সাপ্তাহিকী
|
আবু সাইদ মাহফুজ
|
|
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘ব্যতিক্রম’ অতীত স্মৃতির পাতা থেকে
24 Aug, 2014
বাংলাদেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল অনেক অনেক আগে থেকেই। সর্বশেষ দাবির প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালে তৎকালিন বি.এন.পি সরকারের সময়ে কুষ্টিয়া-যশোর সীমান্তে দেশের প্রথম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন দাবি ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় চাই। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে। তখন জনগনকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিংবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে ১৯৮৩ সালে জেনারেল এরশাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুরে স্থানান্তরের ঘোষণা দেয়। ১৯৮৪-৮৫ সালে ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ সেশনে ছাত্র ভর্তি করা হয়।
এক বুক আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে সেদিন আমরা দেশের একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ১৯৮৫-৮৬ সেশনে ভর্তিকৃত ছাত্রদের প্রায় সকলেই এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি মোট ১৪০০ নম্বর প্রাপ্ত ছিল। কিন্তু আমাদের সে আশার গুড়ে বালি দেয়া হয়েছিল। গাজীপুর ক্যাম্পাসে আমরা যখন ক্লাস শুরু করি তখন ক্যাম্পাসে কিছুই ছিল না। সর্বসাকুল্যে যা ছিল তা হলো একটি আবাসিক ছাত্রাবাস, একটি ক্যাম্পাস ও ছোট্ট একতলা একটি রেজিস্ট্রার ভবন। এই দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বাস ছিল না। কোন কোন ছাত্র ঢাকা থেকে লোকাল বাসে চড়ে গাজীপুর এসে ক্লাস করতো। ১৯৮৮ সালের ১৬ অক্টোবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বাসচাপা পড়ে নিহত হলে ছাত্ররা বিক্ষুদ্ধ হয়ে দুটি কোস্টারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে ইস্যু করে ২ দিন পর ১৮ই অক্টোবর জাতীয় পার্টির এম.পি হাসান সরকারের লেলিয়ে দেয়া পেটোয়া বাহিনী হামলা চালিয়ে আমাদের শতাধিক কক্ষ জ্বালিয়ে দেয়।
যে সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচণ্ড সেশন জট থাকতো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করতে ৪-৫ বছর বেশী লাগতো, সে যুগে ১৯৮৬ সালে ক্লাস শুরু করে ঠিক ৩ বছরেই ১৯৮৯ সালে ১ম ব্যাচ তাদের অনার্স কোর্স সমাপ্ত করে। একটা উল্লেখযোগ্য অংশ প্রথমবারেই বি.সি.এস পাশ করে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়, আবার কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যায়।
‘ব্যতিক্রম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ’ ঃ
পৃথিবীর যে কোন সমাজ বিপ্লবের পেছনে সাহিত্যের ভ‚মিকা থাকে মুখ্য। সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশহীনতায় কোন সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। রাসুলুল্লাহর বিপ্লবী আন্দোলনের পেছনে পবিত্র কুরআনের অসাধারণ সাহিত্য যে ভ‚মিকা রাখে তাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না। কুরআন এবং হাদীস ছাড়াও আরবের সে যুগে সাহিত্য ছিল সমৃদ্ধ। কার্ল মার্কসের বিপ্লবী আহ্বানের পেছনে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটি প্রভাবশালী ভ‚মিকা রাখে, এছাড়াও মার্ক্সের ‘দাস ক্যাপিটাল’ বইটির ভ‚মিকাও অনস্বীকার্য। এভাবে পৃথিবীতে সংঘটিত সকল সমাজ বিপ্লবকে পর্যালোচনা করলে সাহিত্য সংস্কৃতির ভ‚মিকা চোখে পড়ে। আধুনিক যুগে ইসলামী অঙ্গনে মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদীর সাহিত্য বা তাবলীগ জামাতে মাওলানা ইলিয়াস রচিত তাবলীগি নেসাব ভ‚মিকা রাখে। তেমনিভাবে বাংলাদেশের বামপন্থীদের আন্দোলনে সাধারণ জনগনের মধ্যে কোন সমর্থন না থাকলেও ব্যাপক সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা এবং সাংবাদিকতার মাধম্যেই বাংলাদেশের সমাজ রাজনীতিতে বামপন্থীরা বিরাট প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
একটি সুন্দর সুশীল সমাজ বিপ্লবের প্রত্যাশায় সেদিন আমরা ‘ব্যতিক্রম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করি। আমরা চেয়েছিলাম একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমাজ ব্যবস্থা। যে সমাজ হবে সত্য, সুন্দর এবং শান্তির প্রতিকৃতি। ‘ব্যতিক্রমের’ প্রথম কার্যক্রম বেশীর ভাগ আমাকে এবং সানোয়ার জাহানকেই করতে হয়েছে। সানোয়ার এখন সরকারের অনেক বড় কর্মকর্তা। সানোয়ারের হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর। মহান একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আমরা প্রথম যে দেয়ালিকা বের করেছিলাম তা পুরোটাই ছিল সানোয়ারের হাতে লেখা। তাছাড়া তার ছন্দজ্ঞান খুবই ভাল, সুন্দর ছড়া লিখতে পারতো।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আবার কুষ্টিয়া স্থানান্তর হলে আমাদের প্রথম ব্যাচের জন্য সেটা ছিল আরেকটু কঠিন পরীক্ষা। পি.টি.আই এবং মেডিকেল সেন্টারের কিছু ভবনে শরণার্থীর মত ক্লাস এবং আবাসন চালিয়ে যাই। কেউ কেউ কুষ্টিয়া শহরের মেসগুলোতে ভাড়া থাকে, যেগুলোর মধ্যে ‘নিরালা মেস’ ছিল সবচে’ প্রসিদ্ধ। ‘ব্যতিক্রমে’ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য কারণে ক্লাস শুরুর কয়েক মাস আগেই আমি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলে আসি। সে সময় শেখপাড়া বাজার থেকে ২-৩ মাইল দক্ষিণের মদনডাঙ্গা বাজারের পাশে লজিং থাকি কয়েক মাস। সে সময় আমি এবং আমার দু’বছরের জুনিয়র আবদুদ দাইয়ান ইউনুস এবং ইউনুসের এক সহপাঠি যিনি শেখপাড়া বাজারের ঠিক পাশেই লজিং ছিলেন- আমরা এই দু’তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকি। প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে আমি একাই ছিলাম সেখানে যে কারণে আমার বেশী দিন মন টেকেনি। তখন ২-৩ মাস পর আমি কুষ্টিয়া শহর চলে আসি। সম্ভবত ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে আমরা মদনডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন হাইস্কুলে একটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। সে প্রতিযোগিতা বাস্তবায়নে আমি এবং আবদুদ দাইয়ান ইউনুস এলাকার প্রতিটি স্কুলে যাই এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে উদ্বুদ্ধ করি। সে প্রতিযোগিতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়া শাখা- পুরস্কার হিসেবে প্রদত্ত সকল বই সরবরাহ করে। ১৯৯০ সালের মদনডাঙ্গা হাইস্কুলের সেই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছিল একটি বিরাট অনুপ্রেরণা। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত হই।
এছাড়াও ‘ব্যতিক্রম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আমরা সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ দেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তদানিন্তন দৈনিক জনতার রিপোর্টার আলমগীর, আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম সহ-সভাপতি হিসেবে। ১৯৯০সালের শেষ দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা চলে আসার আগ পর্যন্ত আমরা বেশ কিছু সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়েছিলাম। ১৯৮৯-৯০ সালে ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ সিরাজুল ইসলামের অপসারণের পর ‘ব্যতিক্রম সাহিত্য সংস্কৃতিক পরিষদ’ কুষ্টিয়া শহরের মেডিকেল ক্যাম্পাসে একটি দেয়ালিকা প্রকাশ করে।
লেখক ঃ আমেরিকা প্রবাসী, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ‘ব্যতিক্রম সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদ’
পাঠক মন্তব্য
Dear AlannahThank you for a great workshop. I am so pleased to have a website up and running and to have learnt how to edit it.For the email address, I am quite happy to have Louise in it and so would like to go ahead.I would also like to know how I can have the website in French as well as EnnhLsh.Tlagksiouise
Catcher is a hard book to read sometimes. I read it when I was in HS for fun and I thought Holden was the most obnoxious little shit ever; he'd have fit in well with the grungers at school. Now that I'm an adult I understand more about Holden's dissatisfaction of the &qoen;photuy" world of prep school, etc. I'm re-reading Catcher right now so we'll see what I think on my third read-through.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন