|
ইকতেদার আহমেদ
|
|
সংবিধানের সীমাবদ্ধতা
18 July 2023, Tuesday
বাংলাদেশের সংবিধান ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে কার্যকর হয়। সংবিধান কার্যকর পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা দেশ পরিচালিত হতো। এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংবিধানে ১৬টি সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে। এ সংশোধনীসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চতুর্থ সংশোধনী। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে গণতন্ত্রের ভিতমূলে আঘাত আসে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের রীতিনীতি ও চিন্তাচেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী প্রণয়ন পূর্ববর্তী দেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বলবৎ ছিল। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি আলঙ্কারিক প্রধান ছিলেন এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত ছিল।
’৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আলঙ্কারিক প্রধান হলেও তার মেয়াদ অবসানে উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকতেন। চতুর্থ সংশোধনী দ্বারা সংসদীয় সরকারব্যবস্থা হতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করা হলেও রাষ্ট্রপতির উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তার স্বপদে বহাল থাকার বিধান অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
’৭২-এর সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ বিষয়ে বলা ছিল প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে এতদসংক্রান্ত অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করবে না। পরবর্তীতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ সাধন করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির অনুরূপ তার স্বপদে বহাল থাকার বিধান অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল যে, সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে যে সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ বিষয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিধান করা হয় তাতে বলা ছিল রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনায় সংসদ সদস্যগণের মধ্য হতে কিংবা সংসদ সদস্য হবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হতে একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। অতঃপর ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা হয়।
’৭২-এর সংবিধানে মন্ত্রীদের বিষয়ে বলা ছিল সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় যেকোনো সময় কোনো মন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে ৫৮ অনুচ্ছেদের (১) দফার (ক), (খ) ও (ঘ) উপ-দফার কোনো কিছুই অযোগ্য করবে না। একই অনুচ্ছেদের ৪ দফায় বলা ছিল তাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন। অতঃপর চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ বিধানটির অবসান ঘটানো হলেও পরবর্তীতে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি পুনঃপ্রবর্তিত হয় যা অব্যাহত আছে।
রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়া বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। অতঃপর চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হয় রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন এবং উভয় পদ শূন্য হলে স্পিকার সে দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিধানটি সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল এবং দ্বাদশ সংশোধনী আনয়ন পরবর্তী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়া বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানের বিধান পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কেনো কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে কে তার দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধান যেমন নিশ্চুপ ঠিক তেমন চতুর্থ ও দ্বাদশ সংশোধনী দ্বারা যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সংসদীয় সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হলেও এ বিষয়ে কোনো বিধান করা হয়নি। এটি সংবিধানের এক ধরনের সীমাবদ্ধতা। রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ক্ষেত্রে এ সীমাবদ্ধতা নেই।
স্পিকারের পদ শূন্য হওয়া বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল স্পিকারের পদ শূন্য হলে বা তিনি রাষ্ট্রপতিরূপে কার্য করলে কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে সংসদ নির্ধারণ করলে স্পিকারের সব দায়িত্ব ডেপুটি স্পিকার পালন করবেন, কিংবা ডেপুটি স্পিকারের পদও শূন্য হলে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য তা পালন করবেন; এবং সংসদের কোনো বৈঠকে স্পিকারের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার কিংবা ডেপুটি স্পিকারো অনুপস্থিত থাকলে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন।
সংবিধানের এ বিধানটিতে শুধু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনরত থাকলে’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রপতিরূপে কার্য করলে’ শব্দগুলোর প্রতিস্থাপন ব্যতীত অপরাপর সবকিছু ’৭২-এর সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত ছিল সেভাবে অক্ষুণ্ণ আছে।
প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হওয়া বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।
সংবিধানের এ বিধানটি ’৭২-এর সংবিধানে যেরূপে বর্ণিত ছিল অদ্যাবধি কোনো ধরনের সংশোধনী দ্বারা এ বিধানটির কোনোরূপ সংযোজন, বিয়োজন বা প্রতিস্থাপন না হওয়ায় তা পূর্বের ন্যায় অক্ষুণ্ণ আছে।
মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের পদ শূন্য হওয়া বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি কার্যভার পালনে অক্ষম বলে রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলেও ক্ষেত্রমতো সংবিধানের ১২৭ অনুচ্ছেদের অধীন কোনো নিয়োগদান না করা পর্যন্ত কিংবা মহাহিসাব-নিরীক্ষক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তিকে মহাহিসাব-নিরীক্ষকরূপে কার্য করার জন্য এবং উক্ত পদে দায়িত্বভার পালনের জন্য নিয়োগদান করতে পারবেন।
সংবিধানের এ বিধানটিও অদ্যাবধি কোনো ধরনের সংশোধনী দ্বারা পরিবর্তিত না হওয়ায় এটি সংবিধান প্রণয়নকালে যেরূপ ছিল বর্তমানেও সেরূপে অক্ষুণ্ণ আছে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও মহা হিসাব-নিরীক্ষকের পদের ন্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদও সাংবিধানিক পদ। শেষোক্ত তিনটি পদে পদধারীদের অনুপস্থিতিতে কে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের ন্যায় তাদের ক্ষেত্রেও সংবিধান নিশ্চুপ।
সংবিধানে যদিও সংসদের মেয়াদ বিষয়ে বলা আছে যে, রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে কিন্তু চতুর্থ সংশোধনী প্রবর্তন পরবর্তী বলা হয়েছিল এ আইন প্রবর্তন হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে।
অনুরূপভাবে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনী পরবর্তী সংবিধানে বলা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবেন এবং রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করবেন এবং উক্ত প্রবর্তন হতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন যেন তিনি এ আইনের দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
’৭২-এর সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। চতুর্থ সংশোধনী দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয় যা দ্বাদশ সংশোধনী প্রবর্তন অবধি অব্যাহত থাকে। দ্বাদশ সংশোধনী প্রবর্তন পরবর্তী ’৭২-এর সংবিধানের ন্যায় পুনঃসংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় বিদেশ সফরে থাকাকালীন বা যেকোনো ধরনের অসুস্থতাজনিত কারণে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব কে পালন করবেন সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া না থাকায় সংশ্লিষ্ট পদধারীকে দায়িত্বভার অর্পণ না করে বিদেশে অবস্থানজনিত কারণে বা অসুস্থতাজনিত কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। আবার কখনো দেখা গেছে এমন একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যিনি সংশ্লিষ্ট পদধারীর অব্যবহিত পরবর্তী জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা নন। সাংবিধানিক কতিপয় পদধারীদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া না থাকলে তা যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও অনুভিপ্রেত পরিস্থিতি জন্ম দিতে পারে। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রের সংবিধানে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা নেই।
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ সফরকালীন ও অসুস্থতাজনিত কারণে অসংখ্যবার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কখনো অপর কাউকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার সাময়িক সময়ের জন্য অর্পণ করেননি। এ ক্ষেত্রে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ সফরকালে একবার তৎকালীন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজকে দায়িত্বভার অর্পণ করেছিলেন। এটি সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত না হলেও প্রধানমন্ত্রীর এ উদারতা সে সময় সব মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিল। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার অর্পণের নজির না থাকলেও একাধিকবার দলীয় সভানেত্রীর দায়িত্বভার সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে দিতে দেখা গেছে। যেহেতু প্রথমোক্ত বিষয়ে একবার একজন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী) নজির সৃষ্টি করেছেন সেহেতু সে নজিরটিকে সাংবিধানিক রূপ দিয়ে অনিশ্চশয়তা দূর করতে বাধা কোথায়?
বিদেশ সফর, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে স্পিকার তার দায়িত্ব পালন করবেন এ বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও অতীতে দেখা গেছে একাধিক রাষ্ট্রপতি বিষয়টিকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করেছেন। এটি সঙ্কীর্ণ মনোবৃত্তির পরিচায়ক যা দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক এবং অনভিপ্রেত।
রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে সাংবিধানিকভাবে স্পিকার তার দায়িত্ব পালন করার কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তার স্বপদে বহাল থাকা বাস্তবসম্মত প্রতীয়মান হয় না। অনুরূপভাবে যদিও সংবিধানে বলা আছে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাময়িক অনুপস্থিতির ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাময়িক অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হলে অনুধাবন করা যায় জটিলতা পরিহার অনেকাংশে সম্ভব। আমাদের দীর্ঘ সাংবিধানিক পদযাত্রার ৫০ বছরের বিভিন্ন সময়ে সন্নিবেশন, প্রতিস্থাপন ও বিয়োজনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে জনআকাক্সক্ষার পরিবর্তে সঙ্কীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এ কারণে সংবিধানের মূল চেতনা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত। সংবিধানের সংশোধনী একটু জটিল বিধায় সবসময় সব সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও সংশোধনী আনয়ন সম্ভব হয় না। কিন্তু যেকোনো সংশোধনীর ক্ষেত্রে নিজ দলীয় ইচ্ছা হতে জনআকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হলে সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ সহায়ক মর্মে বিবেচিত হয়। অতীতে দেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল একাধিকবার সংবিধানে সংশোধনী আনয়নের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে কাজে লাগাতে কখনো উদ্যোগী হয়নি। আর এ কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায় এ ধরনের সীমাবদ্ধতা শুধু অনিশ্চিত পথযাত্রায় স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দেয়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন