশে আসার পর থেকে সেই ব্যথা আর কখনোই অনুভব করিনি। এটাই হলো আমার দেশপ্রেম। আমার প্রিয় বাংলাদেশ।'
১৯৯৯ সালের ২৮ আগস্ট আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
সমকাল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন