আনুষ্ঠানিকভাবে আরও একবার ভেঙেছে প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুজিবুল হক চুন্নু। তবে তাদের বহিষ্কার করে পাল্টা আরেকটা কমিটি ঘোষণা করেছেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। কমিটিতে রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ নির্বাহী চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এরশাদ পরিবারের এই দুই শীর্ষ নেতার বিভক্তির প্রভাব পড়েছে জাতীয় পার্টির তৃণমূল ও কেন্দ্রের রাজনীতিতে। তাদের এই বিভক্তি দিনে দিনে দলকে আরও দুর্বল করছে। যার প্রভাব পড়েছে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। কমিটি আর পাল্টা কমিটি ঘোষণা করলেও ভোটের মাঠে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টি।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রওশন ও তার অনুসারীরা নির্বাচন থেকে বিরত থাকলেও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। শাসকদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিলেও মাত্র ১১টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে দল ও দলের বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আর এই সুযোগে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ।
তবে ক্ষমতার দ্বন্ধে দুই শীর্ষ নেতার বিভক্তিতে দলের বিনাশ হচ্ছে। দিনে দিনে ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা কমছে দলটির। যার প্রমাণ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও জি এম কাদের কিংবা রওশন অনুসারীরা ভোটের মাঠে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। সংসদ নির্বাচনের বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে জামানত হারানোর ভয়ে এবার কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। অপরদিকে দলের তৃণমূলের নেতারা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে কেন্দ্রের ওপর বিরক্তির কারণে সাংগঠনিক কাঠামোও নেতিয়ে পড়েছে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রথম ৩ ধাপের নির্বাচনে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রংপুরে ৫টি, দিনাজপুর, নরসিংদী, খাগড়াছড়ি সদর, বরিশালের সদর ও মূলাদীতে ১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে।
এবার শাসকদল আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছে তাদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙল কিংবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় উপজেলা নির্বাচন ও বর্জন করছে। এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয় লাভের নিশ্চয়তা না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নয় নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে তারা মনে করছেন, সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নিয়েও মাত্র ১১টি আসন পেয়েছিল দলটি। ২৬৪টি আসনের মধ্যে ২৪৪টিতেই জামানত হারাতে হয়েছিল দলীয় প্রার্থীদের। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন বর্তমান সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বাইরে কারও জয়লাভের সম্ভাবনা নেই, ফলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারানো কিংবা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া তাদের হাতে অন্য কোনো অপশন না থাকায় তারা নির্বাচন থেকে বিরত থাকছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলেও দল থেকে সহযোগিতা করা হয় না, দলীয় সংসদ সদস্যরা নিজেদের প্রার্থী রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ। রওশন এরশাদের সঙ্গে দলের মূলধারার কেউ নেই। তবে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক শক্তিশালী প্রার্থী সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা না থাকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী নয়। আমরাও কাউকে জোড় করছি না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন