সাপ্তাহিকী
|
লোকমান বিন নূর হাশেম
|
|
স্বাগতম হে মাহে রমজান
05 Jul, 2014
স্বাগতম হে মাহে রমজান। দীর্ঘ এক বছর পর আবার আমাদের দ্বারে উপস্থিত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। রমজান মাসে মুসলামাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেন মুসলমানগণ তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: ইয়া আয়্যূহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম কামা কুতিবা আলল্লাযিনা মিন ক্ববলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন। অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা : আয়াত-১৮৩)
হজরত সালমান ফারসি (রা.) একটি দীর্ঘ হাদিসে রমজান মাস সম্পর্কেই বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে একটি ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণে তিনি বলেন—‘বিরাট পুণ্যময় বরকতপূর্ণ একটি মাস তোমাদের নিকটবর্তী। এ মাসটি এতই পুণ্যময় যে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের দিনের বেলায় তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। আর কিয়ামুল লাইল (তারাবিহ নামাজ) সুন্নত হিসেবে প্রতিপালনীয় করেছেন। এ মাসে ভালো কাজের প্রতিদান এত অধিক যে, কোনো ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলে অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের প্রতিদান পাবে। আর এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের প্রতিদান পাবে। এই মাসটি ধৈর্য ও সবরের মাস। আর ধৈর্য-সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি সহমর্মিতার মাস। এটি এমন এক পুণ্যময় মাস যে মাসে মুমিনের রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটানো হয়ে থাকে। এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়, জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়া যায় এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াবের অংশীদার হয়; কিন্তু রোজাদারের সওয়াবের কোনো হ্রাস হয় না।’
আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকেই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন—‘আল্লাহ তায়ালা এই পরিমাণ সওয়াব ওই ব্যক্তিকে প্রদান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে সামান্য দুধ দিয়ে কিংবা খেজুর দিয়ে কিংবা পানির শরবত দিয়ে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে পেট পুরে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউছারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন। এ পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করার আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাতের। এ মাসে যে ব্যক্তি নিজের অধীনস্থদের কাজকর্ম হালকা করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দেবেন।’ (মিশকাত শরীফ)
রোযাদারকে অশ্লীল বেহুদা কথাবার্তা বলা এবং গালমন্দ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সা:। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়, বরং প্রকৃত রোজা হলো বেহুদা-অযাচিত কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।’
রোযা কি ?
সিয়াম আরবি শব্দ এর বাংলা অর্থ রোজা। রোজা মূলত ফার্সি শব্দ। সিয়াম শব্দটি এসেছে সাওম থেকে যার অর্থ বিরত থাকা।
পারিভাষিক অর্থে নিয়তের সহিত সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে থেকে বিরত থাকা কে সওম বা রোজা বলে। ।
রোযা কার জন্য ফরজ :
রোজা কাদের উপরে ফরজ সে বিষয়ে আলোচনা করছি। রোজা ৮ শ্রেণী মানুষের ওপর ফরজ।
১. মুসলমান হওয়া।
মুসলিম ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা কোন অমুসলিমের জন্য ফরজ নয়।
২. বালেগ হওয়া।
নাবালগের ওপর রোজা ফরজ নয়, অর্থাৎ ১২ বৎসর বয়সের কম বয়স হলে রোজা ফরজ হবেনা।
৩. সুস্থব্যক্তি হওয়া। শারীরিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখার নিয়ম নাই। তবে সাধারন অসুখ হলে যদি সে রোজা রাখার উপযোগী হয় তবে সে রোজা রাখতে পারবে।
৪.সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হওয়া। পাগলের ওপর রোজা ফরজ নয়।
৫.স্বাধীন হওয়া।পরাধীন নয় এমন ব্যক্তি হওয়া।
৬.সজ্ঞান হওয়া। যিনি রোজা রাখবেন তিনি নিজ জ্ঞানে বা স্বেচ্ছায় আল্লাহর হুকুম পালন করবেন।
৭.মুকিম হওয়া। স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া। মুসাফিরের ওপর রোজা ফরজের ব্যপারে একটু ভিন্নতা আছে। যেমন কষ্টসাধ্য ভ্রমন হলে পরবর্তীতে রোজা আদায়ের বিধান আছে। আমি মনে করি বর্তমানে সফর অনেক আরামের সাথে করা যায় তাই সফর অবস্থায় একমাত্র কাহিল হয়ে না পড়লে রোজা রাখা উচিৎ।
৮.তাহীরা অর্থাৎ পবিত্রতা হায়েজ-নেফাস মুক্ত হতে হবে।
রমাজানের রোযা একটি অন্যতম ফরজ ইবাদত। কোন কারনে যেন রোযা ভঙ্গ হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। তাই রোযা ভঙ্গের কারণগুলো আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন।
রোযা ভঙ্গের কারণ ৮ টি
১. স্ত্রী সহবাস : রোযাদার যদি রমাযানের দিনে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয় তবে উক্ত রোযা কাযা আদায়সহ জটিল কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর তা হলো : একটি গোলাম আজাদ করা, যদি সামর্থ্য না থাকে তবে ধারাবাহিক দুই মাস (মাঝে বিরতি ছাড়া) রোযা রাখতে হবে আর যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।
২. বীর্যপাত : জাগ্রতাবস্থায় হস্ত মৈথুন, স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা, চুমো দেয়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে রোযা বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৩. পানাহার : উপকারী বা তি কারক (যেমন ধূমপান) কোন কিছু পানাহারে রোযা ভেঙে যায়।
৪. ইনজেকশন যোগে খাদ্যের সম্পূরক খাদ্য জাতীয় কোন কিছু প্রয়োগ করলে। কিন্তু তা যদি খাদ্যের সম্পূরক না হয় তবে শরীরের যেখানেই প্রয়োগ করা হোক যদিও তার স্বাদ গলায় অনুভূত হয় রোযা নষ্ট হবে না।
৫. ইনজেকশন যোগে রক্ত প্রয়োগ : যেমন রোযাদারের যদি রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় আর তার ফলে ইন্জেকশন প্রয়োগে রক্ত প্রবেশ করান হয় তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৬. মাসিক ঋতু স্রাব ও সন্তান প্রসব জনিত স্রাব।
৭. শিংগা বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে রক্ত বের করা, তবে যদি রক্ত স্বাভাবিকভাবে যেমন নাক থেকে রক্তরণ বা দাঁত উঠানোর ফলে বা এ ধরনের অন্য কারণে বের হয় তবে রোযা বিনষ্ট হবে না।
৮. বমি করলে : ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা নষ্ট হবে কিন্তু অনিচ্ছায় বমি করলে রোযা নষ্ট হবে না।
পবিত্র রমজান মাস পেয়েও যে নিজের গুনাহ মাফ করতে না পারে তাকে রসুলুল্লাহ সা: ধিক্কার জানিয়েছেন। তাই আসুন এই তাৎপর্যপূর্ণ মাসের পরিপূর্ণ ফায়দা হাসিলে স্বচেষ্ট হই।
লেখক: সৌদি আরব প্রবাসী সাংবাদিক।
পাঠক মন্তব্য
Thanks Reina, the award has certainly increased traffic I have to say I love the holidays, I become even more of a hermit (not sure if th8&;a217#ts a good thing or not lol) I can’t wait to see more of you beautiful work, Cheers Kelly
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন