ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ আবারো মধ্যপ্রাচ্যকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। অক্টোবর ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্ঘাত শুরুর পর থেকে ইসরাইল ও লেবানন সীমান্ত সংঘর্ষের একটি ফ্ল্যাশপয়েন্ট হয়ে উঠেছে। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের জবাবে হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সামরিক অবস্থানে হামলা বাড়িয়েছে। জবাবে, ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো লক্ষ্য করে উল্লেখযোগ্য কামান ও বিমান হামলা চালিয়েছে।
ইসরাইল-হিজবুল্লাহ হামলা-পাল্টা হামলা সীমিত পরিসরে থাকবে বলে মনে হয় না। গাজায় অন্যায় যুদ্ধের কারণে ইসরাইল সামরিক, কূটনৈতিক, আইনি ও বৈশ্বিক জনমতের ফ্রন্টে হেরে গেছে। হামাসকে ধ্বংস করার ইসরাইলের কৌশল তার সামরিক উদ্দেশ্য অর্জনের সম্ভাবনা কম। কূটনৈতিক ফ্রন্টে পরিস্থিতি ইসরাইলের অনুকূলে আছে বলে মনে হচ্ছে না। আইনি ফ্রন্টে, ইসরাইলকে গাজায় একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হয় এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য দেশটি দোষী সাব্যস্ত হতে চলেছে। এখন লেবাননকে টার্গেট করে, ইসরাইলের যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা আরো বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নতুন কৌশলগত হিসাব
তুর্কি বিশ্লেষক মুরাত ইয়েসিলতাস মনে করেন, এবার কৌশলগত হিসাব-নিকাশে ইসরাইলকে আরো বেশি মূল্য দিতে হবে। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ দ্বন্দ্ব বৃহত্তর আঞ্চলিক গতিশীলতা এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থের সাথে গভীরভাবে জড়িত। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো হবে না। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ কৌশল ছিল অবাস্তব এবং তারা যা চেয়েছিল তা অর্জন করতে পারেনি।
ইয়েসিলতাস এর মতে, হিজবুল্লাহর বিষয়টি ভিন্ন। আর লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হিসাব করা যুদ্ধ কৌশলও কাজ করবে না। আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ তেলআবিবের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দেশগুলোকে আরো বিরোধিতায় নামাবে। তাই হিজবুল্লাহ ইসরাইলের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক অভিনেতা হবে এবং এবারের যুদ্ধ গাজার যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে।
হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের উত্তেজনা এখন প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ইসরাইল লেবাননে হামলার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট লেবাননকে প্রস্তর যুগে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও উচ্চারণ করেছে। এই হুমকি মোকাবেলায় ইরানের পাশাপাশি এই অঞ্চলের দেশ সিরিয়া, তুরস্ক ও ইরাক বেশ গুরুত্বপূর্ণ । ইরান সরাসরি হিজবুল্লাহকে সামরিক ও অন্যবিধ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ ছাড়াও প্রতিরোধ অক্ষের তিনটি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে।
ন্যাটো সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্ক হিজবুল্লাহর মতো মিলিশিয়া সংগঠনকে সরাসরি সহায়তা দিতে পারে না। এ কারণে আক্রান্ত হলে লেবাননের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে তুরস্ক। নেবাননকে তুরস্ক এবং হিজবুল্লাহকে ইরান সহায়তা করলে ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ জয় অনেকখানি অসম্ভব। ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের ওপর সঙ্ঘাতে জড়িত না হতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের চাপে মিসর জর্দান ও সৌদি আরবের মতো দেশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও তুরস্ক ও ইরানের ভূমিকা নিয়ে ভয় রয়েছে ইসরাইলের।
চারপাশে সঙ্ঘাত সৃষ্টির চেষ্টা
গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য ভেঙে দেয়ার জন্য পরস্পরের মধ্যে সঙ্ঘাত সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা। সুদানে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পর সেই সঙ্ঘাত তীব্র করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একই সাথে সিরিয়ার শরণার্থীদের কেন্দ্র করে তুরস্কে উগ্র জাতীয়তাবাদী অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ইসরাইল চাচ্ছে লেবাননে সামরিক হামলা শুরুর পর সিরিয়া হয়ে হিজবুল্লাহর কাছে ইরানের সহায়তা পাঠানোর রুটটি বাধাগ্রস্ত করতে। এ জন্য ইরাক সরকারের ওপর যেমন চাপ তৈরি করা হচ্ছে তেমনিভাবে পিকেকে ও ওয়াইপিজিকে কাজে লাগিয়ে সিরীয় অঞ্চলে কৃত্রিম সঙ্ঘাত তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইসরাইলি সমর কৌশলবিদরা মনে করছেন, শান্তি চুক্তির সাথে যুক্ত দেশগুলোকে ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ কার্যক্রমের সাথে বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি অন্য যেসব দেশ প্রতিরোধ শক্তিকে সহায়তা করতে পারে যেসব দেশ ও অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।
সুদানে মুসলিম ব্রাদারহুড ঘনিষ্ঠ জেনারেল বশির ক্ষমতায় থাকাকালে দেশটির মধ্যে যে স্থিতি ছিল সেটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সে সরকার উৎখাতের পর আর থাকেনি। বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই প্রচেষ্টায় ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। বশির-উত্তর সামরিক সরকারকে দিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়।
পরে ওই সরকারের মধ্যে সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল বুরহান আর মিলিশিয়া প্রধান হেমেতদির মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সুদানকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই গৃহযুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী এই দেশ থেকে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।
সুদানের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সাথে ইসরাইল সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। হেমেতদির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এই গ্রুপকে অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা জোগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দিয়ে। অন্য দিকে সেনা সরকারের সাথে ইসরাইল যোগাযোগ রক্ষা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। জেনারেল বুরহানের সাথে যোগসূত্র বজায় রাখছে মিসর ও সৌদি আরব।
সুদানের এ সঙ্ঘাতে ইসরাইল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে দেশটির ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। নীল নদের উজানে ইথিওপিয়া যে বাঁধ দিয়েছে সেটির পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান। এই বাঁধ থেকে তৈরি বিদ্যুৎ ও সেচ দিয়ে অর্থনৈতিক কৌশলগত সুবিধা পেতে চায় ইসরাইল।
তুরস্কে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা
ইসরাইলি এক সেনার বাহুতে উৎকীর্ণ করা ইসরাইলের মানচিত্র নিয়ে গণমাধ্যমে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এ মানচিত্রে মিসর জর্দান ছাড়াও সিরিয়া লেবানন ইরাক ও তুরস্কের একটি অংশকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়েছে। এটি ইসরাইলের বৃহত্তর মানচিত্র বলেই মনে হয় যেটি প্রতিষ্ঠার জন্য গত ৮ দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক যুদ্ধ চাপানো হয়েছে।
সম্ভ^বত এ কারণেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধ কেবল ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধ নয়, এটি তুরস্কেরও প্রতিরোধ যুদ্ধ। ইসরাইলকে গাজায় থামানো না গেলে তারা মিসর, সিরিয়া পেরিয়ে তুরস্কের আনাতোলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এই উপলব্ধি থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মিসরের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছেন। সিরিয়ার সাথেও তিনি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এরদোগান বলেছেন, আমরা সিরিয়ার বাশার আসাদের সাথে কথা বলতে পারি। বাশার আসাদও বলেছেন, আমরা তুরস্কের সাথে কথা বলতে পারি। আর এ সম্পর্ক পুনর্গঠনের সময়টাতে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে তুরস্কের কায়সারি ও সিরিয়ার ইদলিবে।
এটা স্পষ্ট ছিল যে, কায়সারিতে ঘৃণ্য ঘটনার পর সামাজিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কায়সারিতে যখন সিরিয়ানদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং প্রতিক্রিয়া অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এটি স্পষ্ট ছিল যে সিরিয়ার উত্তরে কিছু ঘটবে। এ প্রসঙ্গে তুর্কি সাংবাদিক ইব্রাহিম কারাগুল তার এক্স প্রোফাইলে লিখেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পিকেকে লবি ও মোসাদ সংশ্লিষ্টরা কখনোই পদক্ষেপ নেয়ার এই সুযোগগুলো মিস করেনি এবং এবারো মিস করবে না।
কারাগুল আরো বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, ইসরাইল-গাজা-লেবানন সঙ্কট পিকেকের মাধ্যমে তুর্কি সীমান্তে স্থানান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই গুরুতর রাজনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটি আঙ্কারাকে ভিন্ন চিন্তার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, তুরস্ক ইরাকের উত্তরে একটি গভীর ও স্থায়ী অভিযান চালাচ্ছে। এ জন্য তুরস্কের ভেতরে ও বাইরে থেকে সন্ত্রাসী শক্তি নাশকতা করতে চায় এবং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তুরস্কের পতাকা পোড়ানো, ট্রাক আক্রমণ, সীমান্তে তুর্কি পতাকা নামানো, সীমান্ত গেট বন্ধ করা এবং উত্তর সিরিয়ায় পিটিটি ভবনে অভিযান চালানো এসব রহস্যজনক।
ব্লিঙ্কেন কী চান
ইসরাইলের যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে চাপ হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স ও জার্মানি হিজবুল্লাহকে ইসরাইল সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায়। তারা বারবার এ জন্য লেবাননের সরকার ও হিজবুল্লাহকে প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরও তাৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলছেন, অক্টোবর থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর ক্রমাগত আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের কারণে ইসরাইল তার দেশের উত্তর অংশে ‘সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে’। হিজবুল্লাহ ও আইডিএফের মধ্যে বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করার অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে প্যারাডক্সটি ছিল যে, সত্যিই একটি বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু হোক তা কেউই দেখতে চায় না।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘লোকেরা তাদের বাড়িতে যেতে নিরাপদ বোধ করে না। নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু না করলে মানুষ ফিরে আসার আস্থা পাবে না। উত্তর সীমান্ত সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ হাজার ইসরাইলি বাড়ি ফিরতে পারছে না এবং এলাকাগুলো বেশির ভাগ নির্জন রয়ে গেছে।’
ব্লিঙ্কেন উল্লেখ করেন, ‘প্রধান অভিনেতাদের কেউই আসলে যুদ্ধ চায় না। ইসরাইল যুদ্ধ চায় না, যদিও প্রয়োজনে তারা একটি যুদ্ধে জড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। আমি বিশ্বাস করি না যে, হিজবুল্লাহ আসলে যুদ্ধ চায়। লেবানন অবশ্যই একটি যুদ্ধ চায় না, কারণ এটি এই ধরনের যুদ্ধের প্রধান শিকার হবে। আর আমি বিশ্বাস করি না যে ইরান আংশিকভাবে যুদ্ধ চায়। কারণ এটি নিশ্চিত করতে চায় যে হিজবুল্লাহ যেন ধ্বংস না হয় এবং এটি যদি কখনো ইসরাইলের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তবে প্রয়োজন হলে ইরান একটি কার্ড হিসেবে হিজবুল্লাহকে ধরে রাখতে পারে।’
ব্লিঙ্কেনের মতে, সর্বোত্তম বিকল্প হলো একটি কূটনৈতিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের নিকটবর্তী সীমান্ত এলাকা থেকে ফিরে আসবে।
আসলে ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী গ্যান্টজের কথাই বলছেন। এম কে বেনি গ্যান্টজ লেবাননের সেনাবাহিনীকে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কাজ করার এবং তাদেরকে ইসরাইলের সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক গতিবিদ্যা
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ আঞ্চলিক সঙ্ঘাত আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ইসরাইল ও তার মিত্রদের ওপর আরো বেশি ব্যয় চাপাতে পারে। নানা কারণে এটি হতে পারে। প্রথমত, যদি সঙ্ঘাত একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে পরিণত হয়, তাহলে লেবানন ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আরো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শিকার হতে পারে। ইরানের সম্পৃক্ততা বৃহত্তর আঞ্চলিক সঙ্ঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একটি বৃহত্তর সঙ্ঘাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকেও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে। সিরিয়া এবং ইরাকের মতো ভঙ্গুর দেশগুলো স্পিলওভার প্রভাবের মুখোমুখি হতে পারে, যা আরো বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যায়।
ভূমধ্যসাগরের স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ সাইপ্রাস সরকারকে সতর্ক করেছেন যে, লেবাননকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য শত্রুদের জন্য তাদের বিমানবন্দর এবং ঘাঁটি খোলার অর্থ হলো তারা যুদ্ধের অংশ হয়ে গেছে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান দ্বীপে ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হবে এবং ইইউ সঙ্ঘাতের অংশ হবে।
দ্বিতীয়ত, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতার কারণে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে শক্তির ভূরাজনীতির গতিশীলতা বিবেচনা করে, হিজবুল্লাহর ওপর পূর্ণমাত্রায় ইসরাইলি আক্রমণ নতুন উত্তেজনা আনবে এবং নেতিবাচকভাবে শক্তি সরবরাহ, বিশেষ করে শক্তির বাজারকে প্রভাবিত করবে।
মুরাত ইয়েসিলতাস মনে করেন, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের আরেকটি মূল্য হলো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নিয়মভিত্তিক কাঠামোর সম্পূর্ণ পতনের সম্ভাবনা। গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে, একটি নতুন যুদ্ধ নিশ্চিত করবে যে আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা আর পুরোপুরি কাজ করছে না। এটি অন্যান্য আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারে এবং আরো ব্যাপক সঙ্ঘাতের পথ তৈরি করতে পারে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে তুর্কিয়ে বারবার বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ বন্ধ না হলে, এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর এবং আরো ব্যাপক যুদ্ধ অনিবার্য।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন