মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এমনও বলা হয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো বড় যুদ্ধে পরাশক্তিগুলো যুক্ত হবে এবং এর অনিবার্য পরিণতি হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই লড়াই কার্যত শুরু হয়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে পরাশক্তির প্রত্যক্ষ মেরুকরণ ঘটেছে। গাজা যুদ্ধের প্রভাব পৃথিবীর হৃৎপিণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছে। যাই হোক, গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি থেকে বিষয়টি দেখা যেতে পারে।
নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফর ও যুদ্ধ উত্তেজনা
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ক’দিন আগে আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। সফরকালে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছাড়াও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের সাথে কথা বলেছেন। এরপর ইসরাইলের চ্যানেল১৪ জানিয়েছে, নেতানিয়াহু লেবাননে আক্রমণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন এবং তেলআবিব ফিরেই আইডিএফকে প্রস্তুত করবেন হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণের জন্য। নেতানিয়াহু এও বলেছিলেন যে, এই যুদ্ধে তিনি কিছু আরব দেশকে পাশে পাবেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর নিজের প্রক্সি দিয়ে গোলান হাইটসে দ্রুজদের ওপর হামলা করে সে দায় হিজবুল্লাহর ওপর চাপিয়ে যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছেন।
ইসরাইল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে মাজদাল শামসের দ্রুজ সম্প্রদায় শনিবার রকেট হামলায় নিহত ১২ জনের জানাজায় অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের উপস্থিতির প্রতিবাদ করেছে। ইসরাইল একটি ফুটবল মাঠে হামলার সাথে লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রুপকে যুক্ত করেছে, যারা দায় অস্বীকার করেছে। একজন প্রতিবাদকারী ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী স্মোট্রিচের দিকে চিৎকার করে বলে, ‘এখান থেকে চলে যাও, অপরাধী। আমরা তোমাকে গোলানে চাই না।’ পরিবেশ সুরক্ষামন্ত্রী ইদিত সিলমান, অর্থমন্ত্রী নীর বরকত এবং জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেনও ক্ষোভের মুখে পড়েন।
ইসরাইল যে এটিকে যুদ্ধ শুরুর বাহানা করতে চাইছে তাতে সন্দেহ নেই। এই উত্তেজনার মধ্যেই বৈরুত বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত করা হচ্ছে। এয়ার ফ্রান্স ২৯ এবং ৩০ জুলাই প্যারিস ও বৈরুতের মধ্যে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। লুফথানসা গ্রুপের বিমান সংস্থাগুলো ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈরুত থেকে তাদের ফ্লাইট স্থগিত করেছে। তুর্কিয়েভিত্তিক বাজেট ক্যারিয়ার সানএক্সপ্রেস, তুর্কি এয়ারলাইন্সের সহযোগী সংস্থা এজেট, গ্রিক ক্যারিয়ার এজিয়ান এয়ারলাইনস, ইথিওপিয়ান এয়ার এবং এমইএ সোমবার বৈরুতে অবতরণের নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে।
হিজবুল্লাহ হামলার দায় অস্বীকার করলেও রোববার ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সরকারকে কথিত হামলার পাল্টা আঘাত হানার অনুমোদন দিয়েছে। সেই আলোকে প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটি ঘটনা
উত্তেজনার এই সময়ের আরো কয়েকটি ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। সৌদি আরবের আমেরিকান ঘাঁটি থেকে ইসরাইলের দুই ডজন বিমান ক’দিন আগে ইয়েমেনে হুথি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। হুথিরা এর প্রতিশোধ নেবার হুমকি দিলে রিয়াদ তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে রফা করেছে। আর ইসরাইল আশা প্রকাশ করছে, শিগগিরই সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের সরঞ্জাম কেনার চুক্তি করেছে। এসব উপকরণ তৈরি করবে ইসরাইলি ও মার্কিন কোম্পানি।
আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান ফিলিস্তিনিদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলার আলোকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তুর্কি সামরিক হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। গত রোববার নিজ শহর রিজে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সদস্যদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, আমরা যদি শক্তিশালী হই, ইসরাইল এখন ফিলিস্তিনে যা করছে তা করতে পারবে না। আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে।
এরদোগান ইসরাইলকে থামাতে তুরস্কের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আঙ্কারা ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে তুরস্কে আমন্ত্রণ নিয়েও কথা বলেন। তুরস্কের একজন বিরোধী আইনপ্রণেতা তুরস্কের সংসদে বক্তৃতা দেয়ার জন্য মাহমুদ আব্বাসকে আমন্ত্রণ জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, যেমনটি মার্কিন কংগ্রেসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু করেছিলেন। এরদোগান জানান, দুর্ভাগ্যবশত আব্বাস সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি।
ফিলিস্তিন নিয়ে দুই উদ্যোগ
ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুটি উদ্যোগ এখন সক্রিয়। একটি ইসরাইল সমর্থনপুষ্ট। অন্যটি চীনের, যার প্রতি রাশিয়া ইরান তুরস্ক ও কাতারের সমর্থন রয়েছে বলে মনে হয়। শেষোক্তটিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটিতে যুদ্ধোত্তর গাজার প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রথম উদ্যোগের অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনি নেতাদের এবং ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বদের একটি জাতীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে যেটি যুদ্ধ শেষে গাজা পরিচালনা করবে। জাতীয় কমিটি সব ফিলিস্তিনি উপদলের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু বাস্তবে, এর সব সদস্য নির্বাসিত সাবেক ফাতাহ নেতা এবং ফিলিস্তিনের শক্তিশালী নেতা মোহাম্মদ দাহলানের প্রতি অনুগত থাকবেন। দাহলানকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উত্তরসূরি হিসেবে বসানো হতে পারে।
প্রতিবেশী মিসর ও জর্দানসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো পরিকল্পনাটি গ্রহণ করার জন্য ৮৮ বছর বয়সি আব্বাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর কমিটির প্রথম কাজগুলোর অন্যতম হবে আরব এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সৈন্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী প্রবেশের অনুমোদন দেয়া। এই প্রস্তাবটি আমিরাতের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনৈতিকবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী লানা নুসিবেহ ১০ দিন আগে দিয়েছিলেন। হামাসকে বাদ দিয়েই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে মনে হয়।
নুসিবেহ গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শক্তির ধারণা প্রকাশের কয়েক দিন পর, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছিলেন, দুই রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে চুক্তি হলে আঙ্কারা তাতে যোগ দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু ইসরাইল এ বিষয়ে ইতিবাচক কিছু বলেনি। ইসরাইল এখনো একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি, যদিও হামাস ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামাস অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপদল এবং গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক মসৃণ করার জন্য কাজ করলেও, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে জাতীয় ঐক্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে। ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (ফাতাহ) এবং ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস)-এর মধ্যে এই চুক্তি পশ্চিমা এবং আরব মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সৌদি আরবের আল আরাবিয়া টিভি চীনের কূটনৈতিক পদক্ষেপকে ‘উল্লেখযোগ্য’ এবং ‘প্রশংসনীয়’ বলে অভিহিত করে। চীন জাতিসঙ্ঘের কাঠামোর মধ্যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তির জন্য মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ পুনর্মিলন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ পুনর্মিলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কণ্ঠস্বর ও কর্মকে একীভূত করা ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। জটিল আঞ্চলিক বিরোধ, ধর্মীয় ও জাতিগত সঙ্ঘাত, সেই সাথে বহিরাগত শক্তির ঘন ঘন হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে ‘শতাব্দীর সমস্যা’ করে তুলেছে। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অগ্রগতি হওয়ায়, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা আরো জরুরি হয়ে উঠেছে এবং গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন ঘিরে যেকোনো পরিকল্পনাকে ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে পুনর্মিলনের পূর্বশর্ত থেকে আলাদা করা যায় না।
বেইজিং ঘোষণা অনুসারে, দলগুলো আটটি পয়েন্টে একমত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট হলো একটি ব্যাপক ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্যে পৌঁছানো যাতে সব ফিলিস্তিনি বাহিনী এবং দলগুলোকে লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য। প্রাসঙ্গিক জাতিসঙ্ঘের রেজুলেশন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসঙ্ঘের সনদ অনুসারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে জেরুসালেম।
ফিলিস্তিনি সংলাপ গ্রুপের প্রধান সাদিক আবু আমের-এর মতে, এই বৈঠকের সাথে আগের বৈঠকগুলোর পার্থক্য হলো ‘বেইজিং ঘোষণা’ এবং এই প্রথমবারের মতো একটি বৈঠক আরব অঞ্চলের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় পার্থক্য হলো গাজার ওপর যুদ্ধের দ্বারা আরোপিত নতুন বাস্তবতা। কারণ এই সঙ্ঘাত মাটিতে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে, যার ফলে হামাসকে বৈধতার ছাতার প্রয়োজন হয়েছে। অন্য দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হামাসের শক্তির প্রয়োজন। এ কারণে তারা উভয়ে সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্র কী করবে
ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ইতোমধ্যেই ইসরাইল এবং গাজা নিয়ে তার এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতির মধ্যে কিছুটা ব্যবধান তৈরি করেছেন। কিন্তু তিনি আসলে কত দূর যাবেন?
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জন্য একটি ক্লাসিক রাজনৈতিক পরীক্ষা এনে হাজির করেছে। তিনি কি রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের থেকে ভিন্নভাবে সঙ্ঘাত পরিচালনা করবেন? সেটি কিভাবে? আর তিনি কত দূর যেতে চান এমন একটি বৈদেশিক নীতি যা বাইডেন থেকে আলাদা হবে?
হ্যারিস বলেছেন যে, তিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে বলেছিলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস গাজা থেকে প্রত্যাহারের জন্য ইসরাইলের ওপর তার বর্ধিত চাপের রূপরেখা দিয়ে কঠোর বিবৃতি জারি করেছেন।
তবে হ্যারিসকে তার দলের ভেতরে কট্টর ইসরাইলপন্থী ভোটারদের কথাও মনে রাখতে হবে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তিনি এবং বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হ্যারিস বিদেশী নীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব উপভোগ করেছেন। তবুও, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সঙ্ঘাতে তিনি কতটা বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছেন সেটি দেখতে হবে। হ্যারিস ও বাইডেন বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে পৃথকভাবে দেখা করেন। প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের অফিস প্রত্যেকে তাদের আলোচনার একটি সংক্ষিপ্ত, লিখিত সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। কিন্তু হ্যারিস আরো এগিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি তাদের বিতরণ করার কয়েক মিনিট আগে প্রকাশ্য সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং এটি কিভাবে প্রয়োগ হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। হ্যারিস বলেছেন, হামাস একটি নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন যেটি ৭ অক্টোবর ইসরাইল আক্রমণ করে শত শত বেসামরিক ও সামরিক কর্মীকে হত্যা এবং আরো কয়েকশ’ জিম্মি করেছিল।
বাইডেন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে, হ্যারিস বলেন : ‘আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছি, এই চুক্তিটি সম্পন্ন করার সময় এসেছে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, হ্যারিস প্রবলভাবে ইসরাইলপন্থী এবং হামাসবিরোধী। তিনি বিয়ে করেছেন একজন ইহুদিকে। তবে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের প্রতি সংবেদনশীল এবং ইসরাইলের কিছু কৌশলের প্রতি ভিন্ন মত পোষণ করেন।
কেউ আশা করে না যে, হ্যারিস গাজায় বাইডেনের পদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন কিছু করবেন।
যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের বিস্তার কতটা চায় তা নিয়ে নানা কারণে সংশয় রয়েছে। যুদ্ধের চাপকে ইসরাইল লক্ষ্য অর্জনের একটি হাতিয়ারও করতে চাইতে পারে। আর এর মধ্যে যদি সত্যি সত্যি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তাহলে এটি ভয়ঙ্কর হতে পারে। ইসরাইল চাইবে তার পাশে জর্দান মিসর আমিরাতের পাশাপাশি সৌদি আরবকে পেতে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছাড়া রিয়াদের পক্ষে প্রকাশ্যে তেলআবিবের সাথে জড়ানো সহজ হবে না।
আর ওআইসি আমিরাতের পরিকল্পনায় সায় দেবে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী একটি সমাধান বের করতে হবে যেটির একটি প্রেক্ষিত তৈরি করেছে বেইজিং। আর ইসরাইল হিজবুল্লাহ বা লেবাননের ওপর সর্বাত্মক হামলা চালালে তাতে শুধু ইরান বা তুরস্কই জড়াবে না, একই সাথে রাশিয়া এমনকি পরোক্ষভাবে চীনও যুক্ত হতে পারে। এতে ইসরাইল জয়ী হলে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মুসলিম রাষ্ট্র আর থাকবে না। আর ফিলিস্তিন প্রতিরোধ পক্ষ জয়ী হলে ইসরাইলের বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন