হাসানুল হক ইনু, এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি। রাষ্ট্রপতির সংলাপ, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর সম্পাদকীয় বিভাগের এহ্্সান মাহমুদ
দেশ রূপান্তর: নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনারা ইতিমধ্যে সংলাপে অংশ নিয়েছেন। এর আগেও ২০১২ এবং ২০১৭-তে সংলাপ হয়েছিল। আগের দুই দফা সংলাপের সঙ্গে এই সংলাপের পার্থক্য কী?
হাসানুল হক ইনু: আগের সংলাপ এবং এবারের সংলাপের উদ্দেশ্য একই। নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্যই মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলসমূহকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই দিক থেকে দেখলে আগের সংলাপের সঙ্গে এবারের সংলাপের পার্থক্য নেই।
দেশ রূপান্তর: রাজনৈতিক দল হিসেবে জাসদের প্রস্তাব কী কী?
হাসানুল হক ইনু: জাসদসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপে ডাকায় আমরা রাষ্ট্রপতিকে সাধুবাদ জানিয়েছি। এই পদ্ধতিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অংশগ্রহণমূলক হবে। একটি দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে রাষ্ট্রপতির সাহায্য হবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় আমরা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। সার্চ কমিটিতে একজন নারী ও একজন অধ্যাপককে রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে একটা আইনি কাঠামো না-থাকায় তুলনামূলকভাবে একটি সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ভালো উদ্যোগ। আমরা আরও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে পাঁচ বছর পরপর যে বিব্রতকর অবস্থা হয় তার স্থায়ী সমাধানের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেন ভূমিকা নেন। ভবিষ্যতে একটি আইনি কাঠামো গ্রহণ করার জন্য তিনি যেন সরকারকে উপযুক্ত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেন।
আমরা বলেছি, সার্চ কমিটি সাংবিধানিক সংস্থা থেকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আমরা সেখানে পরিষ্কার বলেছিআপিল বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের প্রধানসহ সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য। এ জন্য আমরা জাসদের পক্ষ থেকে কোনো নাম প্রস্তাব করাটা সমীচীন মনে করিনি। একজন নারী ও একজন অধ্যাপক বা বুদ্ধিজীবী শ্রেণির একজন যে সার্চ কমিটিতে থাকার কথা, সে ক্ষেত্রেও আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। আমরা মনে করি মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই দুজন মনোনয়ন দেবেন।
যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংবিধানের রক্ষক, সংবিধানের একটি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তিনি ভূমিকা রাখতে পারেন। আইন সংসদই করবে, কিন্তু তাকে আমরা ভূমিকা রাখতে বলেছি। তিনি যাতে সরকারকে পরামর্শ দেন সেটি বলেছি। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে সরকার যাতে উদ্যোগ নেয় সেই এখতিয়ার রাষ্ট্রপতি রাখেন। যেহেতু এতদিন কেউ এই উদ্যোগ নেননি, আমরা মনে করি সব মহলকে বিব্রত হওয়া থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবিষ্যতের জন্য একটি আইনি কাঠানো তৈরি করতে বলতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন যে, তিনি অবিলম্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে কোনো নাম চাইলে সেখানে তিনি আমাদের সহযোগিতা করতে বলেছেন। তবে সার্চ কমিটি যে দুজন করে নাম দেবে তার মধ্য থেকে তিনি চূড়ান্ত করবেন। আমরা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছি, তিনি যাকেই দেন না কেন তিনি যেন ‘ম্যান অব ইনটিগ্রিটি’ হন। কোন পেশা থেকে এলেন, কোন মতের লোক সেটা বড় কথা নয়।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি অবিলম্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে যদি কোনো নাম চায়, তাহলে সেখানে আপনারা সহযোগিতা করবেন। সার্চ কমিটি দুজন করে নাম দেবেন, তার থেকে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবেন। কোন পেশা থেকে এলেন বা কোন মতের লোক, সেটা বড় কথা নয়। যদি সৎ, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য মানুষ হন। নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন উপহার দেবেন।
দেশ রূপান্তর: সংলাপ কতটা সফল হবে বলে মনে করেন?
হাসানুল হক ইনু: সংলাপের যে উদ্দেশ্য, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠন করাসেটি যদি হয়, তবে তো সংলাপকে সফল বলতেই হবে। আমরা বলেছি, সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে একটা আইনি কাঠামো না-থাকায় তুলনামূলকভাবে একটি সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ভালো উদ্যোগ। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কখনো বিতর্ক দেখা দিয়েছে, কখনো দেখা দেয়নি। আমরা সংলাপের মধ্য দিয়ে যতদূর সম্ভব বিতর্কের ঊর্ধ্বে একটি দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গঠন করার রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে সহযোগিতা করা বাঞ্ছনীয় মনে করেছি।
এখন এই সংলাপকে বিএনপির মতো দল নাটক বলছে, প্রহসন বলছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে যারা নাটক বা প্রহসন বলছেন, তাদের উদ্দেশে বলবআপনারা সংলাপে না গিয়ে বুঝবেন কীভাবে, এটা নাটক নাকি ভালো কিছু। সংলাপে না গিয়েই নাটক বা প্রহসন বলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আগে সংলাপে বসেন, তারপর ভালো-খারাপ বলবেন। যারা রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে নাকচ করছেন, তারা সংলাপ প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে চান। নির্বাচন বানচালে তারা সংলাপ প্রক্রিয়াকেও বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন বানচালেও বিএনপি মরিয়া ছিল, এটা দুঃখজনক।
দেশ রূপান্তর: দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি নির্বাচন কমিশন আইন কেন তৈরি হয়নি বলে মনে করেন?
হাসানুল হক ইনু: সংবিধানে নির্বাচন কশিমন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের তাগিদ থাকলেও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আইন প্রণীত না হওয়াটা দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, তুলনামূলক উপযুক্ত ও দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সার্চ কমিটি গঠনই হবে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া।
গত কয়েকটি নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে হয়েছে। কখনো বিতর্ক দেখা দিয়েছে, কখনো বিতর্ক দেখা দেয়নি। সংলাপে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যত দূর সম্ভব একটি দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে সহযোগিতা করা বাঞ্ছনীয় মনে করেছে জাসদ।
দেশ রূপান্তর: বর্তমান সরকার টানা প্রায় ১৩ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। এই সরকারের সঙ্গে জোটভুক্ত দল হিসেবে আপনারাও আছেন। আবার সরাসরি সরকারেও ছিলেন। একটি সরকারে ধারাবাহিকতা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা হয় বলে বিভিন্ন মহলের পক্ষে শোনা যায়। এই দীর্ঘ ১৩ বছরেও একটি নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করা গেল না কেন বলে মনে করেন?
হাসানুল হক ইনু: নির্বাচন কমিশন আইন না থাকাটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে এখন আমি আশাবাদী যে, আগামীতে এই আইনটি হবে। বিগত বছরে এই আইন তৈরি নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি। এখন যেভাবে কথা হচ্ছে, সেভাবে হলে হয়ে যেত বলেই মনে হয়। আগামীতে আইনটি হবে সরকারের পক্ষ থেকেও এই কথা বলা হচ্ছে। তবে এই সরকারের আমলে দেশকে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হয়েছিল। সংবিধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হয়েছে। ১৯৭৫-এর পর দেশ যে অন্ধকারে যাত্রা করেছিল সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নবযাত্রা হয়েছে। এটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
দেশ রূপান্তর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হাসানুল হক ইনু: আপনাকেও ধন্যবাদ।
দেশ রূপান্তর:
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন