একের পর এক হিট এলার্ট দিয়ে যাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রার পারদ দিনকে দিন চড়ছে। তাপপ্রবাহের শুরু থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আলোচনা ছিল। এ কারণে ঈদের ছুটির পর এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল স্কুল কলেজ। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই গত রোববার থেকে খুলে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। খোলার দিন দুই শিক্ষক এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় গরমজনিত কারণে। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়ে আরও অনেকে। এমন অবস্থায় গতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা বৃৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। এই আদেশের পর প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু গোলক ধাঁধায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্কুল কলেজের ছুটি নিয়ে।
উচ্চ আদালনের নির্দেশনার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি এও বলেছেন যে, উচ্চ আদালতের লিখিত নির্দেশনা পেলে এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দেয়া হলেও তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার ২৭ জেলায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। বাকি জেলাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বন্ধের নতুন নির্দেশনা না আসায় এসব জেলায় আজ শ্রেণি কার্যক্রম চলার কথা। এদিকে ছুটি নিয়ে একেক রকম সিদ্ধান্ত আসায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, একক সিদ্ধান্ত হলে বন্ধ বা ক্লাশ চলা নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হবে না।
গতকাল ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ থাকলেও ক্লাসে যেতে হয়েছে কোমলমতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের। এরপর সারা দেশ থেকেই আসতে থাকে অসুস্থ হবার সংবাদ। সাধারণত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুসরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। এবার তার ব্যত্যয় ঘটে। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানায়, সারা দেশে বহমান তীব্র দাবদাহের দরুণ শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
ঝামেলা বাধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। গতকাল পাঁচ জেলায় বন্ধ ছিল ক্লাস। আর বিকালে মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় আজ ঢাকাসহ ২৭ জেলায় ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, দেশে চলমান দাবদাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।
একইদিন চলমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সব শ্রেণির ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাসচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত এ আদেশ দেন।
গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন তুলে ধরে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মনির উদ্দিন। তিনি জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিক পরীক্ষা এই আদেশের আওতামুক্ত থাকবে।
উচ্চ আদালতের এই আদেশের পর শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আসতে হবে? হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান তিনি।
এ সময় সাংবিধানিকভাবে যার যা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালন করা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়? যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার তো কোনো কারণ নেই। এর আগে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর ছুটি ঘোষণা নির্বাহী এখতিয়ার। ক’দিন ছুটি থাকবে বা থাকবে না এটা একটা বিশেষায়িত বিষয়। এটা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন