নিকট অতীতে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক গণহত্যার উদাহরণটি সম্ভবত ইসরাইল রাফায় গত রোববার রাতে তৈরি করেছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ক্যাম্পে বোমাবর্ষণের মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আর এতে জ্যান্ত পুড়ে মারা গেছে ৪০ ফিলিস্তিনি শিশু-নারী। এই এক দিনেই পৌনে ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। কেন এই নির্মমতা? এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ক্রিস হেজেস। তিনি একজন সৎ, সাহসী ব্যক্তি যিনি পত্রিকাটির মধ্যপ্রাচ্য ব্যুরোর প্রধান।
কী বলছেন ক্রিস হেজেস
ক্রিস হেজেস স্পষ্টত অনুভব করছেন, গাজায় বিশুদ্ধ পানি পাবার ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো, চিকিৎসা সুবিধা ও স্যানিটেশন ধ্বংস করা, খাদ্য ও জ্বালানির চালান রুদ্ধ করা, টেলিযোগাযোগ ব্ল্যাকআউট করা, শত শত হত্যা ও আহত করার এই নির্বিচার সহিংসতা মূলত হিটলারের পরিকল্পনার প্রতিরূপ। হিটলারের মতোই অনাহার ও সংক্রামক রোগের মহামারী, প্রতিদিনের গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে গাজাকে একটি মর্গে পরিণত করার কাজ চলছে। ক্রিস বলছেন, ইসরাইল গাজায় প্রায় এক লাখ ফিলিস্তিনিকে হত্যা বা গুরুতর আহত করেছে। উপত্যকার প্রতি ২০ জন বাসিন্দার মধ্যে প্রায় একজন নিহত বা পঙ্গু হয়েছে। আবাসনের ৬০% ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। নাৎসিরা তাদের শিকারদের ডেথ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। ইসরাইলিরা তাদের ভুক্তভোগীদের যারা অবশিষ্ট থাকবে তাদেরকে ইসরাইলের বাইরের দেশগুলোতে শরণার্থী শিবিরে পাঠাবে।
ক্রিস হেজেস বলেছেন, ‘দুই দশক ধরে সশস্ত্র সংঘাতের খবর সংগ্রহের সময় আমি সবচেয়ে বিরক্তিকর পাঠটি শিখেছি যে, আমাদের সবারই ক্ষমতা আছে, সামান্য প্ররোচনা ছাড়াই আমরা জল্লাদ হতে পারি। আমরা সবাই নাৎসি হয়ে উঠতে পারি। এভাবে আমরা গাজায় গণহত্যা চালানোর মতো দানব হয়ে উঠেছি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সম্ভবত সবচেয়ে দুঃখজনক বিড়ম্বনা হলো যে, একসময় গণহত্যা থেকে সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল এমন লোকেরাই এখন এটি করে।’ এ প্রসঙ্গে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এর সাংবাদিক গিডিয়ন লেভির বক্তব্যটি বেশ প্রাসঙ্গিক। তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলি সমাজের অমানবিক আচরণ সম্পর্কে বলেছেন, ক. তারা সবাই গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে আমরাই ঈশ্বরের নির্বাচিত মানুষ... খ. ইতিহাসে আরো নৃশংস দখলদারিত্ব ছিল... যেখানে দখলদার নিজেকে শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছিল...। মূল্যবোধের তৃতীয় সেটটি সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং এটি হলো ফিলিস্তিনিদের পদ্ধতিগত অমানবিককরণ যা আমাদের ইসরাইলিদের সবকিছুর সাথে শান্তিতে বসবাস করতে সক্ষম করে। কারণ তারা যদি আমাদের মতো মানুষ না হয় তবে সত্যিই মানবাধিকারের প্রশ্ন নেই এবং যদি আপনি প্রায় প্রতিটি ইসরাইলির ত্বকের নিচে আঁচড় দিয়ে দেখেন সেখানে প্রায় কাউকেই ফিলিস্তিনিদের সাথে সমান আচরণকারী মানুষ পাবেন না।
গিডিয়ন লেভি বলেন, আমি একবার লিখেছিলাম যে আমরা ফিলিস্তিনিদের সাথে পশুর মতো আচরণ করি। আমি পশু অধিকার সংস্থার কাছ থেকে অনেক প্রতিবাদী চিঠি পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু দিনের শেষে কত ইসরাইলি এক মুহূর্তের জন্য ফিলিস্তিনিদের জায়গায় নিজেকে স্থাপন করার চেষ্টা করেছিল? দিন শেষে ... এটি ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে বিরোধ নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর নৃশংস ও অত্যাচারী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ইস্যু।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলিরা যা করছে বলে লেভি বলেছেন, সেটিই করতে চেয়েছিলেন হিটলার। সেজন্য নিয়েছিলেন লেবেনসরাউম মহাপরিকল্পনা।
Pause
Mute
Remaining Time -0:00
Close PlayerUnibots.com
লেবেনসরাউম মাস্টার প্ল্যান কী?
লেবেনসরাউম মাস্টার প্ল্যান ছিল নাৎসিদের ইহুদি জনসংখ্যা নিঃশেষ করার একটি মহাপরিকল্পনা। লেবেনসরাউম হলো সম্প্রসারণবাদ ও ভোলকিস জাতীয়তাবাদের একটি জার্মান ধারণা, যার দর্শন ও নীতিগুলো ১৮৯০ থেকে ১৯৪০-এর দশক পর্যন্ত জার্মান রাজনীতিতে দৃশ্যমান ছিল। ১৯০১ সালের দিকে সর্বপ্রথম এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) লেবেনসরাউম আঞ্চলিক সম্প্রসারণের সেপ্টেম্বর কর্মসূচির মূল উপাদান হিসেবে ইম্পেরিয়াল জার্মানির একটি ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যে পরিণত হয়। এই আদর্শের চরম রূপটি নাৎসি পার্টি ও নাৎসি জার্মানি দ্বারা সমর্থিত ছিল। লেবেনসরাউম ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর জন্য নাৎসি জার্মানির একটি প্রধান প্রেরণা। আর তারা সঙ্ঘাতের শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নীতি অব্যাহত রাখে।
হিটলারের ক্ষমতায় উত্থানের পর মূলত লেবেনসরাউম নাৎসিবাদের একটি আদর্শিক নীতিতে পরিণত হয় এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে জার্মান আঞ্চলিক সম্প্রসারণের ন্যায্যতা প্রদান করে। নাৎসি নীতির ভিত্তি ছিল জেনারেল প্ল্যান অস্ট (প্রাচ্যের জন্য মাস্টার প্ল্যান) এর নীতি। এতে বলা হয় যে, জার্মানির বেঁচে থাকার জন্য একটি লেবেনসরাউমের প্রয়োজন এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের পোলিশ, ইউক্রেনীয়, রাশিয়ান, চেকসহ অন্যান্য স্লাভিক জাতি এবং অনার্য হিসাবে বিবেচিত বেশির ভাগ জনসংখ্যাকে সাইবেরিয়ায় গণনির্বাসন, উচ্ছেদ বা দাসত্বের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে।
নাৎসি সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীকালে লেবেনসরাউমের নামে জার্মানিক উপনিবেশবাদীদের সাথে এই ভূমিগুলি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছিল। সমগ্র জনসংখ্যা অনাহারে বিধ্বস্ত হয়েছিল; ইহুদি জনসংখ্যা একেবারে নির্মূল করা হয়েছিল। বিশ্ব আধিপত্যের জন্য হিটলারের কৌশলগত কর্মসূচি ছিল লেবেনসরাউমের শক্তিতে বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নেয়া। লেবেনসরাউমের ইউজেনিক্স এটাকে জার্মান আর্য মাস্টার রেসের অধিকার বলে ধরে নিয়েছিল যে, তারা আদিবাসীদেরকে তাদের আবাস থেকে সরিয়ে দিতে পারে। তারা জার্মানির বাইরে থেকে এই ধারণার জন্য অনুপ্রেরণা নিয়েছিল। হিটলার এবং নাৎসি কর্মকর্তারা প্রকাশ্য নিয়তির প্রতি বিশেষ আগ্রহ নেন এবং অধিকৃত ইউরোপে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। নাৎসি জার্মানি অন্যান্য অক্ষশক্তির সম্প্রসারণবাদী মতাদর্শকেও সমর্থন করেছিল যেমনটি ফ্যাসিবাদী ইতালির স্পাজিও ভিটালে এবং ইম্পেরিয়াল জাপানের হাক্কো ইচিউ নেন।
ইসরাইলের লেবেনসরাউম নীতি
ক্রিস হেজেস-এর মতো ইসরাইলি সাংবাদিক ও লেখক গিডিয়ন লেভিও ফিলিস্তিন দখলের জন্য ইসরাইলকে লেবেনসরাউম নীতি গ্রহণের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। সাত বছর আগে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে এক বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। আজকের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে লেভির কথাগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তা দেখলে অবাক হতে হয়।
লেভি বলেছিলেন, আমরা ফিলিস্তিনিদের খাঁচায় বন্দি করে হত্যা করি। আমাদের মধ্যে একজন ১৬ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল; আমাদের কেউ কেউ গুলতি নিক্ষেপকারীর সাথে তাদের পিছনে দৌড়ে তাদের পুড়িয়ে দিয়েছিল। জায়নবাদী সৈন্যরা তখন অট্টহাসি হাসে...
এখন গাজায় যা হচ্ছে ক্রিসের মতে তা নাৎসিদের কাছ থেকে ধার করা। গাজাকে একটি মর্চুয়ারিতে পরিণত করা এখন লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের বোমা, রোগ, এক্সপোজার বা অনাহারে মৃত্যু অথবা তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার যে কোনটি বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। শিগগিরই তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চেষ্টা হচ্ছে যেখানে মৃত্যু এতটাই সর্বব্যাপী হবে যে যারা বাঁচতে চায় তাদের জন্য নির্বাসনই হবে একমাত্র বিকল্প।
জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র ড্যানি ড্যানন ইসরাইলের কান বেট রেডিওকে বলেছেন, ‘লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলো যারা গাজা উপত্যকা থেকে শরণার্থীদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের গাজাবাসীদের অন্য দেশে চলে যাওয়া সহজ করতে হবে। আমি ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছা অভিবাসনের কথা বলছি যারা চলে যেতে চায় তাদের যাবার ব্যবস্থা করতে হবে।’
অনেকের ধারণা, গাজায় বাইডেন প্রশাসন ত্রাণ বিতরণের কথা বলে যে ভাসমান ডক ও বন্দর তৈরি করছে তার পেছনে ফিলিস্তিনিদের গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে দূরে সরিয়ে নেবার পরিকল্পনার যোগসূত্র রয়েছে। প্রথমে তারা ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্দানে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। সেটি সফল না হওয়ায় এখন আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকায় ঠেলে দেবার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। মনে করছে প্রথমে ফিলিস্তিন মুক্ত করতে হবে, এরপর বৃহত্তর ইসরাইলের জন্য আরো জনপদ সংযুক্ত করতে হবে যেটি একসময় লেবান্ট পার হয়ে আনাতোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
ইসরাইলি নথি ও ফিলিস্তিন নির্মূলকরণ
একটি ইসরাইলি গোয়েন্দা নথিতে গাজা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে ইসরাইলের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের একটি অফিসিয়াল নথিতে এসেছে, যার শিরোনাম ছিল : ‘পলিসি পেপার-গাজায় বেসামরিক জনসাধারণের বিষয়ে নীতি প্রণয়নের বিকল্প।’ এতে তিনটি ভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল যার মধ্যে ছিল, সিনাইতে গাজা স্ট্রিপের জনসংখ্যার পুনর্বাসন।
নথিটিতে গাজা সঙ্কটের সমাধানে তিনটি প্রস্তাব করা হয়, যার প্রত্যেকটির সুবিধা ও অসুবিধার কথাও বলা হয়। এগুলো হলো- প্রথমত. গাজা উপত্যকায় জনসংখ্যা ঠিক রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতায় আনা, দ্বিতীয়ত. উপত্যকায় জনসংখ্যা ঠিক রাখা এবং একটি স্থানীয় আরব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং তৃতীয়ত. গাজা থেকে সিনাইয়ে বেসামরিক জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়া।
নথিটিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজা উপত্যকায় আনা হলো একটি খারাপ বিকল্প। প্রথম নজরে, মনে হচ্ছে এই বিকল্পটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে কম বিপজ্জনক, তাই বিস্তৃত আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে সহজ হবে। তবে বাস্তবে, এই বিকল্পটি বেসামরিক জনসংখ্যাকে সংরক্ষণ করবে এবং এটি হবে সবচেয়ে খারাপ। যতক্ষণ না ফিলিস্তিনিরা শহরে থাকবে এবং তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ। তাদের শক্তিশালী করা ইসরাইলের জন্য একটি কৌশলগত ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে বিভাজন এখন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান বাধা। ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনের বিজয় এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথ প্রশস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। এ ধরনের সমাধান হিজবুল্লাহকে নিরন্ত্র করার জন্য যথেষ্ট হবে না। এর বিপরীতে, এটি গভীর ইসরাইলি দুর্বলতা নির্দেশ করবে এবং লেবাননের পক্ষকে সঙ্কেত পাঠাবে যে ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষের ক্ষেত্রে তাদের গুরুতর মূল্য দিতে হবে না এবং তারা আবার সামরিক অভিযান শুরু করবে।
আরব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রসঙ্গে ইসরাইলি নথিতে বলা হয়, হামাসের দীর্ঘ শাসনের কারণে গাজায় জনসংখ্যা রাখা এবং একটি স্থানীয় আরব কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় প্রস্তাব অবাস্তব এবং অনুপযুক্ত। যারা নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হবেন তারা আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হবেন, ইসরাইল গাজা স্ট্রিপের জন্য দায়ী থাকবে। বাস্তবে, এই বিকল্পটি ইসরাইলকে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিবর্তনের নিশ্চয়তা দেয় না। বরং এটি কয়েক বছরের মধ্যে একটি কৌশলগত দায় হয়ে উঠবে।
ইসরাইল নথিটিতে তৃতীয় যে বিকল্পে পৌঁছেছে তা হলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সিনাইতে নির্বাসন। এতে বলা হয়েছে: ‘ইসরাইল বেসামরিক জনগণকে সিনাইতে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে। প্রথম পর্যায়ে সিনাইয়ে তাঁবুর শহর গড়ে তোলা হবে। পরবর্তীতে, গাজার বেসামরিকদের জন্য একটি মানবিক করিডোর স্থাপন করা হবে, তারপর উত্তর সিনাইয়ে আবার আবাসনের জন্য উপযুক্ত এলাকায় শহরগুলো তৈরি করা হবে এবং মিসরের অভ্যন্তরে ইসরাইলি সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে।’
নথিটি দাবি করে যে এই সমাধানটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। বলা হয়, প্রথম নজরে, মনে হচ্ছে যে বিপুল পরিমাণ বেসামরিক লোককে সরিয়ে নেওয়ার এই বিকল্পটি আন্তর্জাতিক বৈধতার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি জটিল বিষয় হতে পারে। আমরা অনুমান করি যে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার পরে যে লড়াই হবে তাতে বেসামরিকরা থাকলে যে হতাহতের সংখ্যা প্রত্যাশিত হবে তার তুলনায় কম বেসামরিক হতাহতের কারণ হবে।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি ড. রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের গোয়েন্দা মন্ত্রকের প্রস্তাবিত প্রকল্পের উল্লেখ করে এটিকে দ্বিতীয় নাকবার প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেন। এটিই মিসরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসিকে ঘোষণা করতে প্ররোচিত করেছিল : ‘যতক্ষণ এটি অস্থায়ী এবং যতদিন ইসরাইল এর মালিক, ততক্ষণ কেন দক্ষিণ-পূর্বে নেগেভ মরুভূমিতে একটি তাঁবুর শহর (এই উদ্দেশ্যে) তৈরি করা হবে না?
ইসরাইল রাফায় গণহত্যার মাধ্যমে তৃতীয় বিকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাইছে। কিন্তু তাদের হিসাবের মধ্যে প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা সম্ভবত কমই রয়েছে। ইসরাইলের নির্মমতা যত বাড়ছে প্রতিরোধের শেকড়ও তত গভীর হচ্ছে। এমন অনেক কিছু ঘটছে যা ইসরাইলের মহাপরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে পারে। যেভাবে এই ধরনের পরিকল্পনা কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন হিটলার। এতে ইসরাইল এমন ঝুঁকি নিচ্ছে যা পরিণামে দেশটির বিলুপ্তিও ডেকে আনতে পারে- যেমনটি ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিন বারবার উচ্চারণ করেছিলেন।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন