৮ থেকে ২৬ আগস্ট, সময়ের ব্যাপ্তি দুই সপ্তাহের কিছু বেশি। এর মধ্যেই বিপ্লবোত্তর সরকার গঠন হয়েছে। নতুন সরকার কাঠামোগত অবয়ব পেয়েছে। এ সময়ে একটি সরকার কতটুকু কী করতে পারে? সামরিক বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। প্রশাসনের বিরাজনীতিকরণের পদক্ষেপও শুরু হয়েছে। স্বৈরশাসনের বিদায় ছোবলের নজিরবিহীন ক্ষতের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশ। যারা স্বৈরাচারের বিদায়োত্তর শাসনের ব্যর্থতা দেখতে চেয়েছিল তারা অস্থিরতাকে নানাভাবে উসকে দিতে চেয়েছে। নানা দাবি-উপদাবি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এমন অস্থিরতা ও হতাশা তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে যাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করতে না পারে। এর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য অনেক অর্জন স্পষ্ট। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাতির উদ্দেশে অনন্য এক ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকার কী করবে তার একটি রূপরেখা দিয়েছেন। কোনো অস্পষ্টতা না রেখে তিনি সরকার কতদিন থাকবে কী দায়িত্ব পালন করবে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করবে, দাবি-দাওয়া নিয়ে কতদূর যেতে হবে তার সবকিছু খোলাসা করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরও জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিতে প্রধান উপদেষ্টা কেন কিছুটা সময় নিয়েছেন তাও স্পষ্ট হয়েছে এই ভাষণে। তিনি সমস্যার গভীরে যেতে চান, সমাধান করতে চান এর কাঠামো থেকে।
বিপত্তি থেকে শক্তি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই এলো প্রলয়ঙ্করী বন্যা। বলা যায় হঠাৎই। ভারী বর্ষণ হয়েছে, তবে তা এমন নয় যে স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙা বন্যা হবে নোয়াখালী, ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলে। ফেনী নদী ও গুমতি নদীর উজানে ডুম্বুল ও কলসি বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত। অনিবার্য প্রয়োজনে উজানের দেশ বাঁধ খুলে দিতে পারে। তবে তার আগে ভাটির দেশকে সতর্ক করতে হয়। সেটির প্রয়োজন মনে করেনি প্রতিবেশী দেশটি। বাংলাদেশের মানুষকে বিপত্তিতে ফেলে শিশু বয়সের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরীক্ষায় ফেলতে চেয়েছে হয়তো। অথবা চেয়ে থাকতে পারে অন্য কোনো পরিবর্তনের প্রেক্ষিত তৈরি করতে।
কিন্তু বৈরিতা থেকে শক্তি অর্জন করতে শিখেছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধারে নেমে পড়েছে। বিপ্লবের পরপরই গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে পতিত সরকার অরাজকতা তৈরি করতে চেয়েছিল, ছয়টি জেলাকে আলাদা করার কথাও বলা হয়েছিল। সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে সে চিন্তা ভাবনার জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছে।
এরপর সরকারের সপ্তাহকাল যেতে না যেতেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং গোষ্ঠীগত নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামা, অবরোধ করা এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বাসা ঘেরাও আর সবশেষে সচিবালয় অচল করার চেষ্টা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পবিত্র স্থান মুসলিম এবং ইসলামিক দলগুলো পাহারা দিয়েছে, কারা এসব ঘটনা ঘটিয়ে রাষ্ট্রকে অস্থির করতে চাইছে তা নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থান থেকে সবার জন্য সুরক্ষার বার্তা ও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেই বিপত্তি অনেকখানি কেটে গেছে।
আনসারদের নানা দাবিতে অব্যাহতভাবে আগ্রাসী হয়ে ওঠার পরও সরকার ধৈর্য ধরেছে। সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে দিয়ে দাবি পূরণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কের ওপর হামলার পর স্পষ্ট হয়ে যায় সরকার অচল করে দেয়ার জন্য এর পেছনে প্রতিবিপ্লবী কোনো উদ্দেশ্য সক্রিয় রয়েছে। ছাত্ররা সেটিকে অগ্রসর হতে দেয়নি। ছাত্রদের ৭ মিনিটের অভিযানে বিপত্তি কেটে গেছে।
বিপদ-বিপত্তি যে শক্তি অর্জনের হাতিয়ার হতে পারে সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তুরস্ক। দেশটি নানা দেশী-বিদেশী সঙ্কটে বিপর্যস্ত অবস্থায় দেশের ১০টি জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় হয় নিকট ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প। অনেকে এর পেছনে মানুষের কারসাজিও দেখেছেন। বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে এরদোগান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য পরমাণু শক্তি প্রয়োগ করে টেকনোপ্লেটে বিপত্তি ঘটানো হয়েছে। দেশটির সরকার সে কথায় মন দেয়নি। দুর্গতদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে অভূতপূর্ব এক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে সরকার। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবেলার সব প্রশ্নের জবাব দেয় দুর্গতদের সার্ভিস দেয়ার মাধ্যমে। সরকারকে যারা ব্যর্থ দেখতে চেয়েছিল তারাও অবাক হয় পুনর্বাসনে সাফল্য দেখে। শেষ পর্যন্ত ভূমিকম্পই একেপি সরকারের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার উপলক্ষ হয়ে ওঠে।
প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরকার রয়েছে আম আদমি পার্টির। তুলনামূলকভাবে একেবারে নতুন একটি দল। জনগণকে সেবা দিয়েই দলটি বিজেপি সরকারের কেন্দ্রস্থলে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেছে। একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পাঞ্জাবেও সরকার গঠন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অন্য নেতাদের মামলার জটে ফেলেও বিজেপি একটা খুব সুবিধা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, আবাসন সুবিধা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করে সাফল্য পেয়েছে দলটি।
আরেকটু দূরে আফগানিস্তানে তালেবানের তিন বছরের কিছু সাফল্যও লক্ষ করার মতো। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটিতে ক্ষমতায় আসার পর এখনো সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি কোনো দেশই । কিছু দেশ তালেবান সরকারের সাথে কাজ করছে। তবে যে দেশের ৭৫ শতাংশ বাজেটের অর্থ বিদেশী সাহায্য থেকে আসত সে দেশে বাইরের সহায়তা শূন্যের কোটায় পৌঁছার পরও নিরাপত্তা, সততা ও সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সেবার মাধ্যমে জনসমর্থন জয় করে রাখতে পেরেছে তালেবান। নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তারা। বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও অর্থনীতিতে ১.৩ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখা আফিম চাষ তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তালেবানের শাসনপদ্ধতি অনেকে অপছন্দ করবেন। কিন্তু বৈরী একটি পরিবেশে তারা চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অনিয়মের রাশ টেনে অনন্য সাফল্য পেয়েছে। উপমহাদেশে অন্য সব দেশের তুলনায় দেশটির জাতীয় মুদ্রা আফগানি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী জাতীয় মুদ্রা।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দুই সপ্তাহের মাথায় প্রলয়ঙ্করী বন্যা মোকাবেলায় অনন্য এক জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দুর্গতদের সাহায্যে যার যা আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসছে মানুষ। এই উদ্ধার প্রচেষ্টার সাথে সরকার ও জনগণের মধ্যে সমন্বয় এই বিপত্তি কাটাতে সাহায্য করবে তা নয় একই সাথে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগগুলো সামনে এগিয়ে নিতেও সহায়তা করবে।
কী করবে সরকার?
সরকার কী করবে তার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে। তিনি বলেছেন, ‘গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে, সেজন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।’
সরকার যে দেশের সঙ্কটকে একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রচেষ্টা শুরু করেছে তাও স্পষ্ট হয় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন এক দেশে রূপান্তর হয়েছে যেখানে স্বৈরাচারের পিয়নও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করে গেছে নির্বিবাদে। শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজার খাতে লুটপাট, প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্বরেকর্ড, অবাধ সম্পদ পাচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ- এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র।’
এর সমাধানের পথও তিনি নির্দেশ করে বলেছেন, ‘ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করে দ্রুত প্রকাশ করা হবে। শেয়ারবাজার, পরিবহন খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ ও আয়নাঘরের মতো চরম ঘৃণ্য অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবকে গুম-নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদের কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাই না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারো হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনো বাহিনীর, পুলিশের, র্যাবের কোনো সদস্য হত্যাকাণ্ড, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হওয়ার সাহস না করে।’
এই কাজে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটি আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আমরা অবশ্যই করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে কাজে বাধা দেবেন না।’
মুক্তিকামীরা কী করবেন?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র মেরামতের যে রূপরেখা দিয়েছে তা কি রাতারাতি করা সম্ভব? এর জবাব, না। এ জন্য সময় লাগবে, কতটা সময় লাগবে সেটি কার্যধারাই বলে দেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়াই সপ্তাহ বলে দেয়, উপদেষ্টারা সময় নষ্ট করার জন্য দায়িত্ব নেননি। ব্যাংক থেকে লক্ষকোটি টাকা লুট করা হয়েছে। যাদের টাকা লুট হয়েছে তাদের কমবেশি ভোগ করতে হবে ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত। এ জন্য শ্বেতপত্র প্রকাশ করে লুটপাটের চিত্র প্রকাশের কথা বলা হয়েছে। ১৫ বছর ধরে লুটেরা ও কর্তৃত্ববাদিতার কায়েমি স্বার্থ আদায়ে যে প্রশাসন তৈরি করা হয়েছে তা কয়েক দিনে পেশাদার প্রশাসনে রূপান্তর করা যাবে না। বেসামরিক বা নিরাপত্তা যে প্রশাসনই হিসাব করি না কেন, এর নেতৃস্থানীয় অংশকে দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন চালানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিত্বের যে ব্যবস্থা সেটিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসবের প্রতিকার রাতারাতি সম্ভব নয়।
এ জন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তবে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বুঝে না বুঝে পতিত রাজনৈতিক শক্তি ও আধিপত্যবাদী বিদেশী শক্তির অস্থিরতা তৈরির হাতিয়ার হলে দেশ মুক্তি পাবে না। এ জন্য ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রয়োজন। তিন মাস বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানানো অথবা উপদেষ্টাদের কারো কারো বিষয়ে সংশয় ছড়ানো, যে কাজের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন করা হয়েছে সেটিকে দুর্বল করবে। রাষ্ট্রব্যবস্থার মেরামত করে একটি বৈষম্যহীন কাঠামো তৈরির কাজ কোনো রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে এ সময়ে করা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রের মুক্তির পক্ষের শক্তি ভাবতে পারলে সেটি কল্যাণকর হবে। এই সরকার অন্যায়ের প্রতিকারে কাজ করবে, এতে যাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে তারা লাভবান হবে। কিন্তু এক স্বৈরাচারের প্রতিস্থাপন একই ধরনের আরেকটি দিয়ে হলে রাষ্ট্রের বা জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। রাষ্ট্রের সংস্কার ছাড়া দ্রুত নির্বাচনে গেলে সেই আশঙ্কা থেকে যাবে।
এই মৌলিক বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আর অন্তর্বর্তী এ সময়টিতে নতুন রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার জন্য রাজনৈতিক শক্তিকে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। রাজনৈতিক শক্তির প্রত্যক্ষ আন্দোলনে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেনি। কর্তৃত্ববাদিতার জগদ্দল পাথর সরিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা অনন্য আত্মত্যাগ ও রক্ত দিয়ে। বিপ্লবের পর তারা দায়িত্ব শেষ বলে ঘরে বা পড়ার টেবিলে ফিরে যায়নি। তারা বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে না দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাগ্রত ভূমিকায় রয়েছে বলে মনে হয়। স্বৈরশাসনের সুবিধাভোগীদের প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা ব্যর্থ করে দেয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে সে ভূমিকা জনগণ দেখছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা মেরামতের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে। ‘গণ-অভ্যুত্থান সুরক্ষা ব্রিগেড’ গঠনের আহ্বানও কেউ কেউ করেছেন। নাম যাই হোক কাজটি অব্যাহত রাখতে হবে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন