প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক
17 July 2024, Wednesday
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের পর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক কোন পথে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। দৃশ্যত, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যমান অর্থনৈতিক সঙ্কট পরিস্থিতিতে যে ধরনের সহায়তা প্রত্যাশা করেছিল তা পায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আর মধ্য মেয়াদে ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা প্রত্যাশার বিপরীতে এক বিলিয়ন ইউয়ান সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
কেন আশাভঙ্গ
প্রত্যাশার বিপরীতে প্রতিশ্রুতির এত ফারাক কেন, এ প্রশ্নের যে জবাব চীনা পত্রিকার বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া যায়; তার সারমর্ম হলো চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কতটুকু কী হবে তাকে ঢাকার আরেক অংশীদার ভারত নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের আগে বাংলাদেশের শাসক দলের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ব্যক্তি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ‘ভারত হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক (পড়তে পারেন কৌশলগত) মিত্র আর চীন হলো উন্নয়ন অংশীদার।’ সেতুমন্ত্রীর এ বক্তব্য চীন সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে উদ্ধৃত করা হয়েছে এবারের সফর বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে। তাতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নির্ধারণে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
দৃশ্যত, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তা না পাওয়ার পেছনে বহুলালোচিত তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প ও মংলাবন্দরে চীনের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে দিল্লির আপত্তির কথা বলা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের প্রস্তাবটি বাংলাদেশ চীনের কাছে দিয়েছিল। এ প্রস্তাব দেয়া হয় যখন অভিন্ন নদীটির পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ঢাকা একেবারে আশাহত হয়ে পড়ে। এ প্রকল্পের সার কথা হলো, তিস্তা নদীর বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রাখতে একটি বিশাল জলাধার নির্মাণ করা হবে। আর সংরক্ষিত এ পানি শুকনো সময়ে সেচে ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্প করার বিষয়টিও বিবেচনায় থাকবে।
ভারত নিজের সীমান্তবর্তী সংবেদনশীল কোনো অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগকে সবসময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে বলে এ প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মংলাবন্দর উন্নয়নের বিষয়েও আপত্তি একই ধরনের। এ দুটি ক্ষেত্রে ভারত বিনিয়োগের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। তিস্তার বিষয়ে বলা হচ্ছে, জাপানকে সাথে নিয়ে ভারত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। আবার কেউ এটিও বলছেন, চীন ব্যারাজটি নির্মাণ করে দিতে পারে আর ভারতকে পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। অন্য দিকে, মংলাবন্দর উন্নয়নে চীন বিনিয়োগ করলেও সেটি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় ভারত।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চীন এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হতে চাইবে না। শেখ হাসিনার এবারের বেইজিং সফরে এক দিন আগে শেষ করে চলে আসা এবং প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু না আসায় আশাভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে। চীনা মিডিয়ায় এ সফরকে হাইলাইট করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রটোকলও ছিল নিম্ন পর্যায়ের। কেন এমনটি হলো তা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত চীনা বক্তব্যের সুপ্ত বার্তা পাঠ করলে মনে হবে, বেইজিং বাংলাদেশের সাথে সম্ভবত শুধু আর্থিক সম্পর্ক গড়তে চাইছে না। অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কৌশলগত বোঝাপড়াও দেখতে চায়।
বেইজিংয়ে চীনা নেতাদের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত বক্তব্য এবং চীন সফরের আগে ঢাকায় একজন প্রভাবশালী চীনা কর্মকর্তার সাথে বাংলাদেশ পক্ষের আলোচনার যেসব বিষয় জানা যায়, তাতে মনে হয় দুই দেশের সম্পর্ক তৃতীয় দেশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোক সেটি বেইজিং চাইছে না। চীন বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুসারে বিনিয়োগ করবে। তবে সেই সাথে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সমঝোতাও হতে হবে। গ্লোবাল টাইমসের ১১ জুলাইয়ের এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা পাঠ করেও এমন বার্তা পাওয়া যায়।
Pause
Unmute
Remaining Time -10:03
Close PlayerUnibots.com
নিরাপত্তা ইস্যুতে সমঝোতা
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক যে অবস্থান তার সাথে চীনের বেশ কিছু নিরাপত্তা ইস্যুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আবার বাংলাদেশের নিরাপত্তার সাথে চীনের নিরাপত্তা স্বার্থের কিছু বিষয় গভীরভাবে সংযুক্ত।
পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলোর সময় বাংলাদেশের যে নিরাপত্তা ডকট্রিন তৈরি হয়েছিল তাতে ঢাকার বৈরী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয় ভারত। তখন যুক্তি দেখানো হয় বাংলাদেশের তিন দিকে যেহেতু ভারত, তাই যেকোনো সামরিক শত্রুতামূলক তৎপরতা সেই দেশ থেকে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৫ বছরের একটি প্রকাশ্য এবং সাত দফার একটি গোপন চুক্তির কথা বলা হয়। এ সময় ভারতকে সম্ভাব্য বৈরী শক্তি বিবেচনা করে চীনা সহায়তায় বাংলাদেশে নিরাপত্তা মতবাদ তৈরি করা হয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে পঁচাত্তর-উত্তর সরকারগুলো সমান্তরাল সম্পর্ক তৈরি করে। এ সময়ে ভারতের সাথে সম্পর্কে নানা ইস্যুতে উত্তেজনাও তৈরি হয়।
নব্বই দশকের দ্বিতীয়ার্ধে আওয়ামী লীগের প্রথম দফা সরকার গঠন এবং ২০০৭ এর পরে দেড় দশক ধরে শাসন ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর এ মতবাদ পাল্টে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের প্রধান কৌশলগত মিত্রের স্থানে চলে আসে। আর চীনকে উন্নয়ন সহায়তাকারী হিসেবে দেখা হয়। এ ধরনের ভারসাম্যের সাথে চীন মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ নীতি বিন্যাস করেছে বলে মনে হতে থাকে।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যতটা ভারসাম্য ছিল তাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে হতে থাকে। এ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার দুই দফা দিল্লি সফরে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা ভারতের সাথে হয়েছে তাতে তিন ক্ষেত্রে চীনা সম্পর্কের ওপর আঘাত আসে। প্রথমত, বাংলাদেশে চীনা সামরিক পণ্য বা প্রতিরক্ষা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মতো একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। যেটি কার্যকর হলে বাংলাদেশে চীনা স্বার্থ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের রেল ট্রানজিটের যে চুক্তি হয়েছে তা কার্যত সামরিক করিডোর হিসেবে কাজ করতে পারে বেইজিংয়ের আশঙ্কা। এটি ভারত চীন যেকোনো সীমান্ত বা ভূখণ্ডগত যুদ্ধে বেইজিংয়ের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে পারে। তৃতীয়ত, তিস্তা ব্যারাজ এবং মংলা বা পায়রাবন্দর প্রকল্পের সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুটি প্রশ্ন যুক্ত রয়েছে। বাইরের চাপে এ ধরনের প্রকল্প বন্ধ হওয়া বাংলাদেশে চীনের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বড় ইস্যু রোহিঙ্গা
বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আকারের নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে।
২০১৬ সালে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবের এক বছর পর সাত লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আসার এ ঘটনা ঘটে। চীনে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির অন্যতম প্রকল্প ছিল সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর। দিল্লির চাপে এখন যেভাবে তিস্তা ব্যারাজ ও মংলাবন্দর প্রকল্প অনিশ্চয়তায় পড়েছে তেমন ঘটনা ঘটেছিল সোনাদিয়ার ক্ষেত্রে। পরে কনটেইনার টার্মিনালের নামে মহেশখালীতে এ প্রকল্পের কাজ দেয়া হয় জাপানকে। সেখানে ভারতে সাত রাজ্যের পণ্য পরিবহন সেবাদানের উপযোগী করে গভীর সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। তিস্তা ও মংলাবন্দরের ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তার কৌশলগত কী প্রভাব পড়তে পারে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে বিষয়টি যে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সামগ্রিকভাবে নিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনবে তাতে সন্দেহ কম রয়েছে।
শেখ হাসিনার চীন সফরের একেবারের শেষ পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন শি। এর অর্থ দাঁড়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার মতো দুটি দেশের একটি চীন। দেশটি এর আগে আসিয়ানকে সম্পৃক্ত করে পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের একটি পাইলট প্রকল্প নিতে সহায়তা করেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এ ইস্যুতে মূল সহায়তাকারী জাতিসঙ্ঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধিতায় তা সফল হয়নি। এখন চীনা নেতা ইস্যুটির সত্যিকার সমাধান করতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি দুটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। আরাকান আর্মির ওপর চীন যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের কমবেশি প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। যে পক্ষের প্রভাবের কারণে হোক আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশী সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। এটি রোহিঙ্গা সঙ্কট জটিল করছে শুধু তাই নয়, একই সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তার ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। আরাকান আর্মি যদি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে সেই সম্ভাবনা কম মনে হয়।
দ্বিতীয় আরেকটি সমাধান হতে পারে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) যে অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেটি আরো বিস্তৃত করে সেখানে একটি নিরাপদ স্বশাসিত অঞ্চল তৈরি করা। এতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা গেলে রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসিত করা সম্ভব হতে পারে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এতে আপত্তি নাও থাকতে পারে। কারণ জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান থাকাকালে বাংলাদেশকে চাষাবাদের জন্য একটি অঞ্চল লিজ দেয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। জেনারেল আজিজ সেটি পরিদর্শন করেছিলেন বলে জানা যায়। যেভাবে হোক, রোহিঙ্গা সঙ্কটের আপাতত সমাধানের এ ফর্মুলা হোক অথবা নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে স্থায়ী সমাধান- এ দুটোর জন্য চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তার সাথে বোঝাপড়া এটি সহজ করে তুলতে পারে।
‘বাংলাদেশ কারো জন্য শত্রুতা নয় সবার সাথে বন্ধুত্বের’ পররাষ্ট্র কৌশলের কথা বলে থাকে। এটি বলার জন্য সুন্দর বক্তব্য হলেও বাস্তব অনুসরণে এটি চলে না। কোনো একটি বড় শক্তির সমর্থন ছাড়া নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন। বিশেষভাবে প্রতিবেশী দেশের জনসংখ্যা বা গভীর ক্ষমতা বলয়ের একটি অংশ যেখানে ঘোষণা দিয়ে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে; সেখানে বিকল্প শক্তির সাথে সম্পর্ক তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অখণ্ড ভারত মানে বাংলাদেশ ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাওয়া। এ কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কৌশলগত মিত্র প্রয়োজন সে শক্তিটি চীন বা যুক্তরাষ্ট্র যে কোনোটি হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যে মনে হয়েছে, তিনি চীনের সাথে কৌশলগত একটি সম্পর্ক তৈরি করে রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমাধান করতে চান। এ জন্য তিনি ব্রিকসে যোগদানের মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এখন পর্যন্ত আকসা জিসুুমিয়া চুক্তি স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক প্রশ্নে কোয়াডের অর্থনৈতিক জোটে যোগ না দিয়ে নিজস্ব একটি নীতি ঘোষণা করেছে। এর পেছনেও বেইজিংয়ের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
প্রশ্ন হলো, এবারের শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে এসব কিছুর কী ধারাচ্ছেদ ঘটেছে। এ প্রশ্নের নিশ্চিত নেতিবাচক জবাব দেয়ার সময় সম্ভবত এখনো আসেনি। চীনা পররাষ্ট্র কৌশলের একটি দিক হলো বৈরিতা যখন উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন দৃশ্যপট থেকে সাময়িক নিষ্ক্রিয়তা বেছে নেয় বেইজিং। এটি এর আগে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এমনকি সাম্প্রতিক সময়ের নেপালেও দেখা গেছে। দিল্লির চাপে কি বাংলাদেশেও তেমন কিছু ঘটল বেইজিংয়ের ব্যাপারে?
এটি যদি হয় তাহলে চীন বাংলাদেশকে সহায়তার ব্যাপারে স্থায়ীভাবে সরে দাঁড়াবে না, সাময়িকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সবসময় তার নিরাপত্তা সার্বভৌমত্বের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এখন এক ধরনের ভঙ্গুর অবস্থা দেখা যায়।
এ অবস্থায় সুচিন্তিত নীতি পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিষেবা নিতে না পারলে সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতায় বিপদ দেখা দিতে পারে। সামরিক ব্যবহারের জন্য অন্য দেশকে করিডোর দেয়া অথবা নিজস্ব অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ন্ত্রক প্রভাব ফেলতে দেয়ার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক বলে মনে হতে পারে। সব পক্ষের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কেও এটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর নিয়ে হতাশা তৈরির পেছনে এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে হয়। ঢাকাকে এখন বেছে নিতে হবে এক দেশের একান্ত আনুগত্যের পথে চলতে থাকবে নাকি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ অগ্রাধিকার দিয়ে পররাষ্ট্র কৌশল সাজানো হবে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন