
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে অবাধে আসছে গরু-মহিষ। চোরাই গবাদিপশুতে সয়লাব হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়ার হাট-বাজার। অবৈধভাবে আসা এসব গরু-মহিষ চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারাসহ নানা স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো কক্সবাজার জেলায়। এর ফলে দেশীয় গরুর খামারিরা যেমন পড়েছেন নিদারুণ বিপাকে, তেমনি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এদিকে প্রশাসন বলছে, এসব অবৈধ পশুর হাট বন্ধ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে তারা। কিন্তু এখনও প্রতিদিনই বসছে অবৈধ হাট আর হাটগুলোতে চোরাই গরু-মহিষের ব্যবসাও চলছে ধুন্ধমার।
সরেজমিনে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের একটি গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে পাশের দেশ মিয়ানমার হতে পাচার হয়ে আসা এসব গরু-মহিষ। দেশীয় গরু-মহিষের সঙ্গে চোরাই মহিষগুলোর পার্থক্য খুবই সূক্ষ্ম। তাই না জেনে-বুঝেই সামান্য লাভের আশায় এসব গবাদিপশু কিনছেন স্থানীয়রা। এই একটি হাটেই দিনে অন্তত ২০-২৫টি চোরাই গরু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যার আনুমানিক মূল্য ১৫-১৬ লাখ টাকা। এ রকমভাবে জেলার সব কয়টি চোরাই হাটে দিনে কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করে নিচ্ছে গরু চোরাকারবারিরা। যার এক টাকা রাজস্বও ঢুকছে না রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। আর একই সঙ্গে ঠকে যাচ্ছেন দেশীয় গরুর খামারিরা। উচ্চমূল্যের বর্তমান বাজারে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং চকরিয়ার মানিকপুর থেকে শতাধিক গরু-মহিষ জব্দ করেছে বিজিবি। চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫টি গরু জব্দ করে নাইক্ষ্যংছড়ির তীরডেপা বিজিবি ক্যাম্প। জব্দকৃত গরুগুলো পরে চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ পাচারের অথ্য জোগাড় করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য। স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবান সীমান্ত নতুনভাবে গরু পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই পথে মাসে অন্তত ২০ কোটি টাকার গরু-মহিষ দেশে আসছে। পাচারের কাজে মুনাফা লাভ করছে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। গবাদিপশু পাচারের অর্থে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে তারা। তা ছাড়া দেশের খামারিদের অবস্থা শোচনীয় হচ্ছে। এ অবস্থা আরও করুণ হবে সামনে। নতুন করে খামার করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশীয় গরুর খামারিরা। তাই এখনই এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গবাদিপশুর কারণে দেশীয় খামারিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আগামী কুরবানির ঈদের আগে যদি এসব গবাদিপশু আনা বন্ধ করা না হয়, তাহলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় খামারি জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের দাম চড়া। তারপরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদি পশু লালন-পালন করছি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু আসার কারণে বাজারে দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পশু চিকিৎসক মো. মোস্তাকিম বলেন, চোরাই পথে আসা গরুর স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ গরু-মহিষের নানা রোগ থাকার ঘটনা আমরা দেখেছি। তাই এসব গরু-মহিষ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেসব জায়গায় এসব পশুর হাট বসেছে, সেখানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।