দেশের বহুল আলোচিত টাকা পাচার নিয়ে যথার্থ বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মেহনতি মানুষের কারণেই আমাদের এই দেশ টিকে আছে। অতীতে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিরা এ দেশের ধন-সম্পদ লুট করেছে। আর এখন দেশের সম্পদ লুট করছে ধনী তথা দুর্বৃত্তরা। এরাই বিদেশে টাকা পাচার করছে। যেসব শ্রমিক বিদেশের মাটিতে কাজ করেন, যারা গার্মেন্ট শ্রমিক, দিনমজুর এবং গরিব কৃষক, তারাই দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর দুর্নীতি করে সম্পদশালী হওয়া ধনীরা কানাডাসহ উন্নত দেশে সম্পদ পাচার করে দিচ্ছেন।
টাকা পাচার দেশকে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যে নিয়ে যাচ্ছে সে কথাই গত ১০ নভেম্বর ২০২২ ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তুলে ধরেছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত কয়েকটি খবর দেখা যাক : এক. আওয়ামী লীগ করে যারা বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের চিহ্নিত করুন : ওবায়দুল কাদের (প্রথম আলো, ১২ মে ২০২২)। দুই. নাটোরের সরকার দলীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল কানাডায় স্কারবোরো শহরে ১২ কোটি টাকায় একটি বাড়ি কিনেছেন তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির নামে (ডেইলি স্টার ১৯ মে ২০০২)। তিন. ফরিদপুরের দুই আওয়ামী লীগ নেতা (ভ্রাতৃদ্বয়) পাচার করেছে দুই হাজার কোটি টাকা। গ্রেফতারের পর তারা এখন জেলে (ডেইলি স্টার, ১৯ মে ২০২২)। চার. লক্ষীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট এমপি শহিদুল ইসলাম টাকা পাচার ও অন্যান্য অভিযোগে এখন কুয়েতে জেল খাটছেন (ডেইলি স্টার, ১৯ মে ২০২২)। পাঁচ. কানাডায় টাকা পাচার ও বেগম পাড়ায় যে গুঞ্জন তার কিছুটা সত্যতা আমরা পেয়েছি, অন্তত ২৮টি ঘটনা আমাদের হাতে এসেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী (প্রথম আলো, ৭ জুন ২০২১)।
ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির অর্জিত টাকা কীভাবে বিদেশে পাচার করছেন তার কয়েকটি নমুনা এই খবরগুলো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বয়ং নিজ দলের এই দুর্নীতি ও পাচারের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে তাদেরকে চিহ্নিত করার হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে ১৯ অক্টোবর ২০১৯ প্রথম আলোর রিপোর্টের একটি শিরোনাম ছিল- ‘৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে : মেনন’। বরিশালে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও জোটের ঘনিষ্ঠজন রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে লুণ্ঠন ও দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। সরকারের আশপাশের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর চার পাশে দুর্নীতিবাজরা ঘোরাফেরা করে। দুর্নীতিবাজরা ক্যাসিনো পরিচালনা করে। এরা এর দ্বারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, খেলাপি ঋণের টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং এসব টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ পর্যন্ত ৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ প্রকাশ অনুষ্ঠানে (১ নভেম্বর ২০২২) সংস্থায় প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা দুরূহ কাজ। ডলার একবার চলে গেলে সহজে ফেরত আনা যায় না। তিনি জানান, ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে কোনো কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, ১০০ ডলার দিয়ে আমদানি করে সেটি ২০০ ডলার দেখানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করা হচ্ছে, তা কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া চার লাখ কোটি টাকা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ‘দুর্নীতি উন্নয়নে বড় বাধা’ শীর্ষক বিষয়ে লেখেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ হারে অর্থ পাচারকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জিএফআই-এর তথ্যমতে, শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চালান জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ২০০৮-১৫ মেয়াদে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮ দশমিক ২৭৫ বিলিয়ন ডলার। হালনাগাদ (অর্থাৎ ২০০২ সাল পর্র্র্যন্ত) সম্ভব হলে এ প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের বার্ষিক পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। এছাড়াও হুন্ডি এবং অন্য মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে যার গন্তব্য মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’, কানাডার ‘বেগমপাড়া’সহ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এমনকি তথাকথিত অফশোর দ্বীপে বিনিয়োগ ও আবাসন খাতের বিষয়গুলোতে উঠে এসেছে। সম্প্রতি সিআইডি প্রকাশিত প্রবাসী আয় খাতে, মোবাইল আর্থিক লেনদেনে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। দেশের উচ্চ পর্যায়ের এই দুর্নীতি অবারিত বিচারহীনতা উপভোগ করছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ৫১ শতাংশ দুর্নীতির শিকার (প্রথম আলো, ৫ নভেম্বর ২০২২)।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা জিএফআই-এর হিসেবে প্রতি বছর শুধু আমদানি-রফতানি দাম কারসাজি করে গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি টাকা পাচার হচ্ছে। আর টিআইবির হিসাবে প্রতি বছর ১০০০ থেকে ১৫০০ কোটি ডলার পাচার হয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে পায় তার তিনগুণ টাকা পাচার হয় শুধু বাণিজ্য কারসাজিতে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে বাণিজ্য কারসাজির বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও একটি বিশাল অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের প্রধান ও প্রথম কারণ হচ্ছে দুর্নীতি।
ঢাকার অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সঠিক চিত্রই তুলে ধরেছেন। দেশের টাকা যেভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে তাতে এক সময় হয়তো দেখা যাবে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে এসে পড়েছে। দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিদেশে টাকা পাচার স্বাধীনতার পর থেকেই হচ্ছে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছর ধরে টাকা পাচারের যেন হিড়িক পড়ে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাব অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আট লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। জিএফআই এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে আরো দুই লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তাহলে অর্থনীতি সমিতির হিসাব অনুযায়ীই আট ভাগের সাত ভাগ টাকাই পাচার হয়েছে ২০০৯ সালের পর।
টাকা পাচারের বিষয়গুলো প্রকাশ পায় কয়েকটি মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে রয়েছে জিএফআই, সুইস ব্যাংক, ইউএনডিপি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপার থেকে। জিএফআই-এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১৮ পর্যন্ত সময়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা টাকার পরিমাণ আট হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ছিল পাঁচ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এক বছরেই প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ জমা বেড়েছে সুইস ব্যাংকে।
পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে ৮৪ জন বাংলাদেশীর টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে (যুগান্তর ১০ জুন ২০২১)। বাংলাদেশের কারা এই ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখছে? এই টাকা কিভাবে অর্জিত হয়েছে? অবৈধ এই টাকা ফেরত আনা এবং তাদের তালিকা কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? ইতঃপূর্বে দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, তারা এ ব্যাপারে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ কিছু জানে না। সম্প্রতি ডিক্যাব টক-এ অংশ নিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নাথালি শুরা। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুইস রাষ্ট্রদূত জানান, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কারা টাকা রাখছেন সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কিছু জানতে চায়নি। তিনি বলেন, আপনারা সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে জানতে চাইলে তা জানানো হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ নিয়ে সঙ্গত কারণেই সরকারের গরজ থাকার তো কথা নয়!
দুর্নীতিবাজরা বিভিন্ন উপায়ে বিদেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য কারসাজি অর্থাৎ আমদানির মূল্য বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানিতে মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) টাকা পাচার হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। মূলধন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এলসি খোলা হলেও যন্ত্রপাতি দেশে আসছে না। শাসক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতিপরায়ণ নেতারা দলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারসাজি করে এভাবে দুর্নীতির টাকা পাচার করছে। আবার হুন্ডির মাধ্যমেও বিপুল টাকা পাচার হচ্ছে যার কোনো হিসাব নেই। মানি এক্সচেঞ্জগুলো ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট। এগুলো বেশির ভাগ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও মোবাইলে আর্থিক লেনদেন জালিয়াতির মাধ্যমে হচ্ছে টাকা পাচার।
একা পি কে হালদারই দেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকারো বেশি পাচার করেছেন। এই টাকার বেশির ভাগই পাচার হয়েছে ভারতে। বাকি টাকা কানাডায়। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এই বিপুল সম্পদের মালিক হন পি কে হালদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এবং নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে নামে বেনামে অনেক কোম্পানি বানিয়ে এর নামে ঋণ নিয়ে মেরে দিয়ে এত টাকার মালিক বনে যান পি কে হালদার। তবে অনেকেরই ধারণা, এর সঙ্গে শাসক দলের অনেক রাঘব বোয়ালও জড়িত। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে পি কে হালদার এত টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন না। কমিশন বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা নিশ্চয় গেছে নেপথ্যের ওইসব রাঘব বোয়ালের পকেটে। পি কে হালদারের ১০ হাজার কোটি টাকার পাচারের ঘটনার প্রেক্ষিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিতের একটি উক্তির কথা মনে পড়ে গেল। সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকার হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর তিনি বলেছিলেন, চার হাজার কোটি টাকা কিছুই নয়। বছরে চার লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয় (বিবিসি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২)। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, ১০ হাজার টাকাও তো কিছু নয়। তেমনি ই-ভ্যালি, আনন্দ বাজার, ই-অরেঞ্জ ইত্যাদি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এর সঙ্গে ওইসব দুর্নীতিবাজরাই জড়িত।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে টাকা পাচারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাব দেন ‘কারা টাকা পাচার করে আমি জানি না।’ তিনি উল্টো টাকা পাচারকারীদের তথ্য বিরোধী দলের সদস্যদের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে মজা করে লিখেছেন, সাংবাদিক সহকর্মী শওকত হোসেন মাসুম, ‘তোমরা যারা টাকা পাচার করো’ শিরোনামে (প্রথম আলো ২৮ নভেম্বর ২০২১)। তিনি লিখেন, টাকা পাচারকারীদের জন্য সুখবর। আপনারা মহা আনন্দে টাকা পাচার করে যান। কারণ আপনাদের নাম অর্থমন্ত্রী জানেন না। অর্থমন্ত্রী টাকা পাচারকারীর তথ্য জানতে চেয়েছেন বিরোধী দলের সদস্যদের কাছে। ভাগ্যিস, তিনি নিজ দলের সদস্যদের কাছে জানতে চাননি। যেমন নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ওরফে শিমুল। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তিনি কানাডার স্কারবোরো শহরে স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির নামে ১২ কোটি টাকার বাড়ি কিনেছেন। শামীমা সুলতানার নিজস্ব আয়ের কোনো উৎস নেই। তেমনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম। অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে তিনি এখন কুয়েতে জেল খাটছেন। অতীতে কারা তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাকে এবং তার স্ত্রীকে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন? সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য আছেন, যাদের কানাডা সফরের সংবাদ একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। চোখ কান খোলা থাকলে অর্ধমন্ত্রী সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বাংলাদেশের ব্যবসায়ীর একাধিক পাঁচতারা হোটেল কিনে নেয়ার সংবাদটি জানতেন। তেমনি ব্যাংককে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর বিশাল বাড়ি ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার কথা জানতেন যা ব্যাংক পাড়ায় খুব কম মানুষই আছেন যারা জানেন না। টাকা পাচারকারী এ রকম অনেকেই আছেন যাদের তথ্য ওপেন-সিক্রেট। সুতরাং যারা টাকা পাচার করেন, আনন্দেই থাকেন। আপনাদের নাম জানার চেষ্টা কেউ করছে না।
ডেইলি স্টারে সাংবাদিক সহকর্মী গোলাম মোর্তজাও অনেকটা কৌতুক করেই লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন টাকা রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। পি কে হালদার একাই আত্মসাৎ করেছেন ১০-১১ হাজার কোটি টাকা।’ দেদার বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আর কানাডায় গড়ে উঠেছে বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম। দুবাই এমন একটি জায়গা যেখানে টাকার উৎস জানতে চাওয়া হয় না। হুন্ডির টাকা সেখানে গেলে বৈধ হয়ে যায়। সুতরাং টাকা পাচারকারীরা আনন্দেই থাকুন!
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন