ইসরাইলের একজন প্রাক্তন ন্যায়পাল ও সাবেক সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল ইসাক বারাকের একটি বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তিনি বলেছেন, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে গেছে। বারাক হিব্রু ভাষার পত্রিকা ‘মারিভ’-এ এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘আপনি অনেক লোকের সাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য মিথ্যা বলতে পারবেন না।’ তিনি সতর্ক করেন, ‘গাজা উপত্যকায় এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যা ঘটছে তা এখনই অথবা পরে আমাদের মুখের সামনে বিস্ফোরিত হবে। ইসরাইলি হোম ফ্রন্ট একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়, যা গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের চেয়ে হাজার গুণ বেশি কঠিন ও গুরুতর হবে।’
জেনারেলের ‘বোমা’
জেনারেল ইসাক বারাক তার নিবন্ধে লেখেন, আমরা হামাসের সাথে যুদ্ধে হেরেছি এবং আমাদের মিত্রদেরও দ্রুত হারাচ্ছি। হামাসকে ধ্বংস করার ইসরাইলের লক্ষ্য এজেন্ডা থেকে ছিটকে গেছে এবং আমরা এখন গাজা থেকে বন্দীদের ফিরিয়ে আনাকে লক্ষ্য করছি কিন্তু সেটিও পারিনি। প্রাক্তন এই সামরিক কমান্ডার ইসরাইল সশস্ত্রবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভির সমালোচনা করে বলেছেন যে, তিনি বাস্তবতা থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’। অনেক আগেই তিনি মাঠের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তার মতো কর্নেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিয়োগ শুরু করেছেন। সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার পর এটিই সবচেয়ে গুরুতর কেলেঙ্কারি।
বারাক আরো বলেন যে, এখন যা চলছে তা গত ৭৫ বছরে ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়কর ঘটনা। রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি যদি একইভাবে চলতে থাকে, তাহলে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর আগে থেকে আমরা আরো খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব এবং যুদ্ধে ইসরাইলের দুটি প্রধান লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা ও পণবন্দী উদ্ধারের লক্ষ্য অর্জিত হবে না তাই নয়। আমরা এখন পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তার সব হারাব।
ইসাক বারাক জোর দিয়ে বলেন, এই অবস্থায় প্রথম ব্যক্তি যিনি পদত্যাগ করবেন তিনি হলেন নেতানিয়াহু এবং অন্যদের দোষারোপ করার পরিবর্তে আর ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানোর পরিবর্তে, তার উচিত মন্ত্রিসভার চাবি ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া। এর পরেই রয়েছে ইয়োভ গ্যালান্ট। গ্যালান্ট একজন ভারসাম্যহীন ব্যক্তি এবং তার যুক্তিযুক্ত চিন্তাভাবনার অভাব রয়েছে। তিনি ৭ অক্টোবরের ট্র্যাজেডির জন্য সরাসরি দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন এবং অবিলম্বে তার পদ থেকে ইস্তফা দেয়া উচিত।
কৌশলগত প্রস্থান?
এদিকে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ বলছেন যে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলিদের ফিরিয়ে না দিলে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি যুদ্ধে কোনো জয় হবে না। হারজোগ ইসরাইলের নিহত সৈন্যদের এক স্মরণ অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন, ‘আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য দৃঢপ্রতিজ্ঞ এবং এটা আমাদের কাছে সন্দেহের বাইরে স্পষ্ট যে, বেসামরিক ও সামরিক বন্দীদের প্রত্যাবর্তন ছাড়া কোনো বিজয় নেই। ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, হামাসকে ধ্বংস করার আশা ইসরাইল এখন আর করে না।
ইসরাইলের আগের অবস্থান থেকে এই সরে আসা কৌশলগত পরাজয়ের ইঙ্গিত বলে মনে করেন মিডল ইস্ট আইয়ের সম্পাদক ডেভিড হার্স্ট। তার মতে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই যুদ্ধ যতদিন সম্ভব চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে ভেতর থেকে সাহায্য করা হচ্ছে না। যুদ্ধ মন্ত্রিসভার দুই সিনিয়র সদস্য প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা প্রকাশ্যে অমান্য করেছেন। জনসাধারণের অবাধ্যতার প্রথম কাজটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের কাছ থেকে এসেছিল, যিনি ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি কেবলমাত্র একটি নতুন সামরিক খসড়া আইন উপস্থাপন করতে সম্মত হবেন যদি বেনি গ্যান্টজের জাতীয় ঐক্য পার্টি ইয়েশিভা ছাত্রদের নিয়োগ থেকে অব্যাহতি নিয়ন্ত্রণ করতে সম্মত হয়। গ্যালান্ট কার্যকরভাবে গ্যান্টজকে আইনের উপর একটি ভেটো দিয়েছেন, যার উপর ইয়েশিভদের জন্য সরকারি তহবিল নির্ভর করে। এ ধরনের আইন না থাকলে হেরেদি দলগুলো জোট ছেড়ে সরকার পতন ঘটাবে।
দ্বিতীয় কাজটি গ্যান্টজের কাছ থেকে এসেছিল, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে অননুমোদিত সফর করেছিলেন আর নেতানিয়াহু তার দূতাবাসগুলোকে গ্যান্টজকে কোনো সহযোগিতা না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এটাই নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দুর্বলতা যে গ্যান্টজ বা গ্যালান্টকে তিনি বরখাস্ত করতে পারছেন না। যদিও তিনি মনে করছেন আমেরিকানরা গ্যান্টজকে দিয়ে তার প্রতিস্থাপন করতে চাইছে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নেতানিয়াহুর জন্য তৃতীয় ধাক্কা ছিল সেফার্ডি প্রধান রাব্বি ইসাক ইয়োসেফের বিবৃতি। সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন যে, সরকার যদি হারেদিমে বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা প্রয়োগ করে, তবে তারা ব্যাপকভাবে ইসরাইল ছেড়ে যাবে। এ ধরনের অর্থোডক্স ইহুদির সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ হতে পারে। জেরুসালেম পোস্টের সম্পাদকীয়তে ইয়োসেফকে এ জন্য নিন্দা করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয় যে তার কথাগুলো গাজায় তাদের জীবনের ঝুঁকিতে থাকা সৈন্যদের অপমান। কিন্তু ইসরাইলের সরকারের একদিকে সেনা দরকার যুদ্ধের জন্য, অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতার মুখে নাগরিকদের ব্যাপকভাবে দেশ ত্যাগও ঠেকানো দরকার। এই ডিলেমায় সরকার অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছে।
নেতানিয়াহুর কর্তৃত্ব কমছে
যুদ্ধের ওপর নেতানিয়াহুর কর্তৃত্ব ক্রমেই কমছে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যও ততটা পরিষ্কার নয় যতটা প্রথম নজরে মনে হতে পারে। সামরিক অভিযান নিঃসন্দেহে হামাসকে গাজায় একটি যোদ্ধাশক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছে। গাজার সামরিক নেতৃত্বের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে দোহা ও বৈরুতে তাদের রাজনৈতিক শাখাকে বার্তা দিয়েছে যে, তারা আত্মবিশ্বাসী লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে।
ফিলিস্তিন ও এর নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষমতার প্রতি তাদের আস্থার আরেকটি চিহ্ন হলো তাদের বন্দীদের তালিকা যারা অবশিষ্ট ইসরাইলি জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তি পাবে। এ বিষয়ে সর্বশেষ তালিকায় ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারগৌতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, দ্বিতীয় ইন্তিফাদাতে যার কর্মকাণ্ডের জন্য পাঁচটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৪০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এই তালিকায় আরো রয়েছে, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিনের মহাসচিব আহমেদ সাদাত; হামাসের সামরিক নেতা আবদুল্লাহ বারগুতি এবং দ্বিতীয় ইন্তিফাদার নেতা ইব্রাহিম হামিদ।
যদি এই ব্যক্তিদের কাউকে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে এর প্রভাবটি জাতীয়তাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং ইসলামপন্থী ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের সব দলে একটি কৌশলগত পরিবর্তন হবে। ফিলিস্তিনিদের জন্য, এটি একটি বিশাল রাজনৈতিক পুনর্নবীকরণ হবে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিশ্চিত সমাপ্তিও ঘটাতে পারে যারা দখল বজায় রাখতে তেলআবিবকে সহযোগিতা করে।
নেতানিয়াহুর দুর্বলতা পশ্চিমা রাজনৈতিক অভিজাতদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে যারা ইসরাইলকে সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। নেতানিয়াহুর সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিবাদ এখন উন্মুক্ত এবং জনসাধারণের চোখে পড়ছে এটি। পাঁচ মাস আগে যে মার্কিন নেতা জোরেশোরে বলেছিলেন যে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, এখন তিনি বলছেন ইসরাইল আত্মরক্ষার নামে ৩০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করতে পারে না।
বাইডেনের ইসরাইল মানস
আইরিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিন্তাজগতে ইসরাইলকে নিয়ে আসলে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ডেভিড হার্স্ট বিশ্বাস করেন না যে, বাইডেনের হৃদয়ের কিছু নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। এই অভিযানের প্রতিটি পর্যায়ে গাজার মাটিতে কী ঘটছে সে সম্পর্কে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা সম্পূর্ণরূপে অবহিত। তারা জানত, হামাস সাহায্য কনভয়কে অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছে না বা খাবার চুরি করছে না, এরপরও তারা তাই বলেছিল।
হার্স্টের মতে, যুদ্ধ এখন থেমে গেলেও, গাজা পুনরুদ্ধারের জন্য ইসরাইল যে মূল্য দিয়েছে তা সম্ভবত পাঁচ মাস আগের হিসাবের চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু এখনো এটি তাদের পুরোপুরি উপলব্ধিতে আসছে বলে মনে হয় না। আর যদি বাইডেন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইলকে গাজা আক্রমণ করার জন্য সবুজ আলো দেয়ার ফলাফলের মুখোমুখি হন, তবে সেই পরিণতিগুলো প্রাথমিকভাবে তার নির্বাচনী মাঠে পড়বে। সুপার মঙ্গলবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কয়েক হাজার ভোটার ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয়নি, কারণ তারা গাজায় বাইডেনের যুদ্ধ পরিচালনার বিরুদ্ধে। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে এজন্য তাকে মূল্য দিতে হতে পারে।
বাইডেনের রমজানের শুভেচ্ছা এই বছর বিশেষভাবে উষ্ণ ছিল। কিন্তু আরব আমেরিকানরা প্রদর্শনীর পরিবর্তে নীতির পরিবর্তন চায়। আর বাইডেন এখনো কেবল একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সমর্থন করেন, স্থায়ী নয়। তিনি ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার কথা বলেননি, যদিও সুরের কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
শুমারের বক্তব্যে তোলপাড়
আমেরিকান সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাট নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার ইহুদি কর্মকর্তা চাক শুমার পাঁচ মাস আগে হামাসের হামলার পরে ইসরাইলের পক্ষে তার সমর্থনে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার, তিনি ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে একটি বৈশ্বিক প্যারিয়াতে পরিণত হলে এ দেশটি টিকে থাকতে পারবে না। চাক শুমার, ইসরাইলে একটি নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানানোর সাথে সাথে এটিও বলেছেন যে, ‘নেতানিয়াহু তার পথ হারিয়েছেন।’
শুমারের এই বক্তব্য ইসরাইলি নেতাদের জন্য হজম করা কঠিন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট মার্কিন ডেমোক্র্যাট নেতার কথাকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘আমরা ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করি। আমরা একটি স্বাধীন জাতি, বানানা রিপাবলিক নই।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে শুমারের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন এবং আমেরিকান হস্তক্ষেপের চেষ্টাকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে, আমরা ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে ইসরাইলকে তার ন্যায্য যুদ্ধে সাহায্য করা ভালো হবে।’
যুদ্ধমন্ত্রী বেনি গ্যান্টজও শুমারের কারণে সৃষ্ট ঝড়ের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। গ্যান্টজ এক বিবৃতিতে কিছুটা ভিন্ন সুরে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থ রয়েছে এবং ইসরাইলের নাগরিক ও এর নেতৃত্ব ইসরাইল রাষ্ট্রের কঠিন ও জটিল মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞ।’
তার ভাষায়, ‘সিনেটে গণতান্ত্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা, চাক শুমার, ইসরাইলের একজন বন্ধু, যিনি আজকালও তাকে অনেক সাহায্য করেন, কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে ভুল ছিলেন। ইসরাইল একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র এবং শুধুমাত্র তার নাগরিকরা এর নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে কোনো বহিরাগত হস্তক্ষেপ ভুল ও অগ্রহণযোগ্য।’
শুমার নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক বেঁচে থাকাকে জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং বলেন যে, তিনি ‘গাজায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে খুব ইচ্ছুক ছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী ইসরাইলের সমর্থনকে ঐতিহাসিক নিম্ন পর্যায়ে ঠেলে দিচ্ছে। ইসরাইল টিকে থাকতে পারবে না যদি এটি প্যারিয়া বা দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হয়ে যায়।’
পশ্চিমে জনমতের ক্ষতি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ক্রমাগত গণহত্যা মামলা, ইহুদি ঐকমত্যের অবক্ষয় এবং ইসরাইলের নার্ভাসনেস- এসব উপাদান ইসরাইলের জন্য একটি কৌশলগত পরাজয়ের ইঙ্গিত করে। যুদ্ধ এখন থেমে গেলেও, গাজা পুনরুদ্ধারের জন্য ইসরাইল যে মূল্য দিয়েছে তা সম্ভবত পাঁচ মাস আগে গণনা করা যেত তার চেয়ে বেশি হবে।
সিসিকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না?
পশ্চিমাদের ইসরাইলনীতি বাস্তবায়নে প্রধান ভরসা ছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি। কিন্তু তিনি সব কথা শুনছেন বলে মনে হয় না। এর মধ্যে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় মিসরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন যে, কায়রো গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে দেবে না। আল-সিসি কায়রোতে মিসরীয়-ইউরোপীয় শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সাথে আলোচনা করেছেন।
আল-সিসি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন। মিসরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিসরীয় সীমান্তে গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাহ আক্রমণের বিষয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করেছে এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে। তিনি ‘গাজা উপত্যকায় অরক্ষিত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আক্রমণকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন। সেই সাথে অবরোধ, অনাহার, বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে টার্গেট করা এবং অবকাঠামো ধ্বংসসহ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তির নীতি বন্ধ করার জন্য ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছেন।
একটি জিনিস পরিষ্কার যে, ইসরাইল গাজা যুদ্ধে নিয়ন্ত্রকের আসনে নেই। অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়া ধরনের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পশ্চিমের জন্যও সহজ হবে বলে মনে হয় না। বিশ্লেষক ফারুক ইউসুফ মনে করেন, ইসরাইলের সাথে পশ্চিমাদের যোগসাজশ গাজা অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে না। সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও, ইসরাইল এখন অবধি প্রতিরোধকে নির্মূল করতে পারেনি এবং এটি এমন সময়ে করতে সক্ষম হবে না যখন এর অপরাধ আরো জঘন্য হয়ে উঠছে। পশ্চিমা সমর্থন নির্বিশেষে, ইসরাইল, এমন একটি ছোট ‘রাষ্ট্র’ যার কাছে এমন কিছু নেই যাতে একটি দীর্ঘ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা তাদের থাকবে। তবে যখন সে কোনো সমাধানের বিন্দুতে পৌঁছাবে না, তখন সে এমন একটা পরাজয়ের মুখোমুখি হবে যা তার ভেতরের সত্তাকে নাড়া দেবে। মুখে যাই বলুক না কেন এমনটাই আশঙ্কা নেতানিয়াহুরও রয়েছে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন