মাত্র তিন মাস বয়সী বর্তমান সরকার। তবে তিন মাসের মধ্যেই সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের এক মন্ত্রণালেয়র সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় নেই। এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে স্ববিরোধী অবস্থান গ্রহণ করছে।
ঈদের ছুটির কথাই ধরা যাক। ঈদের ছুটি নিয়ে সরকারের ভিতরে স্ববিরোধিতার প্রকাশ্য প্রতিফলন ঘটল। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি ৯ এপ্রিল ছুটি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। এ ধরনের সুপারিশ সাধারণত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাকচ হওয়ার ঘটনা খুবই কম। কিন্তু এই বিষয়টি নাকচ হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নেতৃত্ব দেন সরকারের জ্যেষ্ঠতম মন্ত্রী। অথচ তিনি কিভাবে এরকম প্রস্তাব দিলেন সরকারের নীতি নির্ধারক সঙ্গে আলোচনা না করে সেটি নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। এ ধরনের বিষয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ না করেই নেওয়া হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাস দিয়েছে। এতে সরকারের সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়ে উঠেছে।
সরকারের সমন্বয়হীনতা দ্বিতীয় ঘটনা লক্ষ্য করা যায় মেট্রোরেলের ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়ে। পয়লা জুলাই থেকে মেট্রোরেলের ভ্যাট রোহিত বা ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এনবিআর-এর কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এনবিআর এটি নাকচ করে দিয়েছে। ফলে আইনত এখন পয়লা জুলাই থেকে মেট্রোরেলকে তার যাত্রীভাড়ার ওপর ভ্যাট দিতে হবে। এটির অনিবার্য পরিণতি হল যে, মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ জনগণকেই ভোগান্তি পোহাতে হবে।
কিন্ত এনবিআর-এর এই চিঠির দুদিন পর ফুঁসে উঠলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বললেন, এই মুহূর্তে ভ্যাট আরোপের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছেন। হঠাৎ করে এনবিআর চেয়ারম্যান কেনইবা ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নিলেন, কার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলেন, আবার তার বিরোধিতা কেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী করছেন সেটি নিয়ে সরকারের ভিতরে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। এটিও হল সমন্বয়ের অভাব এবং সরকারের ভিতর স্ববিরোধিতার লক্ষণ।
যদি এনবিআর এরকম সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে সেটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই নেওয়া উচিত বা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। প্রকাশ্যে সরকারের স্ববিরোধীতা সরকারের ভাবমূর্তির জন্যই ক্ষতিকর।
সরকারের স্ববিরোধীতা এবং সমন্বয়হীনতা তৃতীয় নজির হল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে, ব্রাজিল থেকে কোরবানির ঈদে ৪৯৫ টাকা কেজি দরে তিনি মাংস আমদানি করবেন। ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করেছে। ভারতীয় গরু আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে যেন দেশীয় প্রাণিসম্পদ রক্ষা হয়। সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণিসম্পদে আমদানি নির্ভরতা বন্ধের ব্যাপারে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এক দফা নাকানিচুবানি খেয়েছিল। আমদানি করার আগে ঘোষণা ছিল এক রকম আর বাস্তবতা ছিল অন্য রকম। এখন যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানির কথা বলছে সেটি সরকারের অবস্থানের বিপরীত। এমনকি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। এই ধরনের সমন্বয়হীনতা সরকারের জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন অনেকে। মাত্র তিন মাসের সমন্বয়হীনতা যে বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো দেখানো হল বাস্তবে এর চেয়ে অনেক সমন্বয়হীনতা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সরকারের ভেতর সমন্বয় দরকার, দরকার এক ধরনের ঐক্য। কারণ একটি সরকারি সিদ্ধান্ত সকলের জন্যই শিরোধার্য। এটি মন্ত্রীরা এবং আমলারা যত দ্রুত অনুভব করবেন তত সরকারের জন্য সুবিধা হবে।বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন