সাপ্তাহিকী
|
মোহাম্মাদ আল-আমিন
|
|
মহিষের রাজত্ব
24 Aug, 2014
এই বনে বাঘ নেই তাই মহিষই রাজা।
এমন অদ্ভুত রাজ্যে আম জনতার মাঝে আছে ছাগল, ভেড়া, গরু এবং গাধারা। শিয়াল হলো পন্ডিত কুল, তারা সারা জীবনই ধূর্ত। নিজেদেরকে এরা সুশীল বলে পরিচয় দেয়। সময়ের প্রয়োজনে মিডিয়ার সামনে আসে। ব্যাঙ যেমন আষাঢ় মাসে ঘ্যাঙ্গর ঘ্যাং করে,এরাও তাই। দুধের সর খাওয়া তাদের খুউব প্রিয়। এক বাটি ঘি পেলে তো কথাই নেই।
মজার বিষয় হলো, মহিষের মাথা মোটা বুদ্ধিতে ভরপুর হলেও চিকন বুদ্ধির শিয়ালকে সব সময় কাছে রাখে। শলা পরামর্শ নেয়। তাই ওদেরকে বাড়তি সুযোগ সুবিধাও দেয়া হয়। বাস্তবিক কারনেই মহিষ আজকাল শিয়াল সম্প্রদায়কে কে বেশ তোয়াজ করে চলে।
সময় বদলে গেছে, ছাগল-ভেড়া গুলি চালাক হইছে। এরাও ক্ষমতা চায়। আম জনতাও তাদের পক্ষে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ক্ষমতায় যাবে ক্যামনে? তা নিয়ে শুরু হলো মহা চিন্তা ভাবনা! ছাগল ভেড়ার বাল-বাচ্চার সংখ্যা অনেক, কিন্তু মাথার ঘেলু কম। আম জনতা বললো ‘গনতন্ত্রের বিকল্প নাই, আমরা আপনাদের সাথেই আছি, একটা করে ভোট দিলেই তো আপনারা ক্ষমতায় যেতে পারবেন। খুউব সহজ হিসেব!’
এমন খবর শুনে মহিষ পড়লো মহা চিন্তায়! নির্বাচন হলে তো ‘খাওয়া নাই’। এখন কী করা যায়? শিয়াল পন্ডিতের শরণাপন্ন হলো মহিষ রাজা। ৩ দিন ব্যাপী কর্মশালা চললো। অবশেষে শিয়ালের পরামর্শ ‘যেভাবেই হোক নির্বাচন একটা হতেই হবে, তাছাড়া ঐ পশ্চিমের বনে টাইগার বাঘ আছে সে মাইন্ড করতে পারে’। মহিষের ভয় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তো জিতবেনা! শিয়াল বললো- চিন্তা কইরোনা মিয়াঁ, যা বলি তাই শোন... । সিচুয়েশান ইজ আন্ডার কনট্রোল।
গরু সম্প্রদায় থেকে বলদ কে দেয়া হলো নির্বাচন কমিশানের দায়িত্ব। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বলদ ঘোষনা করলো আগামি ৫ জানুয়ারী নির্বাচন। কেউ আসলেও নির্বাচন, না আসলেও নির্বাচন। কারো পাছায় তেল মারতে পারবো না। বলদ হলেও আমি এক কথার মানুষ।
ছাগল-ভেড়া বললো ‘ইডা আপনি কী কন! আপনে হলেন নিরপেক্ষ, এমন অসভ্য কথা কন ক্যামনে?’
ছাগল ভেড়া ম্যা ম্যা করতে থাকলো। বিক্ষোভ মিছিল করলো, তারা আরো বললো- এই বলদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়! আমরা নির্বাচনে যাবো না...
চারি দিকে টান টান উত্তেজনা...। তবুও ৫ জানুয়ারী মেঘলা দিনে ঘন অন্ধকারে নির্বাচন হলো। এই নির্বাচনে যিনি গোল কিপার তিনিই স্ট্রাইকার। দিন শেষে ফলাফল সম্প্রচার হলো। বিশ্ব ব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলো। তারা বললো-‘ইহাকে আর যাই হোক নির্বাচন বলা যায়না’। যেখানে কোন প্রার্থীই ছিলনা বিনা ভোটে অটো এমপি হলো, সেটাকে গনতন্ত্র বলে ক্যামনে?
বলদ নিজেই ঘোষনা করলো ‘হে হে হে... (স্মাইল ইমো) আমি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দারুন সফল!’
মহিষ বললো- এতো চিল্লা পাল্লা কিসের? খামোশ!
‘খারাপ’ হলেও তো একটা নির্বাচন হইছে। যত কিছুই হোক শেষমেশ গনতন্ত্র তো রক্ষা হলো! আমরা আছি বলেই আজ ‘গনতন্ত্র রক্ষে পেলো’। এইটা আমার বাপের স্বপ্ন আছিল। আমার বাপ এই রকম গণতন্ত্র কায়েমের কথা মরবার আগে আমারে কানে কানে কইয়্যা গেছিলো। তোমরা যত কিছুই কও, আব্বার স্বপ্ন আমি পুরন করবোই করবো।
এক পুঁচকে গাধা বললো ‘এইডা কী হইলো’! আমরা ভোট দিবার পারলাম না ক্যান! বাপের জন্মেও তো এমন নির্বাচন দেহিনাই। এক বুড়ো গাধা ঠাস করে গালে একখান চড় বসিয়ে বললো- শালা, এই জন্যেই তো তোরে সবাই গাধার বাচ্চা কয়! চুয়াত্তুর সালে দেখিস নাই?
পুচকে বললো চুয়াত্তুর সালে তো আমার মায়েরই বিয়ে হয় নাই, আমি দেখবো কী করে?
বুড়ো গাধা কয়- তাইলে শোন, ওই সময় এই বনে এক বাঘ ছিল। বাঘ আর শিয়াল মিলে এক নতুন তন্ত্র কায়েম করলো যার নাম ইতিহাসে ‘বাঘ-শিয়াল’ নামে পরিচিত। অনেকে এইডারে আদর কইরা ‘বাঘশেল’ নামেও জানে। ওই সময়েও এইরাম নির্বাচন হইতো।
‘জারজ’ হলেও নিঃসন্তান মহিলা যেমন মনে মনে খুশি হয়, মহিষের মনেও তেমন আনন্দের ঢেউ! তবুও আন্তর্জাতিক চাপে মহিষ ঘোষনা করলো, এই গ্রীষ্ম কালেই আরেকটি নির্বাচন। ছাগল-ভেড়া, আবুল-ডাবুল যারা আছ সবাইকে নিয়েই সেই নির্বাচন হবে। সবুর করো মিয়াঁরা।
ছাগল ভেড়া সহজ সরল মনে এই ঘোষণা বিশ্বাস করে গ্রীষ্ম কালের জন্য তাওয়া গরম করতে থাকলো...
সময় এখন গ্রীষ্ম কাল। প্রচন্ড গরম চারিদিকে। মহিষের চামড়ায় ঘর্ম গ্রন্থি (sweat gland) নাই, তাই সে ঘামতে পারেনা। না ঘামার কারনে প্রচন্ড গরমে মহিষের শরীরে আগুন ধরে যায়। গ্রীষ্ম কাল এলেই মহিষ নদীর জলে ডুব দিয়ে থাকে। শুধু পানির উপরে দুই নাক বের করে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়।
গ্রীষ্ম কাল প্রায় শেষ। বর্ষা শুরু হবে ক দিন পরেই। ছাগল ভেড়ারা ম্যা ম্যা শুরু করলো, নির্বাচন কই, নির্বাচন কই? মহিষের কোন রা নাই। মহিষ কে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। শুরু হলো খোঁজা খুঁজি। অবশেষে মহিষ কে পাওয়া গেলো ‘চিস্তা নদীর জলে’।
ছাগল ভেড়ারা এক যোগে চিস্তা নদীর পাড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকলো ‘নির্বাচন কই, নির্বাচন কই?’
মহিষ মনের আনন্দে চিস্তার জলে কান ডুবিয়ে গান গায়। সারা দিন ছাগল ভেড়ারা আন্দোলন করলো, তুমুল আন্দোলন! বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। হঠাৎ ঈষান কোনে কালো মেঘ। ছাগল-ভেড়ারা অবাক হয়ে বললো, কী ব্যাপার! এতো তাড়াতাড়ি রাত হলো ক্যান? পিছন থেকে জল ছিটায় কে?
শুরু হলো দমকা হাওয়া সাথে ঝুম বৃষ্টি। নদীর জলে কান ডুবিয়ে রিম ঝিম বৃষ্টির গান শুনতে কার না ভালো লাগে! মহিষের মনে সেই পুরোনো দিনের রোমান্টিক স্মৃতি জেগে উঠলো... । মহিষ গাইতে শুরু করলো -
“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে
জানি নে, জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগে না"।।
এদিকে ছাগল ভেড়ার দল বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ভিজতে ভোঁ দৌড়...
লেখক ঃ গবেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন