ডলারের যুগ শেষ হওয়া নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিপক্ষ দেশগুলোতে অব্যাহতভাবে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে বিকল্প মুদ্রা ও লেনদেন ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল ব্রিকস গঠন। সম্প্রতি সম্প্রসারণ করার পর সংস্থাটির সক্ষমতা ও কার্যকারিতা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সদস্য দেশ ডলার পরিহার করে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তির তথ্য পরিষেবা ব্যবস্থাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দিন আগে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে।
বিকল্প পেমেন্ট ব্যবস্থা
রাশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউরি উশাকভ গত ৫ মার্চ ঘোষণা করেছেন যে, উদীয়মান অর্থনীতির ব্রিকস ব্লক পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা কমাতে ডিজিটাল মুদ্রা এবং ব্লকচেইনের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন অর্থপ্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বিবেচনা করছে। এর মাধ্যমে শক্তিশালী গ্লোবাল সাউথ ব্লক বাণিজ্যকে ডি-ডলারাইজ করতে এবং ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক যুদ্ধের নীতিকে অতিক্রম করতে চাইছে।
প্রশ্ন হলো, এই ‘ব্লøকচেইন পেমেন্ট সিস্টেম’ কি ডলার যুগ বন্ধ করতে সক্ষম হবে? এটি কি ডলারের চাহিদা বা দাম কমাতে পারবে? এ প্রসঙ্গে উশাকভ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ব্লকচেইনের মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন ব্রিকস পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে প্রধান যে জিনিসটি নিশ্চিত করতে হবে তা হলো এটি যেন সরকারের জন্য উপযুক্ত হয়।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় চ্যানেল তাসের সাথে কথা বলার সময়, উশাকভ আরো বলেছেন, রিজার্ভ রেগুলেশনের উন্নয়নে কাজ অব্যাহত থাকবে। মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার সম্পর্কে আরো কাজ করা হবে।
রাশিয়ায়, ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় ত্রিশটি ব্যাংক সুইফটের চীনা বিকল্প চিপসে পরোক্ষ অংশগ্রহণকারী হিসেবে যোগদান করেছে। কিছু রাশিয়ান শিল্পগোষ্ঠী আরো রাশিয়ান ব্যাংককে তাতে যোগদানের জন্য চাপ দিচ্ছে। রুশ অর্থমন্ত্রীর মতে, চীন-রাশিয়ার বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ ২০২৩-এর প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর্জেন্টিনায় রেনমিনবির গুরুত্ব ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে, আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সোয়াপকে (বিনিময় লাইন) ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিগুণে বাড়ানোর একটি চুক্তি ঘোষণা করেছে। আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঘোষণা করে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেনমিনবি-নির্ধারিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেবে। ২০২৩ সালে ডলারের ঘাটতি এতটাই তীব্র ছিল যে, আর্জেন্টিনায় মার্কিন সংস্থাগুলো রেনমিনবির তুলনামূলক প্রাচুর্যের কারণে সেখানে অর্থপ্রদানের জন্য ডলারের পরিবর্তে রেনমিনবিকে বিবেচনা করছে বলে জানায়।
ডলারের যুগ বন্ধ হয়ে যাবে?
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে ২০১০ সালে ব্রিকস গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো মিসর, ইরান, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিকস সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর কারণে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ হওয়ার পর রাশিয়া ব্রিকস ব্লক বাণিজ্যকে ডি-ডলারাইজ করার জন্য বিশেষভাবে তৎপর হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা গত আগস্টে বলেন, ‘কেন ব্রিকস ব্যাংকের কাছে ব্রাজিল ও অন্য সব ব্রিকস দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে অর্থায়নের জন্য একটি মুদ্রা থাকবে না?’ শেষ পর্যন্ত ব্রিকস দেশগুলো তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী এবং ডলারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গত বছর তাদের স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়িয়েছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেহেদি সাফারি জানুয়ারিতে স্পুটনিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা ব্রিকস গ্রুপে একটি ঐক্যবদ্ধ মুদ্রা তৈরি করতে আগ্রহী এবং এটি খুব কার্যকর হতে পারে।’
ব্রিকসের ডি-ডলারাইজেশন প্রচেষ্টার নানা ধরনের মূল্যায়ন হচ্ছে। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের রবার্ট গ্রিন বিষয়টি বিস্তারিত দেখেছেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ব্রিকস ফোরাম প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে, সংস্থার নীতিনির্ধারকদের দ্বারা অ-ডলার মুদ্রার বৈশ্বিক ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে সামনে চলে এসেছে চীনা রেনমিনবি। তার মতে, ডলারের প্রতি হতাশা কিভাবে উদীয়মান বাজারে রেনমিনবির উত্থানকে সক্ষম করে এবং ভারতের মতো কৌশলগত অংশীদারদেরকে ডলার-বহির্ভূত মুদ্রার বৃহত্তর ব্যবহারের জন্য চাপ দিতে অনুপ্রাণিত করছে তা ওয়াশিংটনের জন্য উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে, সিনিয়র ব্রিকস নীতিনির্ধারকরা উদীয়মান বাজারে ডলারের আধিপত্যের সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এপ্রিল ২০২৩ সালে সতর্ক করেন, ডলারের কাছে বন্দী থাকার অর্থ হলো উদীয়মান বাজারগুলোর স্থায়ীভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিতে থাকা। ২০২৩ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যুক্তি দেয়া হয় যে, ডলারের বৈশ্বিক ভূমিকার একটি অন্তর্নিহিত ত্রুটি রয়েছে, যার ফলে মার্কিন অর্থনীতির দুর্বলতার শিকার হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের অর্থনীতি ক্ষতির শিকার হয়। তিনটি নতুন ব্রিকস সদস্য দেশ আর্জেন্টিনা, মিসর ও ইথিওপিয়া ডলারের তীব্র ঘাটতি আর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। ডলারের ঘাটতি অর্থনীতি-ব্যাপী ডলারের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন ঘটায়। আর্জেন্টিনা ও ইথিওপিয়ায় ২০২৩ সালে ডলারের ঘাটতি এতটাই তীব্র ছিল যে, কালোবাজারের বিনিময় হার সরকারি হারের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। মিসরে, ব্যাংকিং সিস্টেমের নেট বিদেশী সম্পদে জুন ২০২৩ সালে ব্যাপক রেকর্ড ঘাটতি সৃষ্টি হয়। জীবনযাত্রার ব্যয়েও এর প্রভাব পড়ে। অক্টোবর ২০২৩, মাসে আর্জেন্টিনার মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৪৩ শতাংশ, মিসরের ৩৬ শতাংশ এবং ইথিওপিয়ার ছিল ২৯ শতাংশ।
ব্রিকস দেশগুলোতে মার্কিন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ক্রমবর্ধমান প্রসারিত হওয়ার সাথে যুক্ত ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে ডলার ও ইউরোকে। বিশেষত, কিছু উদীয়মান বাজারের নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন যে, ভবিষ্যতে মার্কিন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো হঠাৎ করে প্রভাবশালী ডলার ও ইউরো-ভিত্তিক আর্থিক চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। এই উদ্বেগ স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময় বাণিজ্য চালাতে প্রভাবিত করছে।
ব্রাজিলের প্রথম রেনমিনবি ক্লিয়ারিং ব্যাংক ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক-পিবিওসি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল এবং সম্প্রতি ক্রস-বর্ডার রেনমিনবি পেমেন্ট নিষ্পত্তি শুরু হয়েছে। ব্রাজিলের কর্মকর্তারা দেশে রেনমিনবির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য কাজ চালিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
আগস্ট ২০২৩-এ, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রধান ব্যাংক এবং চীনের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক একটি দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব পুনর্নবীকরণ করে, যা পনেরটি আফ্রিকান বাজারজুড়ে রেনমিনবির ব্যবহার সহজতর করে। ২০১৯ সালে মিসরের বেশ কয়েকটি প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকে মিসরীয় ব্যবসায়গুলোকে রেনমিনবি অ্যাকাউন্ট চালানোর অনুমতি দেয়া হয়।
ডলারের বিকল্প ব্যবহারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো সম্ভবত সৌদি আরবে জ্বালানি সরবরাহকারীদের রেনমিনবিতে তেলের অর্থপ্রদান সহজতর করার লক্ষ্যে ২০২৩-এর নভেম্বরে চীনা ও সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে রেনমিনবিতে তেলের দাম পরিশোধ বিষয়ে চুক্তি। রিয়াদ চীনে তার তেলের প্রায় ২৫ শতাংশ রফতানি করে।
চীন ও আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ডিজিটাল কারেন্সি সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর হয় এবং সেই সাথে একটি চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও একটি বৃহৎ আমিরাতি ব্যাংকের মধ্যে একটি ডিজিটাল কারেন্সি কো-অপারেশন স্মারকলিপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর যৌথ-নেতৃত্বাধীন এমব্রিজ নামক ডিজিটাল মুদ্রা প্রকল্পটি ২০২২-এর শেষের দিকে তেল ও গ্যাসের জন্য রেনমিনবি পেমেন্টের পাইলট উদ্যোগ হিসেবে শুরু করেছে।
ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ইরান ২০১২ সাল থেকে চীন-ইরান বাণিজ্যের সুবিধার্থে রেনমিনবি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অনুসারে, দেশগুলোর মধ্যে ২৫ বছরের একটি ব্যাপক সহযোগিতার পরিকল্পনা বৈশ্বিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ‘মর্যাদা বৃদ্ধি করবে’। বেইজিংয়ে ২০২৩ সালের প্রথম দিকের বৈঠকের সময়, চীনা ও ইরানি কর্মকর্তারা আবারো রেনমিনবির আন্তঃসীমান্ত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। মে ২০২৩ সালে, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ইরানের সাথে বাণিজ্যের সুবিধার্থে রেনমিনবি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের আগস্টে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও অর্থায়নে রুপির ব্যবহার এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃসীমান্ত দিরহাম ব্যবহার বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অবশ্য এ সময়ে, ব্রিকস মুদ্রাগুলো বৃহত্তর আন্তঃসীমান্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৃতীয় দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। রুপির পরিবর্তনযোগ্যতা এবং অস্থিরতা নিয়ে এখনো বড় উদ্বেগ রয়েছে, যা রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যে এর ব্যবহার বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে হচ্ছে। ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায়, মুদ্রার অস্থিরতা এবং এই দেশগুলোর অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থার তুলনামূলকভাবে ছোট আকার তাদের মুদ্রার বিশ্বব্যাপী অর্থপ্রদানের মাধ্যম ও রিজার্ভ হিসেবে বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষমতা কমায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এই বিষয়ে রুবলের আকর্ষণ কম।
রেনমিনবি হলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ব্রিকস মুদ্রা। ২০২৩ সালে বিভিন্ন নীতির প্রচেষ্টায় ব্রিকস দেশগুলোর ব্রিকস মুদ্রার বৈশ্বিক ব্যবহার আরো বাড়াতে বেইজিংয়ের লক্ষ্য দেখা যায়। তা সত্ত্বেও, ডলারের তুলনায় চীনের বাইরে রেনমিনবি ব্যবহার এখনো বেশ সীমিত, তবে তা ধীরে হলেও বাড়ছে।
যেসব দেশে চীনের সাথে উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিদ্যমান, নীতিনির্ধারকরা রেনমিনবি সম্পদ হিমায়িত হওয়ার ভয়ে এবং উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে রেনমিনবি পেমেন্ট চ্যানেলগুলো বন্ধ বা নজরদারি হওয়ার ভয়ে রেনমিনবির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার মেনে নিতে নারাজ হতে পারে। রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যে ভারতীয় কোম্পানির রেনমিনবি পেমেন্ট নিয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের সাম্প্রতিক উদ্বেগ সম্ভবত এই ধরনের চিন্তার দ্বারা চালিত।
প্রভাব বিস্তারের যুদ্ধে অর্থনৈতিক টুলস
২০২৩ সালের আগস্টে, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, ‘বৈশ্বিক আর্থিক ও অর্থপ্রদান ব্যবস্থাগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আংশিকভাবে ইউরো এবং ডলারের বিকল্পগুলো অন্বেষণ করা ছাড়া একটি ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত বিশ্বে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা আছে বলে মনে হয় না।’
ব্রিকসের নতুন সদস্য ইরান তার আগেই উল্লেখযোগ্য মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে। এতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার অন্তর্গত চীন, ভারত ও রাশিয়ার সাথে ইরানও ২০২৩ সালের মে মাসে নন-ডলার মুদ্রার ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির ঘোষণা দেয়। চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া রিপোর্ট করেছে যে, ইথিওপিয়া সরকার মার্কিন সরকারের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে ব্রিকসে যোগদানের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে অর্থনৈতিক উপকরণগুলোর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ইউরোপ তাতে সাড়া দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান টুলস হিসেবে ব্যবহার হয়েছে বৈশ্বিক লেনদেনে প্রভাবশালী মুদ্রা ডলার এবং বিশ্বের প্রভাবশালী আর্থিক বার্তাব্যবস্থা, আন্তঃব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট)। যেসব দেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা সেসব দেশের রিজার্ভ আটকে দেয়া হয়। আর সে দেশের ব্যাংকগুলোকে সুইফট থেকে বের করে দেয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞার টুলসের নির্বিচার ব্যবহার এবং বৈশ্বিক অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ওপর পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ থাকায় বিকল্প ব্যাংক হিসাবে তৈরি করা হয়েছে ব্রিকস। এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্রিকস মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে পারলে এবং সিপসের মতো সুইফটের বিকল্পকে জনপ্রিয় করতে পারলে এর প্রভাব শুধু আমেরিকার আর্থিক আধিপত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, একই সাথে আমেরিকান ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবও তাতে কমে যাবে। এই উদ্যোগে এখন শুধু পশ্চিমের প্রতিপক্ষ দেশগুলো যুক্ত হচ্ছে তা-ই নয়, পশ্চিমা বলয়ের দেশগুলোও যুক্ত হচ্ছে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন